ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া

সবকিছুর দাম বাড়তির দিকে, বাজেট নিয়ে আর কি বলার আছে?

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৩ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২২
সবকিছুর দাম বাড়তির দিকে, বাজেট নিয়ে আর কি বলার আছে?

বিগত কয়েক বছরের মতো ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে পরিধি বেড়েছে অনেক। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

প্রস্তাবিত বাজেটকে আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি উৎসাহিত করা গরিব-বান্ধব বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। কিন্তু, বাজেটে দ্রব্যমূল্যের মূল্য বৃদ্ধি বিরক্ত করেছে জনগণকে।

রাজধানীর বাড্ডা, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের বাজেট সম্পর্কিত ক্ষোভ সম্পর্কে জানা গেছে।

বাজেটে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমবে কিনা জানতে চেয়েছেন তারা।

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব উপস্থাপন হওয়ার পর বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়বে বলে জানা গেছে। যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- আমদানি করা পনির ও দই, সিগারেট, আমদানি করা তৈরি পোশাক, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, অপরিশোধিত আলকাতরা, বিদেশি পাখি, প্রিন্টিং প্লেট, ক্যাশ রেজিস্ট্রার, ফ্যান, মোটর, লাইটার, দুই স্ট্রোক ও ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের সিএনজি, কম্পিউটার প্রিন্টার ও টোনার, আমদানি করা মোবাইল চার্জার, কার্বন ডাই-অক্সাইড, আমদানি করা পেপার কাপ এবং প্লেটের।

এ ছাড়া বিলাসবহুল গাড়ি, রিকন্ডিশন ও হাইব্রিড গাড়িতে ২০০০ সিসি থেকে ৪০০০ সিসিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসবেরও দাম বাড়বে।

কমছে জুয়েলারি শিল্পের প্রসারে স্বর্ণ আমদানিতে অগ্রিম কর, শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের আমদানি শুল্ক হুইল চেয়ার, পানির ফিল্টার, বিমানের জন্য ব্যবহৃত টায়ার, কাজু-বাদাম ও পেস্তা বাদামের।

কিন্তু প্রতিনিয়ত যেসব পণ্য সাধারণ জনগণ কিনে থাকেন সেগুলো কমছে কিনা, সে বিষয়ে চিন্তা নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের জনগণের।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবের পর বেড়ে গেছে ভোজ্য-তেল সয়াবিনের দাম। সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আরও ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে হলো ২০৫ টাকা। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব খন্দকার নূরুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এদিকে, সাধারণ মানুষ এমন বাজেট প্রত্যাশা করেছিলেন যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যেন ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো আশার আলো দেখছেন না তারা। এরমধ্যে সয়াবিনের দাম বাড়ানোয় অনেকটাই ভোগান্তি বেড়েছে তাদের।

বাজেটের ব্যাপারে কথা হয় খিলক্ষেত এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবু সাঈদের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা যারা অল্প আয়ের মানুষ তাদের জন্য খেয়ে পরে বাঁচাই দায় হয়ে গেছে। জিনিসপত্রের দাম বিশেষ করে চাল-ডাল-রুটির দাম যেভাবে বাড়ছে আয় তো আর সেভাবে বাড়ছে না।

তিনি বলেন, সরকারের একটি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মানুষের হাতের নাগালে থাকে। কিন্তু সেটা হয়নি।

ব্যবসায়ী মজনু হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সবকিছুর দাম বাড়তির দিকে, বাজেট নিয়ে কি আর বলার আছে? এতে কি আমাদের মতো সাধারণ ব্যবসায়ী ও মানুষের কোনো লাভ হয়? শুধু দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী-সচিবদের লাভ হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাজেট নিয়ে ক্ষোভ জানান রিকশাচালক রহিম মিয়া। বলেন, বাজারে চাল-ডাল সবকিছুর দাম বাড়ছে। বাজেট নিয়া কি বলমু?

রাসেল হোসেন নামে এক উদ্যোক্তা বলেন, শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে সরকার ভর্তুকি দিলে সাধারণ মানুষ আরও সমৃদ্ধ ও সচ্ছল হবে। একই সঙ্গে দেশ এগিয়ে যাবে। কিন্তু ভর্তুকির অর্থ ও প্রণোদনা তৃণমূলে সঠিকভাবে পৌঁছচ্ছে না। সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।

মাসুদ ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বাজেটে শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। গবেষণায় বরাদ্দ একেবারেই কম। গবেষণায় বরাদ্দ না বাড়ালে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিকাশ লাভ করবে না। একইসঙ্গে জাতীয় ভিত্তি দৃঢ় হবে না।

জনগণ এসব কথা বললেও কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন শিরোনামে উপস্থাপিত বাজেটকে ‘গরিবের বাজেট’ বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত এ বাজেট গরিবের বাজেট, ব্যবসা-বান্ধব ও গণমুখী বাজেট।

তিনি আরও বলেন, এ বাজেটে নিশ্চয়তা আছে। সোশ্যাল সেফটিনেট আগের চেয়েও সাত হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। গতবারের চেয়ে আরও সাত হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। সোশ্যাল সেফটিনেটের আওতা বাড়ানো হয়েছে। কাজেই যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে এই বাজেট মানবিক বিবেচনা করে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের বিষয়কে নজর দেওয়া হয়েছে। সেখানে সাত হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। কাজেই এটা গরিবের বাজেট, ব্যবসা-বান্ধব বাজেট ও গণমুখী বাজেট।

কিন্তু সাধারণ নাগরিকদের অভিযোগ, স্বচ্ছলভাবে চলার জন্য এ বাজেটে তেমন কিছুই করা হয়নি। আমদানিকৃত কিছু পণ্যের ওপর কর কমানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ চোখে দেখা যায়, যে পণ্য-সামগ্রীগুলোর ওপর কর কমানো হয়েছে- তা মানুষ প্রতিদিন কেনে না। দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় এমন পণ্যের কর কমছে। প্রতিদিন ব্যবহার্য পণ্যের দাম হাতারে নাগাল ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সরকার বাজেট পাসের আগে এসব বিষয়ে নজর দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার কথা বলা হচ্ছে।  

বাজেট অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রস্তাবিত এ বাজেট স্বাধীন বাংলাদেশের ৫১তম বাজেট। ক্ষমতাসীন দলের টানা তৃতীয় মেয়াদে চতুর্থ বাজেট। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৪তম বাজেট এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের চতুর্থ বাজেট।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২২
এনবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।