ঢাকা, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মধ্যরাত থেকে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ শিকারে নেই মানা

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৮ ঘণ্টা, মে ১, ২০২২
মধ্যরাত থেকে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ শিকারে নেই মানা

চাঁদপুর: জাটকা রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে ৩০ এপ্রিল মধ্য রাতে। রাত ১২টার পর থেকে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ শিকার করতে আরা বাধা নেই জেলেদের।

 

এর আগে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় ১ মার্চ থেকে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। দুই মাসে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করায় দেড় শতাধিক জেলেকে কারাদণ্ড এবং ১ কোটি মিটার নিষিদ্ধ কারেন্টজাল জব্দ করা হয়েছে। শনিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিন শহরের পুরাণ বাজার রনাগোয়াল ও সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর এবং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের মেঘনা নদী উপকূলীয় জেলেপল্লিতে দেখা গেছে জেলেদের ব্যস্ততা। ইলিশ শিকারে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। শেষ সময়ে জাল, নৌকা ও নৌকার ইঞ্জিন মেরামত করছেন। ইলিশ শিকারে কেউ যাবেন সাগরে আবার কেউ পদ্মা-মেঘনায় ছোট নৌকায় ইলিশসহ অন্যান্য মাছ শিকার করবেন।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জাটকা রক্ষার দুই মাসে জলে, স্থলে ও মৎস্য আড়তে ৬শ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ১৫০জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জব্দ করা হয়েছে মাছ ধরার নৌকা ও ১২ মেট্টিক টন জাটকা। নিষিদ্ধ কারেন্টজাল জব্দ করা হয়েছে ১ কোটি মিটার। সঙ্গে অন্যান্য জাল ছিল। জব্দকৃত জাল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এসব ঘটনায় দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে। শহরের পুরাণ বাজার রনাগেয়াল এলাকার জেলে শরীফ ও জাফর গাজী বাংলানিউজকে বলেন, দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও ইলিশ পাওয়াটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। যদি আল্লাহ ভাগ্যে রাখে তাহলে ইলিশ পাব, না হয় খালি হাতে ফিরে আসতে হবে। তবে আমাদের মাছ শিকার করার সব প্রস্তুতি আছে।  

সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের রামদাসদী নদী সংযুক্ত খাল পাড়ে ইলিশ ধরার ব্যাপক প্রস্তুতি জেলেদের। ওই এলাকার জেলে শাহাজাহান ভুঁইয়া, শাহ আলম বেপারী, মো. ফারুক গাজী ও মাসুদ গাজী বাংলানিউজকে বলেন, দুই মাস অনেকটা অবসর সময় কাটিয়েছি। এখন জাল ও নৌকা প্রস্তুত। প্রতি নৌকায় কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ জন নিয়ে নদীতে নামা হবে। ভাগ্য থাকরে ইলিশ পাব আশা করছি। না পেলেও নদীতে নাম হয়, কারণ এটাই আমাদের পেশা।

একই এলাকার জেলে নুরুল ইসলাম বলেন, দুই মাস মাছ ধরার বন্ধ থাকায় অন্য কাজ করেছি। এখন ঠেলাগাড়ী করে বালু বহনের কাজ করছি। কারণ সরকার যে ৪০ কেজি করে চাল দেয়, এতে সংসার চলে না। আমাদের কষ্টের বিষয়গুলো সরকারের উপলব্দি করা দরকার। কিভাবে সন্তানদের নিয়ে আমাদের দিন কাটে। চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, অভয়াশ্রমের দুই মাস মৎস্য বিভাগ, নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও স্থল পুলিশের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অধিকাংশ অভিযান যৌথভাবে ছিল। এর কারণে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর জেলেরা একত্রিত হয়ে নদীতে নামতে পারেনি। বিশেষ করে নদী সংযুক্ত খালগুলো জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি আমাদের অভিযান সফল হয়েছে এবং টাস্কফোর্সের প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে।

তিনি বলেন, অভিযানের দুই মাস জেলার নিবন্ধিত ৪৪ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল দেওয়া হয়েছে। বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির জন্য উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। জেলেদের জীবন-মান উন্নয়নে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৮ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।