ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ঝিনাইদহে মাছ চাষে ব্যবহার হচ্ছে রাসায়ানিক সার

এম রবিউল ইসলাম রবি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২২
ঝিনাইদহে মাছ চাষে ব্যবহার হচ্ছে রাসায়ানিক সার পুকুরে সার দিচ্ছেন এক চাষি

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে বাওর ও বিলসহ বিভিন্ন জলাশায়ে মাছ চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়ানিক সার। মাছ চাষের ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে বেড়েছে।

 

ঝিনাইদহ জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলায় ২৮টি বাওর ও বদ্ধ জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে চারটি, কালীগঞ্জ উপজেলায় চারটি, কোটচাঁদপুর উপজেলায় চারটি, মহেশপুর উপজেলায় আটটি, হরিনাকুন্ডু উপজেলায় সাতটি ও  শৈলকুপা উপজেলায় একটি বাওর রয়েছে।  

ঝিনাইদহ জেলায় ২৮টি জলাশয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। যার আয়তন চার হাজার ২৯০ একর।

বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ চাষে ইউরিয়া, টিএসপিসহ বিভিন্ন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে হিলডল জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ জলাশয়ে মাছ মরে ভেসে ওঠার জন্য ব্যবহার করা হলেও তাতে জলাশয়গুলোর অন্যান্য ছোট মাছ, বিভিন্ন ক্ষুদ্র প্রাণীও মারা যায়। এছাড়া সামগ্রিকভাবে বর্ষাকালে অতি মাত্রায় কীটনাশক দেওয়ায় বেশি ক্ষতি হচ্ছে মাছের বংশ বিস্তারের।

ঝিনাইদহ জেলা সদরে সাগান্না, করাতিপাড়া, ভদ্রখালী দোহা ও কালিতলা দোহা বাওর। কালীগঞ্জ উপজেলায় সর্জাদ, মর্জাদ, সাঁকো, বারফা বাওর। কোটচাঁদপুর উপজেলায় জয়দিয়া, বলুহর, কুশনা, জগদীশপুর বাওর। মহেশপুর উপজেলায় কাঠগড়া, ফতেপুর, নস্তি, সস্তা, পোড়াপাড়, সলেমানপুর, বাঘাডাঙ্গা ও চাপাতলা বাওর। হরিণাকুন্ডু উপজেলায় নারায়নকান্দি-কায়েতপাড়া, কাপাসাটিয়া, চাদঁপুর (বদ্ধ জলাশয়), ভূইয়াপাড়া-সনাতনপুর (বদ্ধ জলাশয়), ভেড়াখালী-ভাতুড়িয়া (বদ্ধ জলাশয়), নিত্যনন্দপুর, কেচমত ঘোড়াগাছা (জলাশয়) বাওর। শৈলকুপা উপজেলায় একটি মাত্র নিত্যানন্দপুর বাওর রয়েছে। এ জলাশয়গুলোতে মাছ চাষের জন্য ৫৯টি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি রয়েছে।

প্রকৃত মৎসজীবীরা বিল বাওর লিজ পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের আফিসের এক কর্মচারী জানান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও সমবায় অফিসার যাচাই বাচাই করে যাদের নামে সনদ দেন, তাদের জেলা প্রশাসন জলাশয়ে লিজের অনুমতি দিয়ে থাকে এবং প্রকৃত সমিতিকে লিজ দেওয়া হয়।  

তিনি আরও জানান, জলাশয়ের ২০ একর জমির কম হলে লিজ দেয় ইউএনও আফিস। আর ২০ একর জমির চেয়ে বেশি জমির জলাশয় লিজ দিতে পারে ডিসি আফিস। এছাড়া প্রকৃত সমিতিকে যাচাই বাচাই করে জলাশয়গুলো লিজ দেওয়া হয়।

জেলায় সরকারি হ্যাচারির সংখ্যা তিনটি ও বেসরকারি হ্যাচারির সংখ্যা একটি। মৎস্যজীবীর সংখ্যা ১১ হাজার ৯৪০ জন, মৎস্য চাষির সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৪৫।

ঝিনাইদহ জেলার মোট মাছের চাহিদা ৪০ হাজার ৮৪ মেট্রিকটন, উৎপাদন হয় ৪৭ হাজার ২২৩ মেট্রিকটন। মাছের উদ্বৃত্ত থাকে সাত হাজর ১৩৯ মেট্রিকটন।  

মাছের খাদ্য হিসেবে ইউরিয়া সার ব্যবহার করলে ফাইবার মান নেমে যায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না বাওরের সভাপতি মো. শাহাজউদ্দীন বলেন, জলাশয়ে মাছ চাষে ইউরিয়া সার পানিতে খাদ্য তৈরি করে। টিএসপি সার খাদ্যের সঙ্গে শক্তি বৃদ্ধি করে। এতে ফাইবারের মান নেমে যাওয়ার সুযোগ নেই এবং মানবদেহের ক্ষতি করে না।  

ঝিনাইদহ জেলা মৎস কর্মকর্তা আলফাজ উদ্দীন শেখ এ ব্যাপারে বলেন, আমরা পানিতে যে মাছ চাষ করি, তাতে ইউরিয়া ও টিএসপি সার মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করি। এটা দিয়ে ফাইটো প্লাংটন ও জুয়ো প্লাংটন তৈরি হয়। যা সবই মাছের প্রাকৃতিক খাবার। এতে ফাইবারের মান কমে না ও মানবদেহের কোনো ক্ষতিও হয় না। বরং এগুলো মাছের প্রাকৃতিক খাবার।  

ঝিনাইদহ জেলার ছয়টি উপজেলার জলাশয় থেকে বছরে ৫৬৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার মাছ উৎপাদন হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২২
এসআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।