ঢাকা, শনিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রাজশাহীতে পশুর হাটে শেষ মুহূর্তে বেড়েছে ভিড়, কমছে না দাম

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২২
রাজশাহীতে পশুর হাটে শেষ মুহূর্তে বেড়েছে ভিড়, কমছে না দাম

রাজশাহী: রাজশাহীতে শেষ মুহূর্তে ভিড় বেড়েছে পশুর হাটে। কিন্তু কমছে না কোরবানির পশুর দাম।

সপ্তাহের ব্যবধানে রাজশাহীর পশু হাটগুলোতে দেশি গরুর সরবরাহ বেড়েছে দ্বিগুণ।  

এরপরও দাম কমছে না কিছুতেই। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কোরবানির জন্য তৈরী করা দেশিজাতের মাঝারি আকৃতির গরুই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। বড় গরুর চাহিদা নেই বললেই চলে। তাই যেসব খামারি কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বড় গরু লালন-পালন করেছেন শেষ মুহূর্তে এসে তারা বিক্রি না হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। তাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ দেখা দিয়েছে।  

রোববার (১০ জুলাই) ঈদুল আযহা। ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হবে এ  ঈদ। বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। কোরবানির পশু কিনতে এখন হাটে ছুটছেন সবাই। তাই শেষ মুহূর্তে শুক্রবার দুপুরে রাজশাহীর পশু হাটে জনস্রোত নেমেছে। তাই দাম চড়া থাকলেও বেচাকেনা জমে উঠেছে।  

রাজশাহী বৃহত্তম সিটিহাট ঘুরে দেখা গেছে, সময় ঘনিয়ে আসায় এই পশুর হাটে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। প্রথম দিকে মহিষের আধিক্য ছিল এই পশুর হাটে। তবে গত সপ্তাহ থেকে দেশি গরুতে ভরে উঠেছে হাট। কোরবানির দিন ঘনিয়ে আসায় দেশি sজাতের গরুর সরবরাহ বেড়ে গেছে।  

তবে মজুদ বাড়লেও দাম কমছে না দেশি গরুর। তাই দেশি গরুর দাম এখনও মধ্যবিত্ত পরিবারের হাতের নাগালের বাইরে। অনেকে গরু কিনতে হাটে আসলেও দাম বেশি থাকায় দরদাম করে আজও বাড়ি ফিরছেন। তাদের আশা শনিবার শেষে দিনে কোরবানির পশুর দাম কমে যাবে। তখন সাধ্যের মধ্যে গরু পাওয়া যাবে।  

রাজশাহী সিটি হাটে গিয়ে দেখা গেছে, আজ ছোট সাইজের গরুর দাম ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা, মাঝারি আকৃতির গরুর দাম দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা এবং বড় আকৃতির গরুর দাম ৯০ থেকে ১ লাখের ওপরে হাঁকানো হচ্ছে। অপরদিকে সর্বনিম্ন ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকার মধ্যে কোরবানির জন্য ছাগল বিক্রি হচ্ছে।  

সিটিহাটে আসা দামকুরা এলাকার গরু ব্যবসায়ী আবুল ফজল বাংলানিউজকে বলেন, এবারও দেশি জাতের গরুর চাহিদা বেশি রয়েছে। আর দেশি গরুর কোনো সংকটও নেই। কেবল দাম একটু বেশি। গো খাদ্যের দাম বাড়ায় এবার খামারে গবাদি পশু লালন-পালনের ব্যয় বেড়েছে। তাই গত বছরের তুলনায় দামও বেড়েছে। তাই দামও বেশি। হাটে মাঝারি আকৃতির ক্রেতাই বেশি বলে জানান তিনি।

দাম বাড়লেও তাদের করার কিছু নেই উল্লেখ করে রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী জলিল উদ্দিন বলেন, উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাই গরুর দামও বেড়েছে। খামারীরা কিছুটা বাড়তি লাভের আশায় এক বছর ধরে কোরবানির পশু লালন-পালন করেন। কিন্তু ভরা মৌসুমে হাটে তুলে দাম না পেলে তারাও ক্ষতির মুখে পড়বেন। আর লোকসান হলে গরু পালনের সংখ্যা কমবে। বাজারে যার প্রভাব পড়বে।  

একদিকে গরুর দাম দ্বিগুণ হবে অন্যদিকে খামারের সংখ্যা কমে আসায় দেশি পশুর হাটগুলো অদূর ভবিষ্যতে ভারতীয় গরুর দখলে চলে যাবে বলেও মন্তব্য করেন জলিল উদ্দিন।  
 
তবে ভিন্ন আশঙ্কা প্রকাশ করে একই উপজেলার বড়গাছী গ্রামের নুরল আমিন বলেন, তার খামারে এবার ১৫টি বড় গরু পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি গরু বিদেশি জাতের। এসব গরু পালন করতে বছরজুড়ে তাকে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে। শ্রমিক নিয়ে এসব গরু পালন করেছেন কোরবানির মৌসুমে কিছু বাড়তি লাভের মুখ দেখবেন বলে। কিন্তু বড় গরুর চাহিদা কম থাকায় তার মতো অনেকেই শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। তাদের পশু অবিক্রিত থেকে গেলে আরও এক বছর পলতে হবে না হলে কেজি দরে বিক্রি করে দিতে হবে। এতে লাভের চেয়ে লোকসানের পাল্লাই ভারি হবে বলে হতাশার কথা জানান এই খামারী।

রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক বছরের তুলনায় এবারও হাটে প্রচুর পরিমাণে দেশি গরু-মহিষ ও ছাগল আসছে। তবে সবকিছুর দাম বাড়ায় কোরবানির পশুর দামও গতবারের চেয়ে একটু বেশি। তাই বিক্রি আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম।  

তবে দেশি গরুর ব্যবসায়ী বা খামারীদের এ নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই। হাতে আরও একদিন সময় রয়েছে। অনেকে জায়গা নেই বলে শেষ দিনে কোরবানির পশু কেনেন। তাই আগামীকাল শনিবার এই হাটে পুরোদমে কোরবানির পশু কেনাবেচা জমে উঠবে বলেও জানান এই হাট ইজারাদার।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২২
এসএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।