ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লাখো নলকূপ তলিয়ে সিলেটে সুপেয় পানির সংকট

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২২
লাখো নলকূপ তলিয়ে সিলেটে সুপেয় পানির সংকট

সিলেট: স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মোকাবেলা করছেন পুরো সিলেটবাসী। বিভাগের মধ্যে সিলেট নগরী ও জেলার ৮০ ভাগ এবং সুনামগঞ্জের ৯০ ভাগের ওপরে এলাকা প্লাবিত হয়।

সেই সঙ্গে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এমন বন্যার মোকাবেলা করতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবেননি এ অঞ্চলের মানুষ। এতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়। বন্যা অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু-হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ভেসে গেছে বানের পানিতে।

উপদ্রুত এলাকার লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করেন। এ অবস্থায় প্রাণে বাঁচা লোকজন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভোগেন।

গত ১৫ জুন থেকে ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে পরদিন থেকে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে বন্যার পানি। ভারি বর্ষণ বন্যায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোতে পানি উঠায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে সিলেট নগরের মানুষও পানি সংকটে পড়েন।

আর বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোর টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। চারদিকে পানিতে থৈ থৈ করলেও খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয় সবখানে।

যদিও সে সময় থেকে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনগুলো ও ব্যক্তি উদ্যোগে বানভাসিদের পাশে দাঁড়ায় খাবার ও পানি নিয়ে।

যে কারণে খাবার পানির সংকট: সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা কবলিত হয়ে ৮০ ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে যায়। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে ২০ ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।  

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, সরকারি নলকূপের হিসাবের বাইরে ব্যক্তি কেন্দ্রিক বসানো অন্তত ৫০ হাজার নলকূপ শুধু সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। যে কারণে সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দেয়।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ শেখ সাদি রহমত উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বিভাগে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেওয়া ৪৯ হাজার ১১০টি নলকূপ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। যার পরিমাণ ৮০ ভাগ হবে। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ২০ হাজার ২৩৪টি, সুনামগঞ্জে ২৭ হাজার, হবিগঞ্জে ১ হাজার ৫৯১ টি এবং মৌলভীবাজারে ২৮৫টি। এর বাইরে ব্যক্তি কেন্দ্রিক ৫গুন নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপের অন্তত ৫০ হাজার বন্যায় প্লাবিত হতে পারে, ধারণ করছেন তিনি।

তিনি বলেন, বিভাগের বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ২৬ লাখ ৬ হাজার ৪০০ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ১১ লাখ ৭৮ হাজার, সুনামগঞ্জে ১৩ লাখ, হবিগঞ্জে ১ লাখ ১ হাজার এবং মৌলভীবাজারে ৮৫ হাজার। এরবাইরেও ১৩টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সরবরাহ করা হয়। সিলেট ও সুনামগঞ্জে ৫টি করে। ১টি নগরীতে ২টি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি মজুত রাখতে ১২ হাজার ১৫১টি জারিকেন বিতরণ করা হয়। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৭ হাজার ৭১টি, সুনামগঞ্জে ৫ হাজার, হবিগঞ্জে ১১২ ও মৌলভীবাজারে ৮০টি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ৯৯ টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ৩৫ হাজার নলকূপের মধ্যে ২৭ হাজার বন্যার পানিতে তলিয়েছে। আর বেসরকারি প্রায় ২ হাজার নলকূপ প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ৮টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেওয়া হয়েছে। ১টি প্লান্ট থেকে অন্তত ৫ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা যায়। বিশেষ করে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জে এবং নগর এলাকায় একটি করে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেওয়া হয়েছে। আর ২টি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানি কমলে নলকূপের পানি কিভাবে বিশুদ্ধ করতে হবে, সে পদ্ধতি জানিয়ে দিতে প্রচারণা অব্যাহত রাখা হয়েছে।     

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২২
এনইউ/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ