ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দেশি লিচুর দাম কম, হতাশ বাগান মালিক-চাষিরা

টিপু সুলতান, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২২
দেশি লিচুর দাম কম, হতাশ বাগান মালিক-চাষিরা

পাবনা (ঈশ্বরদী): জৈষ্ঠের শুরুতে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেশি (মোজাফফর) জাতের লিচু নামানো শুরু হয়েছে। এ জন্য অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করছেন লিচু চাষি ও বাগান মালিকরা।

কিন্তু দাম কম হওয়ায় হতাশ তাঁরা।

এবারে কৃষি কর্মকর্তাদের বাড়তি নজর থাকায় লিচুর ছত্রাকজাতীয় পোকামাকড় এবং রোগবালাই কম হওয়াতে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ বৈরী আবহাওয়া, চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও দেরিতে বৃষ্টির কারণে দেশি জাতের লিচু ফেঁটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ কারণে লিচু চাষি, বাগান মালিকরা অনেকটা একই সময়ে লিচু নামিয়ে বাজারজাত শুরু করেছেন। এতে দাম তেমন পাবেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

রোববার (১৫ মে) সকালে ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, গাছ থেকে সারি সারি দেশি জাতের লিচু সাজিয়ে রেখেছেন বাগান মালিকরা। কেউ গাছে লিচু ভাঙছেন, কেউ বা সাজিয়ে রাখছেন, কেউ আবার ঝুঁড়িতে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর কাজে ব্যস্ত।

বাগান মালিকরা জানান, জৈষ্ঠের শুরুতেই ঝড়-বৃষ্টি হলে লিচু চাষি কৃষকের অনেকটা ক্ষতি হবে। ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে লিচুচাষি ও বাগান মালিকরা গাছ থেকে দেশি জাতের লিচু নামানো শুরু করেছেন।

ঈশ্বরদীতে মোজাফফর (দেশি), বোম্বাই ও চায়না-৩ এ তিন প্রজাতির লিচু চাষ হয়। এর মধ্যে বোম্বাই ও চায়না-৩ লিচু গাঢ় সবুজ থেকে লালচে হওয়া শুরু হয়েছে। এগুলো পরিপক্ব হতে আরও সপ্তাহখানেকেরও বেশি সময় লাগবে। কিন্তু এ রকম বৈরী আবহাওয়া থাকলে লিচুর উৎপাদন ভালো হবে না বলেও জানান তারা।

এদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লিচু কিনতে আসা ক্রেতাদের সমাগম দেখা যায় বাগানে। যারা পুরো বাগান কিনে রেখেছেন, তারা বাগান থেকে নিয়ে লিচু পাঠিয়ে দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জায়গাতে।

লিচু নামানোকে কেন্দ্র করে গ্রামের কিছু সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে বাগানগুলোতে। গ্রামের বয়স্ক নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও অংশ নিয়েছে এ কাজে।

ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বয়সী মহসিন আলী প্রমানিক লিচু আঁটি বাধার কাজ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বাংলাননিউজকে জানান, অবসর সময়ে বসে না থেকে এখানে কাজ করলে ৫০০ টাকা আয় হয়।

মহসিন আলী ছাড়াও অনেক নারী-পুরুষ ঘর-সংসার, গৃস্থালির কাজ শেষে লিচু বাছাই করার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করলেই মেলে ৫০০ টাকা।

পাকশী ইউনিয়নের লিচু বাগান মালিক পলাশ আহম্মেদ জানান, এ বছর লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। জৈষ্ঠের শুরুতে লিচুর দাম এত কম হবে তা কল্পনা করিনি। হঠাৎ বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচু পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া এবার বৈশাখে তেমন ঝড়-বৃষ্টি হয়নি। তাই ক্ষতি হওয়ার আগেই কৃষকরা প্রায় একই সময়ে লিচু বাজারজাত শুরু করেছেন। এ জন্য লিচুর দাম কমে গেছে।

সাঁহাপুর ইউনিয়নের কৃষক আসিফুজ্জামান বাংলাননিউজকে জানান, লিচু নামানোর কাজে কর্মীদের হাজিরা দিতে হয় দিনে ৫০০ টাকা। এছাড়া গাছের পরিচর্যা, সার, কীটনাশক ব্যবহার খরচ হিসাব করলে লিচু চাষির কিছুই থাকে না।

সলিমপুর ইউনিয়নের সোহেল মালিথা আক্ষেপ করে বাংলাননিউজকে জানান, লিচুবাগান চাষি ও কৃষকের লাভ কোথায়? যারা লিচু কম দামে কিনে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছেন, শুধু তারাই লাভবান হচ্ছেন। আর কৃষকের হচ্ছে লস।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বাংলাননিউজকে জানান, ঈশ্বরদী উপজেলাতে এ বছর ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে চাষিরা লিচু আবাদ করেছেন। মুকুল আসার সময় থেকে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। আর শুরু থেকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সচেতন করায় গাছের রোগবালাইও কম হয়েছে। ছত্রাকজনক পোকামাকড়ের উপদ্রব ছিল অনেকটা কম।

চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত গরমের কারণে উপজেলায় যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা ব্যাহত হতে পারে। ২৫০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করলে আর লিচুর দাম যদি বেশি না হয় তবে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৭ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২২
এফআর/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।