ঢাকা, সোমবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ জুন ২০২৪, ১৬ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে পুলিশের গুলি, আহত ১২

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০১ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে পুলিশের গুলি, আহত ১২

বরিশাল: বরিশাল ও ভোলার সীমান্তবর্তী মহিষমারী গ্রামে দুই গ্রামবাসী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।

সংঘর্ষ ও গুলিতে আট নারীসহ ১২ জন আহত হয়েছেন।  

আহতদের মধ্যে নারীসহ ১২ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন ও ভোলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মহিষমারী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভোলা ও বরিশাল জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রীপুর ইউনিয়নের চৌকিদার মাহেব হোসেন বলেন, শ্রীপুরের রুবেল কাজী তার লোকজন নিয়ে ভোলার ভেদুরিয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিল। এ সময় তাদের সঙ্গে বিভিন্ন অস্ত্র ছিল। সীমানার মধ্যবর্তী স্থানে থাকা বরিশাল ও ভোলা জেলা পুলিশের যৌথ পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের বাধা দেন। এক পর্যায় রুবেল কাজীর লোকেরা পুলিশের ওপর হামলা করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি করে।

হাসপাতালে ভর্তি আহত জামাল রাঢ়ী ও নান্নু হাওলাদার বলেন, শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। যদি সীমানা নিয়ে জটিলতা থাকে তাহলে তো নির্বাচন হবে না। বর্তমান চেয়ারম্যান হারুনই থাকবেন চেয়ারম্যান। তাই হারুন মোল্লা ভোলার চরচটকি মারা থেকে লোকজন ভাড়া করে এনে মহিষমারী গ্রামের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এরপর আমরা বাধা দিলে হারুন পুলিশ ভাড়া করে এনে আমাদের উপর গুলি করায় অহেতুকভাবে।  

গুলিবিদ্ধ শ্রীপুরের আবুল হোসেন মাঝির ছেলে মো. রিয়াজ বলেন, নদী ভাঙনে আমাদের ঘরবাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। বরিশাল-ভোলা সীমান্তবর্তী মহিষমারী গ্রামে চরের মধ্যে প্রায় দুইশ’র মতো ঘর রয়েছে। শ্রীপুরের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রুবেল আমাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু নতুন চেয়ারম্যান হারুনর রশিদ মোল্লা আমাদের উচ্ছেদ করে সেই জমি দখলের চেষ্টা করছে।  দুপুরে বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ভোলার লোকজন আমাদের উৎখাত করতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা নিয়ে উল্টো তারাও আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে।

শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনিরুল ইসলাম পলাশ বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সীমানা বিরোধকে সামনে আনতে চাইছেন চেয়ারম্যান হারুন। তাই এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি।  

শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন মোল্লা বলেন, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ ও ভোলা সদরের ভেদুরিয়া এলাকার সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে। স্থানীয় রুবেল কাজী দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল ও ভোলার অংশের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে। এ নিয়ে প্রায়শই দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারই ধারাবাহিকতায় দুপুরে পুনরায় হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটে। শুনেছি রুবেল কাজীর লোকজন অস্ত্র নিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে হামলা করে। এ সময় পুলিশের তিন সদস্য আহত হন। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাল্টা গুলি করে। তবে এ ঘটনায় কতজন আহত হয়েছেন সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

অভিযোগ অস্বীকার করে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি রুবেল কাজী বলেন, ঘটনার সময় আমি মেহেন্দিগঞ্জে ছিলাম। এর আগে আমি বরিশালে অবস্থান করছিলাম। আগেও বরিশাল-ভোলার সীমানা নিয়ে একাধিকবার হামলা-সংঘর্ষ ঘটেছে। কিন্তু এবার গুলির ঘটনা প্রথম। পুলিশ বিনা উস্কানিতে গ্রামবাসীর ওপর গুলি করেছে।

তিনি আরও বলেন, যেখানে গুলির ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে পুলিশ ক্যাম্পের দূরত্ব অন্তত দুই কিলোমিটার। ভোলার পুলিশ বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে মহিষমারী গ্রামের মধ্যে ঢুকে নারী-পুরুষের ওপর অতর্কিত হামলা ও গুলি করেছে। এতে আটজন নারীসহ মোট ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন বলেন, শ্রীপুর ও ভেদুরিয়ার মধ্যবর্তী একটি ব্রিজ রয়েছে। ব্রিজের দুই প্রান্তের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। কিন্তু বিরোধপূর্ণ জমিতে বালু ভরাট করে ঘর নির্মাণ করছিলেন শ্রীপুরের রুবেল কাজী। এতে বাধা দেয় ভেদুরিয়ার বাসিন্দারা।

ওসি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার ঘটনার সময় রুবেল কাজী স্থানীয় অসংখ্য নারী-পুরুষ নিয়ে বিরোধপূর্ণ জমি দখল করতে যাচ্ছিলেন। এ সময় সীমান্তে দায়িত্বে থাকা বরিশাল ও ভোলা জেলা পুলিশের সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এ সময় তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ছিল। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তারা জমি দখলের জন্য অগ্রসর হয়। এক পর্যায় পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শর্টগান থেকে ২৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। যতটুকু যেনেছি তাতে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়নি। তবে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। কতজন আহত হয়েছেন বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে পরে জানানো হবে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কবির উদ্দিন বলেন, বিকেল ৫টার দিকে ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে সাতজন গুলিবিদ্ধ। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে দুই নারী ও এক পুরুষের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের চিকিৎসা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
এমএস/আরবি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।