ময়মনসিংহ: নির্মম বাস্তবতায় ট্রাকচাপায় মা-বাবা ও বোনসহ সব হারিয়ে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটি বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
তাদের ভাষ্য, শিশুটি দুনিয়ায় আসার কথা ছিল আরও মাস দুয়েক পরে। কিন্তু নির্মম নিষ্ঠুর বাস্তবতায় তার আগমন হয়েছে জন্মদাত্রী মাসহ বাবা-বোনের মৃত্যুর পর সব হারিয়ে। সৃষ্টিকর্তার এই অপারলীলায় কোনো উত্তর নেই কারও কাছে।
স্বজনরা জানান, শনিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছে। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিল ছয় বছরের শিশুকন্যা সানজিদা।
পরিকল্পনামত ত্রিশালের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্টাসনোগ্রাম করে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে ফিরছিলেন বাড়ির পথে। কিন্তু মহাসড়ক পার হওয়ার সময় হঠাৎ বেপরোয়া একটি মালবাহী ট্রাক চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিনজনের।
তবে দুর্ঘটনার সময় মায়ের পেটের উপর দিয়ে মালবাহী ট্রাকের চাকা চলে গেলেও অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ট হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। জন্মের সময় নবজাতকের ডান হাতের দুইটি হাড় ভেঙ্গে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা তাৎক্ষনিক ওই নবজাতককে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেওয়া হয় উন্নত চিকিৎসা।
এদিকে আলোচিত নবজাতক বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার লাবিব প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক মো. শাহজাহান।
তিনি জানান, নবজাতককে সব ধরনের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তার সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়েছে। এখন সে সুস্থ এবং ভালো আছে। তবে তাঁর হাতের ভেঙ্গে যাওয়া হাড় প্লাষ্টার করা হয়েছে। তা সারতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।
একই ধরনের তথ্য জানিয়েছেন ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেজড হাসপাতালের চিকিৎসক জান্নাতুল শিলা। তিনি বলেন, শিশুটির ডান হাতের হাড় ভেঙে গেছে, সেখানে প্লাস্টার করা হয়েছে। তা সারতে কিছুদিন সময় লাগবে।
এদিকে শনিবার (১৬ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক চিকিৎসাধীন ওই শিশুকে দেখতে গিয়ে শিশুটির চিকিৎসাসহ ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, শিশুটির চিকিৎসা খরচসহ ভবিষ্যতের জন্য তার নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নিহতের স্বজনরা আরও জানান, ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রত্না বেগমের গর্ভে এর আগে আরও দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এর মধ্যে মা-বাবার সঙ্গে ছয় বছর বয়সী সানজিদা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দুজন হলো- দশ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত ও সাত বছর বয়সী ছেলে এবাদত। মা-বাবা ও বোনকে হারিয়ে এখন তারা নির্বাক, দিশেহারা স্বজনরাও।
এ ঘটনায় শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছে ত্রিশালের রায়মনি গ্রামসহ পুরো উপজেলার বাসিন্দারা।
এদিকে শনিবার (১৬ জুলাই) রাতে উপজেলার রায়মনি গ্রামে নিজ বসত ঘরের পেছনে পাশাপাশি তিন কবরে দাফন করা হয় জাহাঙ্গীর আলম (৪০), স্ত্রী রত্না বেগম (৩২) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদাকে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
এসএ