ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঢামেকের ওয়ার্ড থেকে বের করে দেওয়া হলো হাতপচা রোগীকে

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২২
ঢামেকের ওয়ার্ড থেকে বের করে দেওয়া হলো হাতপচা রোগীকে

ঢাকা: বাম হাত পচে গেছে, সেখান থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছেন আজম শিকদার (২২) নামে এক যুবক।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ব্লকের চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি করলেও হাত থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হওয়ার কারণে ওয়ার্ডে ঠাঁই হলো না তার।  

সোমবার (১৬ মে) দুপুরের দিকে ঢামেক হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ১০৩ ও ১০১ নম্বর দুই ওয়ার্ডে প্রবেশের মাঝে দ্বিতীয় তলায় উঠার সিঁড়ির নিচে প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরাতে দেখা যায় আজম শিকদার নামে ওই যুবককে। তখন তার ক্ষত হাত থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল।

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চুনারচর সিকদার বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আজম শিকদার। তার বাবা সাত্তার শিকদার জানান, তার ছেলে আজম শিকদারের একটু মানসিক সমস্যা আছে। দেশের বাড়িতে থাকে না। সে ঢাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাসায় ঘোরাফেরা করে।  

তিনি বলেন, গত ১২ মে রাজধানীর রায়েরবাগে কোনো এক দ্বিতীয় তলা বাড়ি থেকে নিচে পড়ে যায় আজম। এতে তার বাম হাত ভেঙে যায়। ওই অবস্থায় আজম নিজেই ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেয়। তখন তারা তার হাতে প্লাস্টার করে দেয়। এ অবস্থায় আজম সাইনবোর্ড এলাকায় আমাদের এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করে। পরে আমরা খবর পেয়ে তাকে দেশের বাড়ি নিয়ে যাই। দেশে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর তার হাতের প্লাস্টারের জায়গা আস্তে আস্তে কাল হতে থাকে এবং প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। এ অবস্থায় তাকে আমরা ১৫ মে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেদিন সারাদিন চেষ্টা করেও সরকারি ছুটি থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারেনি। পরে রাতে কামরাঙ্গীরচরে এক আত্মীয়ের বাসায় তাকে রাখা হয়। ১৬ মে সকালে আবার তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

সাত্তার শিকদার বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকি। এক পর্যায়ে চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি নিলেও থাকতে দেয়নি ওয়ার্ডের লোকজন। কারণ আমার ছেলের হাত থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। ওয়ার্ডে থাকা হাসপাতালের কয়েকজন বলেছিল, এ রোগীকে এখানে রাখা যাবে না, প্রচণ্ড দুর্গন্ধের কারণে অন্যান্য রোগীরা অসুস্থ হয়ে যাবে। এ কারণে হয়তো তারা বের করে দিয়েছে। অবশেষে নিরুপায় হয়ে ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে বাইরে হাসপাতালের ভেতরে দ্বিতীয় তলায় উঠার সিঁড়ির নিচে ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। সেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমার ছেলে সিঁড়ির নিচে বসে ছটফট করতে থাকে।  

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে তো এ হাসপাতাল থেকেই হাতে প্লাস্টার করিয়েছে। তাহলে কেন হাতের এ অবস্থা হলো বুঝতে পারছি না।  

সরেজমিনে দেখা যায়, সোমবার সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ক্ষত জায়গা গামছা দিয়ে ঢেকে আজম শিকদারকে ওই সিঁড়ির নিচ বসে থাকতে। পরে রাতে তার বাবার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তার ছেলেকে রাত ১টার দিকে অস্ত্রোপচারের জন্য ওটিতে ঢুকানো হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছে তার ছেলের হাত সম্ভবত কেটে ফেলা হতে পারে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন বেসরকারি আয়া বাংলানিউজকে বলেন, চিকিৎসক ১০১ ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ওই যুবককে ভর্তি নিলেও ওয়ার্ডে থাকতে দেয়নি হাসপাতালের লোকজন। কারণ তার হাত থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। ওয়ার্ডে ভর্তি করতে হলে ওয়ার্ডের খাতায় রোগীর নাম লিপিবদ্ধ করতে হয়। সেটা তারা করেনি। এখন সিঁড়ির নিচে হুইল চেয়ারে অবস্থান নিয়েছে রোগী।  

ওই ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স সপ্নার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রোগীকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি সত্য না। দুর্ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যেকোনো রোগী ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি হতে পারে চিকিৎসকের অ্যাডভাইস মোতাবেক। ঘটনার ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় পার হলে রোগী যাবে নির্দিষ্ট বিভাগের ওয়ার্ডে। বের করে দেওয়ার বিষয়টি একেবারেই ভিত্তিহীন।

ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন (আরএস) আল্লাউদ্দিন জানান, রোগীর দ্রুত অস্ত্রোপচার দরকার। তাকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। কোন ওয়ার্ডে ভর্তি নিল সেটা বিষয় না। বিষয় হচ্ছে তার দ্রুত চিকিৎসা দরকার। রাতের মধ্যেই তার অস্ত্রোপচার করা হবে। আজমের হাতের অবস্থা খুবই খারাপ। তার ডান হাত পুরোপুরি পচনশীল মানে তিনি গ্যাংগ্রিন রোগে আক্রান্ত। জীবন রক্ষার্থে অস্ত্রোপচারের সময় অর্থোপেডিক চিকিৎসকরা তার হাতটা কেটে ফেলে দিতে পারেন।

তিনি আরও জানান, ওই রোগী প্রথমে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে এ রকম কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি। তাছাড়া ঢামেক থেকে চিকিৎসা নিলে রোগীর হাতের অবস্থা এমন হওয়ার কথা না। এমনও দেখা গেছে গ্রামের রোগীরা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে আবার গ্রামের স্থানীয় হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসায় রোগীর ক্ষতি হবার পরে আবারও রোগীকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে কিন্তু স্থানীয় ভুল চিকিৎসার বিষয়টি রোগী ও স্বজনরা গোপন করে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২২
এজেডএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।