ঢাকা, শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চৌফলদন্ডীতে সাংগ্রেপোয়ে কনসার্টে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২২
চৌফলদন্ডীতে সাংগ্রেপোয়ে কনসার্টে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

কক্সবাজার: অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এক সময় কক্সবাজার সদরের রাখাইন অধ্যুষিত চৌফলদন্ডী একটি দুর্গম ইউনিয়ন হলেও এখন সেই অবস্থা আর নেই। মাত্র ২০ থেকে ২০ মিনিটেই পৌঁছানো যায় সেখানে।

উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সরকারের নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে পাল্টে যাচ্ছে চৌফলদন্ডীর চেহারা।

আর তাই তো, রাখাইনদের সবচে বড় সামাজিক উৎসব সাংগ্রেপোয়ে উপলক্ষে জেলার সবচেয়ে বড় পরিসরে আয়োজন হয়েছে মাহা সাংগ্রেপোয়ে বা জলকেলি ও মিউজিক কনসার্ট।

চৌফলদন্ডীর দক্ষিণ রাখাইন পাড়ায় স্থানীয় যুব সমাজ এ সাংগ্রে কনসার্টের আয়োজন করে। কনসার্ট শেষ হয় বুধবার (২০ এপ্রিল) রাতে।  

বুধবার সন্ধ্যায় উৎসবস্থলে দেখা যায় শুধুই সুরের মূর্ছনা।  মঞ্চের মনমাতানো গানের সুরে সুরে নাচছে হাজারো রাখাইন নারী ও পুরুষ। সে যেন এক অন্যরকম উচ্ছ্বাস। যেখানে আনন্দ বার বার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল।

শুধু শিশু কিশোর, তরুণ-তরুণীরা নন, আবাল বৃদ্ধবনিতা সামিল হয়েছেন এ আনন্দে।  অনেকে একই রকম পোশাক পরে দলে দলে উৎসবস্থলে আসছেন। আর যারা আনন্দে সামিল হচ্ছেন তারা গানের সুখে  সুখে নাচছেন, গাইছেন। সন্ধ্যে গড়িয়ে প্রায় রাত পর্যন্ত চলে হাজারো প্রাণের বাঁধভাঙ্গা এ উচ্ছ্বাস।

এর আগে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একে অন্যর শরীরে পানি ছিঠিয়ে জলকেলিতে মেতে ওঠেন বলে জানান আয়োজকরা।

আয়োজকদের মধ্যে মংসেফ্রু রাখাইন, ধুগ্য রাখাইন ও আক্য এ রাখাইন বাংলানিউজকে জানান, উত্তরপাড়া, দক্ষিণ পাড়াও এবং মাঝের পাড়া মূলত এই তিনটি গ্রামেই রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাস। প্রতিবছর এখানে ছোট পরিসরে সাংগ্রেপোয়ে বা জলবেলি উৎসবের আয়োজন হতো। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গেল দুই বছর উৎসব না হওয়ায় এ বছর জাঁকালোভাবে  মিউজিক কনসার্টসহ  দক্ষিণ রাখাইন পাড়ায় সাংগ্রেপোয়ে উৎসবের আয়োজন করা হয়।

তারা আরও জানান, এবারের আয়োজনের জলকেলির পাশাপাশি অন্যতম আকর্ষণ ছিল মিউজিক কনসার্ট। কনসার্টে স্থানীয় শিল্পীর পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে আসা শিল্পীও গান করেছে। যা  হাজারো নারী পুরুষ দারুণভাবে উপভোগ করেছেন।

জেলায় সবচে বড় আয়োজন এবার চৌফলদন্ডীতে হয়েছে এ কথা জানিয়ে মংছেন হেন রাখাইন ও খোয়েন লাইন রাখাইন জানান, যুগ যুগ ধরে রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসব পালন করছে। কিন্তু এবারের আয়োজনে আনন্দ হয়েছে খুব বেশি।

তিনপাড়ার পাশাপাশি কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়া ও মহেশখালী থেকেও অনেকে এ উৎসব ও কনসার্টে যোগ দিয়েছে আনন্দে সামিল হয়েছেন।  

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য উছাচিং রাখাইন বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের উচিত  তৃণমূলের এ ধরনের আয়োজনে সহযোগিতা করে গ্রামের মানুষের প্রাণের এ উৎসবকে বাঁচিয়ে রাখা।  কিন্তু কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবার শহরের উৎসবে পৃষ্ঠপোষকতা করলেও এ সহযোগিতা তৃনমূল পর্যন্ত পৌঁছায়নি। শহরের চেয়ে গ্রামের অনুষ্ঠানগুলোর প্রচার প্রচারণা কম, মিডিয়ার ভিড়ও কম সে কারণেই হয়তো তাদের নজর এদিকে পড়ছে না বলে জানান উছাচিং।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৬ এপ্রিল) শেষ হয়েছে রাখাইন বর্ষ ১৩৮৩ সন। রোববার থেকে শুরু হয়েছে নতুন ১৩৮৪ রাখাইন বর্ষ। পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে পাপ-পঙ্কিলতা ও অশুভ সবকিছুকে দূর করে নতুন বছরকে বরণ করতে প্রতি বছর রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসবে মেতে ওঠে। রাখাইনদের ভাষায় বর্ষবরণের এ উৎসবকে বলা হয় ‘সাংগ্রে পোয়ে’।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২২
এসবি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।