ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অনলাইনে অর্ডার করে গ্রাহক পেতেন ছেঁড়া কাপড়!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২২
অনলাইনে অর্ডার করে গ্রাহক পেতেন ছেঁড়া কাপড়!

ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ২১টি ফেসবুক পেজ খুলে বিভিন্ন পণ্যের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল চক্রটি। এসব বিজ্ঞাপনে বিশাল মূল্য ছাড়ের ঘোষণা দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা হতো।

ক্রেতারা পণ্যের অর্ডার দিলে কুরিয়ারে ডেলিভারিও দিতো চক্রটি। ডেলিভারি পাওয়ার পরই ঘটতো বিপত্তি।

ক্রেতা প্যাকেট খুলে দেখতেন ‘অর্ডার করা পণ্য নয়, প্যাকেটে থাকতো ব্যবহার অযোগ্য ছেঁড়া কাপড়। চক্রটি এভাবেই প্রতারণা করে আসছিল দীর্ঘদিন।

অর্ডার করা পণ্য না পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে চক্রটির সঙ্গে যোগাযোগ করতেন ক্রেতারা। তখন ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে দিতো চক্রটি। এছাড়া ক্রেতাদের মোবাইল নম্বর ও ফেসবুক আইডি ব্লক করে দিতো চক্রটি।

সম্প্রতি ডিএমপির পল্টন থানায় এক ভুক্তভোগী এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এ জিডির পর থেকে এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগ। গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে রোববার (১৭ এপ্রিল) হাজারীবাগ থানাধীন শঙ্কর এলাকার একটি ভবনের ফ্ল্যাট থেকে এ চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।

আটক পাঁচজন হলেন- মো. বাপ্পি হাসান, মো. আরিফুল ওরফে হারিসুল, মো. সোহাগ হোসেন, মো. বিপ্লব শেখ ও নুর মোহাম্মদ। এদের মধ্যে বাপ্পি এ চক্রের মূলহোতা।

ডিবি লালবাগ সূত্রে জানা যায়, চক্রটির আটক সব আসামির গ্রামের বাড়ি নড়াইলে। চক্রটির আরও একটি গ্রুপ নড়াইলে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

আরও জানা যায়, চক্রটি প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি পার্সেল পাঠাতেন। এভাবে চক্রটি মাসে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা আয় করতো। গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে চক্রটি এই প্রতারণা করে আসছিল। চক্রটির সঙ্গে এসএ পরিবহনের লোকজনও জড়িত রয়েছে।

সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ।

তিনি বলেন, রোববার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় একটি ভবনের ফ্ল্যাট থেকে ওই পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। চক্রটি গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে তাদের এ প্রতারণা ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। চক্রটি ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ খুলে আকর্ষণীয় পণ্য বিশেষ করে নারীদের পোশাকের চকটকদার বিজ্ঞাপন দিতো। স্বাভাবিক মূল্যের অনেক কম মূল্য লিখে তারা এসব পোশাকের বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল। ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়ে তাদের কাছে পণ্যের অর্ডার দিতেন। তারা কুরিয়ারের মাধ্যমে ডেলিভারি দিতো। কিন্তু ডেলিভারিতে কখনো গ্রাহকের অর্ডার করা পণ্য দিতো না চক্রটি। ডেলিভারিতে তারা ব্যবহারের অযোগ্য ও ছেঁড়া কাপড় দিতো।


তিনি আরও বলেন, প্রতারিত হওয়ার পর যখন ক্রেতারা চক্রটির কাছে জানতে চাইতো অডার্র করা পণ্য না দিয়ে কেন বাজে পণ্য দেওয়া হয়েছে। ক্রেতার এমন অভিযোগের পর চক্রটির সদস্যরা খারাপ আচরণ শুরু করে ক্রেতাদের মোবাইল নাম্বার ও ফেসবুক আইডি ব্লক করে দিতো। যাতে প্রতারিত হওয়া কোনো ক্রেতা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারেন। এরা এভাবে প্রায় প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতো।

আটকরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, গত ৫ থেকে ৬ বছর ধরে তারা এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। এরা কুরিয়ার সার্ভিস এসএ পরিবহনকে ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় প্রতারণা করেছে তারা। আমরা এসএ পরিবহনের কয়েকজনের নাম পেয়েছি যারা এই প্রতারণার বিষয়টি জানেন। আমরা তাদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, আমরা তাদের ২১টি ফেসবুক পেজের সন্ধান পেয়েছি। এর মাধ্যমে তারা প্রতারণা করে আসছিল। আমরা ১৭৭টি খারাপ শাড়ি, থ্রি-পিস জব্দ করেছি। এসব কাপড় সাধারণত বাসা বাড়িতে ব্যবহারের পর অনেকে বিক্রি করে দেয় বা মানুষকে দিয়ে দেয়। চক্রটি এসব কাপড় কিনে মানুষকে ডেলিভারি দিতো ভালো পণ্যের নামে।

এক প্রশ্নের জাবাবে ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ বলেন, প্রতি মাসে তারা এভাবে প্রতারণা করে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা আয় করতো। গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে তারা এই প্রতারণা করে আসছিল।

এসএ পরিবহনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিবি লালবাগ বিভাগের ডিসি রাজীব আল মাসুদ বলেন, এসএ পরিবহনের সঙ্গে চক্রটির একটি চুক্তি রয়েছে। সেই অনুযায়ী চক্রটির পার্সেল তারা পাঠাতো। এছাড়া এসএ পরিবহনের লোকজন জানতো চক্রটি এসব খারাপ মালামাল ক্রেতাদের পাঠায়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি পার্সেল ৫০ টাকা করে নিতো তারা।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিসি রাজীব আল মাসুদ বলেন, ক্রেতারা অল্প টাকার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এজন্য ক্রেতারা কোনো ঝামেলা করতে চায় না, এমনকি অভিযোগ করতেও আসে না। আমরাও অনেক ভুক্তভোগীকে মামলার করার জন্য বলেছি, কিন্তু তারা রাজি হননি। এ কারণে প্রতারকরা আরও উৎসাহী হয় যে ভুক্তভোগীরা প্রতারিত হলেও মামলা করতে রাজি হয় না।

তিনি বলেন, বিশেষ করে ঈদের সময় রাস্তাঘাটে যানজট রয়েছে। এ কারণে অনেক ক্রেতাই অনলাইনে ঝুঁকে পড়ছেন। ঈদের সময় অনেকেই অনলাইন কেনাকাটায় অভস্ত হয়ে পড়েন। তাই চক্রটি এ সুযোগটা গ্রহণ করে। ঈদকে সামনে রেখে আমাদের একার পক্ষে এ চক্রগুলোকে মনিটরিং করা সম্ভব না। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে মনিটরিং করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২২
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।