ঢাকা, রবিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জুন ২০২৪, ২২ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

টেলিমেডিসিনের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন স্বামী-স্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২২
টেলিমেডিসিনের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন স্বামী-স্ত্রী ...

ঢাকা: ফেসবুকে সুন্দরী নারীদের ছবি দিয়ে ভুয়া আইডি খুলে টেলিমেডিসিন চিকিৎসা দেওয়ার প্রচারণা চালানো হতো। করোনার সময়কে টার্গেট করে গত দুই বছরে হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে অপচিকিৎসার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী মিলে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।

এমন অভিযোগে বুধবার (২০ এপ্রিল) রাজশাহীর শাহ মখদুম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. রাশেদ হোসেন প্রান্ত (২৭) ও তার স্ত্রী মোসা. মৌসুমী খাতুনকে (২৩) গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন, ৪টি মোবাইল সিম, ১৩টি ফেসবুক আইডি ও ৩টি হোয়টাসঅ্যাপ আইডি জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, তারা জনপ্রিয় চিকিৎসকদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া পেজ খুলে চিকিৎসা সেবার বিজ্ঞাপন দিত।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, আবু সাঈদ নামে একজন জার্মান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান EW VILLA MEDICA এর চিফ লিগ্যাল অফিসার। যে প্রতিষ্ঠানটি এসথেটিক এবং রিজেনারেটিভ বিষয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়। তিনি সম্প্রতি দেখতে পান ফেসবুক আইডিতে EW VILLA MEDICA প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের ডা. তাসনিম খানের নাম পদবী ব্যবহার করে অনলাইনে চিকিৎসার নামে ভুয়া প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে।

এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ায় আবু সাঈদ শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। মামলার সূত্র ধরে এই চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, চর্ম ও যৌন সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত প্রকাশ্যে চিকিৎসকদের কাছে পরামর্শ নিতে সংকোচবোধ করেন। এ ধরনের রোগীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারক চক্রের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করে। গ্রেফতাররা দেশের খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় চিকিৎসকদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া পেজ খুলে বিজ্ঞাপন দিত। কখনো চিকিৎসক কখনো চিকিৎসকের সহকারী পরিচয় দিয়ে কণ্ঠ পরিবর্তন করে রোগীদের সঙ্গে কথা বলতেন।

কথা বলার পর রোগীদের কাছ থেকে টেলিমেডিসিন সেবার বিনিময়ে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ/নগদ/রকেটে টাকা হাতিয়ে নিতেন। সরাসরি রোগী দেখালে দুই হাজার টাকা ও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দেখালে এক হাজার টাকা করে নিতেন তারা। এভাবে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী দেখতেন স্বামী-স্ত্রীর এই চক্র।

তারা মোবাইল ফোন, ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রেসক্রিপশন দেওয়া ও ওষুধ বিক্রি করেন। তারা ফেসবুকে জনপ্রিয় ডাক্তার ডা. তাসনিম খান, ডা. হুমাইরা হিমি, ডা. মার্জিয়া সুষমা, ডা. আরশিয়া আহি, ডা. সানজিদা ইসলাম, ডা. নাফিসা তাসনীম ও ডা. আলভি রহমানদের নাম পদবী ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে সেবার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

এছাড়া, কৌশলে বিভিন্ন নারীদের ছবি সংগ্রহ করে এডিটিং করে আপত্তিকর ছবি তৈরির পর ম্যাসেঞ্জার ও একাধিক হোয়াটসআপ নম্বরে পাঠিয়ে কৌশলে রোগীসহ বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, টেলিমেডিসিন সেবা নেওয়ার আগে কোনো সন্দেহ মনে হলে আমাদেরকে জানাতে পারেন। অনলাইনে সেবা নেওয়ার চাইতে সরাসরি গিয়ে অথবা পরিচিত চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২২
পিএম/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।