ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মেহেরপুর-কাথুলি সড়কের বেহাল দশায় ভোগান্তিতে ২৫ গ্রামের মানুষ

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২২
মেহেরপুর-কাথুলি সড়কের বেহাল দশায় ভোগান্তিতে ২৫ গ্রামের মানুষ

মেহেরপুর: বড় বড় গর্ত আর খানা-খন্দের কারণে মেহেরপুর-কাথুলি সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ যেন এক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্বাবধানে এ রাস্তাটির কারণে প্রতিনিয়তই দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন সীমান্ত এলাকার হাজারো মানুষ।

মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তি উজুলপুর, কুলবাড়িয়া, চাঁদপুর শিবপুর, সহোগলপুর, গাঁড়াবাড়িয়া, কাথুলি, তেঁতুলবাড়িয়া, ধলা, খাসমহল, রংমহলসহ আশে পাশের প্রায় ২০ থেকে ২৫টি গ্রামের মানুষ জেলা শহরে আসেন এ রাস্তাটি দিয়ে। এছাড়া এলাকার প্রশিদ্ধ সবজিসহ অন্যান্য ফসলও জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় এ পথেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মেহেরপুর শহরতলির কায়েম কাটার মোড় থেকে গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তি কাথুলি মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি ভাঙাচোরা ও খানা-খন্দে ভরা। কোনো কোনো স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কের সেইসব গর্তে এবং কুলবাড়িয়া ও গাঁড়াবাড়িয়া বাজারে জমে হাটু পানি। তখন পথচারীদের দূর্ভোগের যেন কোনো সীমা থাকে না।

অটো চালক তারিকুল ইসলাম বলেন, ১০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৯ কিলোমিটার অংশই খারাপ। ভাঙাচুরা রাস্তায় যাওয়া আসার ফলে গাড়ির বল বিয়ারিংসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সপ্তাহ পার না হতেই পার্টস বদলাতে হয়।

উজুলপুর গ্রামের অটো চালক আতিয়ার রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে থাকলেও দেখার মতো না। মাঝে মধ্যে সড়ক ও জনপথের লোকজন সংস্কারের নামে কিছু পাথর ছিটিয়ে চলে যায়। তার দুই একদিন পরে আবার আগের মতো হয়ে যায়।

সদর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের লিজন বলেন, প্রতিদিনই দুই একবার মেহেরপুর শহরে যেতে হয়। ভাঙাচুরা রাস্তায় অটো বা আলগামনে চড়ে যেতে মাজা-কোমর ব্যথা হয়ে যায়।

গাংনীর ধলা গ্রামের সাহার আলী বলেন, আমরা সীমান্তবর্তি গ্রামের বাসিন্দা। এ রাস্তা দিয়ে মেহেরপুর জেলা শহরে আসি। রাস্তাটি এতোটাই খারাপ হয়ে গেছে যে, এটি চলাচলের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

রামকৃষ্ণপুর ধলা গ্রামের ব্যবসায়ী রমজান আলী ও রিয়াজতুল্লাহ বলেন, আমরা সবজি নিয়ে মেহেরপুর কাঁচা বাজারে আসি। এ আট থেকে নয় কিলোমিটার রাস্তায় চলতে গিয়ে জীবন অতিষ্ট হয়ে পড়ে। সরকারের এতো উন্নয়ন চারিদিকে, কিন্তু শুধু এ রাস্তাটিতে এসেই সরকারের উন্নয়ন হয় না।

কুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রহমত আলী ও হাসমত আলী বলেন, আমাদের এলাকাটা সবজি এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানকার সবজি ট্রাক লোড হয়ে ঢাকা, চিটাগাংসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। অথচ রাস্তাটির কারণে কোনো ট্রাক এখানে আসতে চায় না। রাস্তাঘাট ভাঙাচুরার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন তারা।

আড়ৎ ব্যবসায়ী জমির আলী বলেন, এখানকার কৃষি পণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। কিন্তু মেহেরপুর-কাথুলি রাস্তাটির কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে বাইরে থেকে এখানে গাড়ি আসতে চায় না।

মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাব ডিভিশনাল প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মেহেরপুর-কাথুলি রাস্তাটির অবস্থা এখন খুবই খারাপ। রাস্তাটিতে ছোট-খাটো সংস্কার করলেও টেকানো যাবে না। এখানে বড় ধরনের সংস্কার কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, গত অর্থ বছরে মেহেরপুর সওজ থেকে জেলার তিনটি রাস্তার উন্নয়নের জন্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার চেয়েছিলাম। প্রতিমন্ত্রী দুইটি রাস্তার উন্নয়নে ডিও লেটার দেন। সেই দুইটি রাস্তার সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। শুধুমাত্র এ রাস্তাটি বাদ পড়েছে। এটিতে বড় ধরণের সংস্কার কাজ করার জন্য মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্যের কাছ থেকে ডিও লেটার নিয়ে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় এখনো বরাদ্দ দেয়নি। বরাদ্দ পেলে সংস্কার কাজ করা হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত) মুনঞ্জুরুল করিম বলেন, সংস্কার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে রাস্তাটির সংস্কার কাজ করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।