সিরাজগঞ্জ: ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেটে এসেছেন মাসিক ৭ হাজার টাকা বেতনের শ্রমিক ছানোয়ার হোসেন। সঙ্গে তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে।
ছানোয়ার হোসেন এবার পরিবার নিয়ে ফুটপাতের ওপর দিয়েই হাঁটতে থাকেন। এরপরের দুই মেয়ে কুলসুম আর বৃষ্টির জন্য পোশাক কিনতে হবে। ছানোয়ার হোসেন ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরের উপকণ্ঠে বনবাড়িয়া গ্রামে তাদের বাড়ি। সেখানেই একটি পোল্টি খামারে মুটে মজুরের কাজ করেন ছানোয়ার। ১২ ঘণ্টা হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয় তাকে। দেড়-দুই মণের বস্তা বইতে হয়। মাস শেষে বেতন ৭ হাজার টাকা। ওই টাকাতেই চলে দুই মেয়ে ও এক ছেলের পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ।
রোববার (১ মে) দুপুরে এমন সিরাজগঞ্জ শহরের এস.এস রোডের ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর এগিয়ে গেলে ছানোয়ারদের মতো অসংখ্য নিম্ন আয়ের মানুষকে পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে দেখা যায়। অনেকেই আবার একাই এসেছেন পরিবারের সকলের জন্য কেনাকাটা করতে।
এমনই একজন কৃষি দিনমজুর আলতাফ হোসেন। কয়েক বছরের পুরনো জামা গায়ে কাঁচাপাকা খোচা খোচা দাঁড়ি নিয়েই আসা এই দরিদ্র মজুরকে গুরুত্বই দিতে চাচ্ছে না কোন দোকানদার।
আলতাফ ফুটপাতের একটি দোকানে দাঁড়িয়ে ছেলের জন্য টি-শার্ট দেখছিলেন। এক থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে তিনি টি-শার্ট কিনতে চান। এর চেয়ে বেশি বাজেট নেই বলে জানালেন তিনি।
আলতাফ আরও বলেন, ‘৬ জনের সংসার প্রতিদিন কামলা দিয়্যা সংসার চালাই। ট্যাহ্যা যোগানোর কুনো উপায় নাই। রোজার শুরু থাইক্যাই মজুরির ট্যাহার কিছু কিছু বাচাইছি। আর তাই দিয়্যা মার্কেট কইরতে আইচি। ’
ফুটপাতে কেনাকাটা করতে আসা আব্দুর রহিম একজন তাঁত শ্রমিক। তিনি তাঁর শিশু সন্তানের জন্য জামা কিনতে এসেছেন। বড় বড় দোকানে যাবার সাহস তার হয় নাই। ফুটপাত থেকেই মেয়ে ও স্ত্রীর জন্য কাপড়-চোপড় কিনবেন বলে জানালেন।
বেল্লাল, এজার আলী, মাহমুদা, আমোদ আলী, নাছিমাসহ অসংখ্য মানুষকেই ফুটপাতে কেনাকাটা করতে দেখা যায়। এদের কেউ মুটে মজুর, কেউবা তাঁতশ্রমিক, আবার কেউ কৃষি দিনমজুর কেউ বাসাবাড়িতে কাজ করেন।
শ্রমজীবী নিম্নআয়ের এসব মানুষেরা বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও তাদের দাম বাড়েনি। ঈদে তারা কখনো বড় বড় মার্কেট থেকে কেনাকাটা করার স্বপ্নও দেখেন না। ফুটপাতে কম দামের কাপড় কিনতে পেরেই তারা খুশি। অনেকেই আবার হকার্স মার্কেটে পুরাতন কাপড় কিনেও ঈদ উদযাপন করেন।
এস.এস রোডের ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতা আব্দুল লতিফ, জাহিদুল ইসলাম, আলম হোসেন ও আনেয়ারা বেগম বাংলানিউজকে জানান, তাদের খরিদ্দার খুবই নিম্ন আয়ের। ১৫০ টাকার কাপড় ৫০ টাকা বলেন। হতদরিদ্র মানুষগুলোই আমাদের কাছে আসে। এবারের ঈদে বেচাকেনা খুব একটা ভাল নয় বলেও জানালেন অনেক ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৯ ঘণ্টা, মে ২, ২০২২
এনটি