ঢাকা, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ জুন ২০২৪, ০৯ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ফরিদপুরে সাংবাদিককে পিটিয়ে জখম করলেন মেয়রের ভাই! 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২২
ফরিদপুরে সাংবাদিককে পিটিয়ে জখম করলেন মেয়রের ভাই!  আহত সাংবাদিক ও হামলাকারী

ফরিদপুর: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম নামে স্থানীয় এক সাংবাদিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন আলফাডাঙ্গা পৌর মেয়রের ছোট ভাই ও তার অনুসারীরা।  

সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার স্থানীয় পরিবহন বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে।

 

ঘটনার পর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে ফরিদপুরে রেফার্ড করেন।

মুজাহিদ ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঢাকা টাইমস পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আলফাডাঙ্গার পৌর মেয়র সাইফুর রহমান সাইফার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি।

আহত সাংবাদিক মুজাহিদ বলেন, আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমান সাইফারের ভাই জাপান মোল্যা ও তার পাঁচ-ছয়জন সহযোগী হঠাৎ করে আমার ওপর হামলা চালায়। তারা (হামলাকারিরা) লোহার রড, স্ট্যাম্প, দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে মারধর করেন। এসময় স্থানীয়রা হামলাকারীদের হাত থেকে আমাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাদের ওপরও চড়াও হয় তারা। এতে বেশ ক’জন আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গায় রাজধানী পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট কিনতে যান রমিজ নামে এক যুবক। তিনি ঢাকা যাওয়ার টিকিটের দাম পরিশোধ করে বাসে ওঠেন। বাস ছাড়ার আগ মুহূর্তে ‘ক্যাশ কাউন্টার’ থেকে বলা হয় রমিজ টিকিটের টাকা দেননি। তাই তাকে ঢাকায় যেতে দেওয়া হবে না। বিষয়টি জানিয়ে মুজাহিদের সহযোগীতা চান রমিজ।  

ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টির মীমাংসা করার কথা বলতেই সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর চড়াও হয় কাউন্টারের ম্যানেজার জাপান ও তার সহযোগীরা। জাপান স্থানীয় পৌর মেয়র সাইফুর রহমান সাইফারের ছোট ভাই। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মুজাহিদকে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এসময় পাশে থাকা লোকজন এগিয়ে এলে তাদের উপরও চড়াও হন জাপান ও তার সহযোগীরা।

এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা পৌর মেয়র সাইফুর রহমান সাইফার বাংলানিউজকে বলেন, আমি আলফাডাঙ্গা থেকে সকালে রামপালে এসেছি। তাই বিস্তারিত এখনো কিছু জানতে পারিনি। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখছি।

আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার জন্য সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি মুজাহিদকে দুর্বৃত্তরা লোহার রড, কাঠের বাটাম দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার হাত ও পায়ে বেশ জখম হয়েছে। পরে এক্সরে করা হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকরা তাকে ফরিদপুর মেডিক্যালে রেফার্ড করেছেন৷

সাংবাদিক মুহাজিদকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এমন মারপিট করা হয়েছে জানিয়েছে স্থানীয় এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘তাকে মেরে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়রা এগিয়ে আসায় তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অবহিত করা হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিকরা। তারা বলছেন, এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দ্রুত প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় জড়িত একজনকে আটক করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখছি।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী-বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা সার্কেল) সুমন কর বাংলানিউজকে বলেন, ‘খবরটি জানার পরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়রের ছোট ভাই জাপান মোল্যাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। আশাকরি, দ্রুত তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।

এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে এটা মামলা হিসেবে নেওয়া হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।