ঢাকা: করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দুই বছর পর আবার চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। এ মঞ্চ রমনার বটমূলের মঞ্চ।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) রমনা উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, রমনার পশ্চিম পাশের লেকের ধারের বিখ্যাত বটমূল ঘিরে মঞ্চ তৈরির কাজ করছেন কর্মীরা। বাংলা নববর্ষ বরণে পৃথিবী সেরা আয়োজনের শেষ সময়ের জোর প্রস্তুতি চলছে রাজধানী ঢাকার রমনা বটমূলে। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) ভোরে সুরে সুরে নতুন বছরের প্রথম দিনটিকে সম্ভাষণ জানানো হবে এখানে। এতে উপস্থিত থাকবে হাজার হাজার মানুষ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এরইমধ্যে মঞ্চের পাটাতন বসানো হয়েছে। এখন চলছে সজ্জার কাজ। ছায়ানটের কর্মীরা দ্রুততার সঙ্গে সবকিছু প্রস্তুত করছেন। সঙ্গে আছে কাঠ, বিদ্যুৎ আর সাউন্ড মিস্ত্রি। এগুলোর দেখভালে আছেন ছায়ানটের সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্বরা। বৈদ্যুতিক বাতি বসানো হচ্ছে। সুবিশাল সাউন্ড বক্স, মাউথ স্পিকার, ডায়াস বসানো হচ্ছে।
বরাবর পয়লা বৈশাখের আগের দিনেই মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়ে যায়। মঞ্চে বসে শিল্পীরা চূড়ান্ত মহড়ায় অংশ নেন। এবার মঞ্চে এমন মহড়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী লাইসা আহমদ লিসা জানান, পরিস্থিতি বিবেচনা করে মঞ্চের মহড়া এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে মাসখানেক ধরে নিয়মিত মহড়া চলছে। গান, আবৃত্তি, পাঠ নিয়ে অনুষ্ঠান সূচি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আয়োজনে প্রায় ১৫০ জন শিল্পী অংশ নেন, এবার সংখ্যা কমিয়ে ৮৫ জন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এবারের অনুষ্ঠান শুরু হবে যন্ত্রবাদন দিয়ে। এরপর সম্মিলিত কণ্ঠে থাকবে রবীন্দ্র সংগীত ‘মন, জাগ মঙ্গললোকে’। অনুষ্ঠানে পঞ্চকবির গান ছাড়াও থাকবে লোকগান, ব্রতচারীদের একটি গান ‘বাংলা ভূমির প্রেমে আমার প্রাণ হইল পাগল’। লোকগানের মধ্যে থাকবে ‘নাও ছাইড়া দে মাঝি, পাল উড়াইয়া দে’। ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন প্রতিবছরই এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তবে এবার তিনি ৯০ বছরে পা দিয়েছেন, বয়সের কারণে কিছুটা দুর্বল। তাই সরাসরি অনুষ্ঠানে আসতে পারবেন কি না তা ঠিক হয়নি।
লাইসা আহমদ বলেন, হয়তো তার (সন্জীদা খাতুন) লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হবে বা অন্য কোনো ব্যবস্থা করা হবে। বরাবরের মতোই অনুষ্ঠান শেষ হবে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।
এদিকে রমনার বটমূলের নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত করতে সেখানে আছেন র্যাব সদস্যরা। তারা বিদ্যুতায়িত নিরাপত্তা-ফটক বসিয়েছেন। বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। আছে ডগ স্কোয়াডও।
এ বিষয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, রমনার বটমূলে সাইবার পেট্রোলিং করছি। র্যাব সাইবার মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। ২৪ ঘণ্টাব্যাপী তারা দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। তারা কোনো তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের জানাচ্ছেন। অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সব গোয়েন্দা সংস্থা তাদের নিজ নিজ সাইবার টিম কাজ করছে। যেকোনো জায়গা থেকে কোনো তথ্য পেলে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাবো বলে আশা করছি। আমরা ব্যবস্থা নিতেও প্রস্তুত রয়েছি।
গত অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে দেশের অন্যতম প্রধান সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানটের আয়োজনে বর্ষবরণের সংগীতানুষ্ঠান হয়ে আসছে। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর এখানে এ অনুষ্ঠানে ছেদ পড়ে। ছায়ানটের আয়োজনে প্রথম রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সময় সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। এরপর কেবল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈরী পরিবেশের কারণে অনুষ্ঠান হতে পারেনি। ২০০১ সালে এ গানের অনুষ্ঠানে জঙ্গিরা ভয়াবহ বোমা হামলা করলেও অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি। কিন্তু গত দুই বছর করোনা সংক্রমণের তীব্রতায় বটমূলে অনুষ্ঠান হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
এইচএমএস/আরআইএস