ঢাকা, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বড়াইগ্রামে খাল সেচে অবৈধভাবে মাছ শিকার

মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
বড়াইগ্রামে খাল সেচে অবৈধভাবে মাছ শিকার

নাটোর: নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বিএডিসির খনন করা খালে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে পানি সেচে মাছ শিকার করেছেন প্রভাবশালীরা।  

এতে খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় আবাদি জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা।

অপরদিকে, খালে মাছ ধরতে না দেওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরাও। এ অবস্থায় বিপুল অংকের টাকা খরচ করে খালটি খননের প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, উপজেলার সরিষাহাট সিঙ্গার বিলের মাঝখান দিয়ে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল রয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) উদ্যোগে ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খালটি পুনঃখনন করা হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সরিষাহাট গ্রামের খালের দুই প্রান্তে বাঁশ, জাল ও পলিথিন দিয়ে বাঁধ দিয়েছেন ঈমান আলী ও হুজুর আলী নামে স্থানীয় দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি। বিভিন্ন স্থানে মোট সাতটি শ্যালো মেশিন বসিয়ে খালের সব পানি সেচে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের লোকজন পানিবিহীন খালে নেমে মাছ ধরছেন। এর আগে সপ্তাহ খানেক ধরে তারা প্রথমে বাদাই ও বেড় জাল দিয়ে খালের রুইসহ বড় বড় মাছ ধরে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।

বর্তমানে খালের পানি সেচে মা মাছসহ সব মাছ মেরে নিচ্ছেন তারা। এতে একদিকে যেমন পাড়ের নরম মাটি ভেঙে খালে পড়ছে, অপরদিকে খালে পানি না থাকায় জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। এছাড়া প্রভাব খাটিয়ে কাউকে খালে মাছ ধরতে দিচ্ছে না চক্রটি। এতে বিশেষ করে মৎস্যজীবীরা তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন।

সরিষাহাট গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বিলে পাঁচ বিঘা জমিতে ফসল আবাদ করেছি। বর্তমানে শুকনো মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানি তেমন উঠছে না। তাই খালের পানিই ছিল জমিতে সেচ দেওয়ার একমাত্র উৎস। কিন্তু দুই-তিনজন অর্থলোভী ব্যক্তি গায়ের জোরে খালের সব পানি সেচে ফেলে দেওয়ায় আবাদ করা নিয়েই চরম বিপাকে পড়েছি।

অপর কৃষক আতাহার আলী বলেন, খালে মৎস্যজীবীরা তো দূরের কথা, গ্রামের সাধারণ লোকও বরশি দিয়ে মাছ ধরতে এলে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। যদি এভাবে মুষ্টিমেয় লোকজনই মাছ ধরে টাকা কামাবে, তাহলে খাল খনন করে সরকারি টাকা নষ্ট করার কি দরকার ছিল? আমরা এর সুষ্ঠু ফয়সালা চাই।

স্থানীয় মৎস্যজীবী সাবের হোসেন বলেন, প্রভাবশালীরা কেউ মৎস্যজীবী না, আবার খালটি ইজারাও নেননি। অথচ দেদারছে তারা মাছ শিকার করছেন। আর তাদের হুমকির কারণে আমরা খালে মাছ ধরতে না পেরে কষ্টে দিন যাপন করছি।

খাল সেচে মাছ শিকারের বিষয়ে অভিযুক্ত ঈমান আলী বলেন, ছয় মাস ধরে আমরা খাল পাহারা দিয়ে রেখেছি, ডালপালা ফেলে মাছের আশ্রয়স্থল করেছি, এখন তো আমরা মাছ ধরবই। তাছাড়া বর্তমানে খালে যে বড় দামি দামি মাছ আছে, সেগুলো কি অন্যদের ধরতে দেওয়া যায়?

তার অপর সহযোগী হুজুর আলী বলেন, আমরা স্থানীয় একটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে খালের দায়িত্ব নিয়েছি। কাজেই অন্য কাউকে এ খালে মাছ শিকার করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে তিনি সমিতির নাম বলতে পারেননি।

বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়াম খাতুন বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি শুনে তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে সেচ কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যদি আবার তারা একই কাজ করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।