ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কারাগারে বসেই ডাকাতির পরিকল্পনা-দল তৈরি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৯ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২২
কারাগারে বসেই ডাকাতির পরিকল্পনা-দল তৈরি

ঢাকা : শহিদুল, আয়নাল, আন্ডু, আজিজুল, উজ্জ্বল, শাহিন, শহিদ, রনি ও গাটু- এরা সবাই ডাকাত দলের সদস্য। বিভিন্ন সময় চুরি-ছিনতাইয়ের কেসে কারাগারে ছিলেন তারা।

সেখানে বসেই গড়েন ডাকাত দল। পরিকল্পনাও করেন মহাসড়কে লুটপাটের। ছাড়া পেয়ে ডাকাতি চালাতে গিয়ে এবার তারা ধরা পড়েছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-১) হাতে। সবার নামেই বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন অপরাধে রয়েছে মামলা। তাদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে।

জানা গেছে, এ নয় ডাকাত সদস্য আগে একে অপরকে চিনতেন না। বিভিন্ন অপরাধকাণ্ডে মামলায় জড়িয়ে কারাবরণ করেন সবাই। কারাগারেই একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হন। সেখানে বসেই রংপুর-গাজীপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ডাকাতির পরিকল্পনা করতেন তারা। তাদের পরিকল্পনার অংশে ছিল আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে ডাকাতিরও।

র‌্যাব জানিয়েছে, আটককৃতরা গত পাঁচ বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে রংপুর ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন ঝাঁজর এলাকা থেকে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের এ ৯ সদস্যকে আটক করা হয়।

সোমবার (০৪ জুলাই) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, র‍্যাব-১’র অধিনায়ক লেফট্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

আটককৃতদের মূল নাম- মো. শহিদুল ইসলাম (৩৪), মো. আয়নাল মিয়া ওরফে আয়নাল হক ওরফে আয়নাল (৩৯), মো. আন্ডু মিয়া (৫৭), মো. আজিজুল ইসলাম ওরফে আইনুল (৩২), উজ্জ্বল চন্দ্র মহন্ত (২৭), মো. শাহিন ওরফে সজিব (৩৩), মো. শহিদ (৩৮), মো. রনি সরকার (২৪) ও মো. আব্দুল হাকিম ওরফে গাটু ওরফে আব্দুল গাটু মিয়া (৪০)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, একটি ম্যাগজিন, দুই রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ২টি ওয়ান শুটারগানের গুলি, দুটি ছোঁরা, একটি রামদা, ৫টি গামছা, একটি রশি, একটি করাত, দুটি টর্চ লাইট, একটি বস্তা, ১১টি মোবাইল ফোন ও নগদ দেড় হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

লেফট্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই চক্রের তৎপরতা সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। চক্রের সদস্যরা নিরীহ মানুষকে অস্ত্রাঘাত করে বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, গাড়ি, টাকা পয়সা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি ছিনতাই বা ডাকাতি করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। তাদের ভয়ে এলাকার লোকজন সবসময় আতঙ্কিত।

র‌্যাব-১ দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রটিকে গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১’র আভিযানিক দল গাজীপুরের গাছা থানাধীন ঝাঁজর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে।

অধিনায়ক আরও বলেন, চক্রের দলনেতা শহিদুল ইসলাম। দলটিতে আনুমানিক ১০ থেকে ১২ জন সদস্য রয়েছে। শহিদুলের অন্যতম সহযোগী আন্ডু মিয়া ও আয়নাল মিয়া। তারা ডাকাতির পরিকল্পনাসহ অন্যান্য সদস্যদের একত্রিত করতো। তারা গত পাঁচ বছর ধরে একইসঙ্গে রংপুর ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছে। এরা প্রথমে চুরি-ছিনতাই করতো। বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গিয়ে নিজেরা পরিচিত ও দল গঠন করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যা জানা গেল-

ডাকাত চক্রের মূল হোতা শহিদুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তিনি আগে আগে রিকশা চালাতেন। পরে সহজলভ্য ও বেশি অর্থের লোভে ডাকাতির পথ বেঁছে নেন৷। সাধারণত প্রতিমাসে দুই থেকে তিনবার ৬ থেকে ৯ জনের দল গুছিয়ে প্রথম দিকে রংপুর ও পরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক-মহাসড়ক কেন্দ্রিক ডাকাতি করতেন। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি, ধর্ষণসহ ৬টি মামলা রয়েছে।

আয়নাল মিয়া ডাকাতি করতে গাজীপুরের গাছা থানাধীন ঝাঁজর এলাকায় একটি অস্থায়ী আবাসস্থল ঠিক করেছিলেন। তিনি গত পাঁচ বছর ধরে চুরি-ডাকাতির চক্রের সঙ্গে জড়িত। আগে পেশায় একজন অটোরিকশা চালক ছিলেন। প্রথমে নিজ এলাকায় চুরি করতেন। পরে শহিদুলের সঙ্গে পরিচিত হলে ডাকাতির খাতায় নাম লেখান। তার মূল দায়িত্ব ছিল ডাকাতির জন্য স্থান নির্ধারণ ও অন্যান্যদের সংঘবদ্ধ করা।

ডাকাতির পর লুণ্ঠিত মালামাল শহিদুলের নির্দেশে অন্যান্যদের মাঝে বণ্টন করতেন তিনি। এ ছাড়া তিনি মাদক চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে চুরি-ডাকাতিসহ ৪টি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার আন্ডু মিয়া ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী এবং পরামর্শদাতা। তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে চুরি-ডাকাতি দলের সঙ্গে জড়িত। এর আগে পেশায় চা-দোকানি ছিলেন। খোকন নামে এক ডাকাত সর্দারের অধীনে আগে কাজ করতেন আন্ডু। খোকন জেলে গেলে তিনি শহিদুলের দলে যোগ দেন। দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত হওয়ায় তিনি এ চক্রের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতিসহ ৪টি মামলা রয়েছে।

গত ৩ বছর ধরে ডাকাত চক্রের সঙ্গে জড়ি শহিদ। পেশায় অটো রিকশাচালক হলেও নিজ এলাকায় কুখ্যাত চোর হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। শহিদুলের চক্রে তিনি ডাকাতির পর দ্রুত পালানোর পরিকল্পনা করতেন। এ ছাড়া ডাকাতি করা জিনিসপত্র সরবরাহে যানবাহনের ব্যবস্থা করতেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা এবং চুরিসহ ১২টি মামলা রয়েছে।

ডাকাত চক্রের সদস্য শাহিনের বিরুদ্ধে দস্যুতাসহ দুটি, উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলাসহ দুটি, আজিজুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতনের একটি, আব্দুল হাকিম ও রনি সরকারের বিরুদ্ধে চুরির একটি করে মামলা রয়েছে বলেও জানান র‍্যাব-১’র অধিনায়ক লেফট্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

তিনি আরও বলেন, চক্রের সদস্যরা ডাকাতির জন্য নির্ধারিত সড়কগুলোর নির্জন স্থানে রাতের আঁধারে গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন। এ সময় ইজি বাইক, অটোরিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল, ছোট পিক আপসহ ছোট আকারের যানবাহন টার্গেট করে ডাকাতি করতেন। এ সময় অস্ত্রের মুখে মানুষকে জিম্মি করে রাখতেন তারা। সামনে ঈদ, তাই মহাসড়কে বড় আকারে ডাকাতি করতে তারা গাজীপুরের গাছা থানাধীন ঝাঁজর এলাকায় একত্রিত হয়েছিলেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২২
এসজেএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।