ঢাকা, সোমবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ জুন ২০২৪, ১৬ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে কাজ করছে সরকার 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২২
স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে কাজ করছে সরকার 

ঢাকা: ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২২-এর সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সরকার এখন ২০৪১ সালের মধ্যে উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অত্যাধুনিক পাওয়ার গ্রিড, গ্রিন ইকোনমি, দক্ষতা উন্নয়ন, ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং নগর উন্নয়নে কাজ করছে।

এ লক্ষ্যে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় ‘ভিশন ২০৪১: বিল্ডিং স্মার্ট সিটি অ্যান্ড স্মার্ট ভিলেজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের কর্মশালা আয়োজন করা হয়।

 

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।  

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।  

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।  

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান এবং সংশ্লিষ্ট খাতের অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। কর্মশালার শুরুতে স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বিনির্মাণের নকিয়া বেল ল্যাবস-এর উদ্ভাবিত বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং বাংলাদেশে স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের সুযোগ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলাদা দুটি উপস্থাপনা করেন বাংলাদেশে নকিয়ার কান্ট্রি হেড মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম এবং এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, শহরে বসবাসরত মানুষের জন্য স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে আমাদের অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে কাজ করতে হবে। আইসিটি বিভাগ জনবান্ধব সেবা দিতে ইতোমধ্যে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেছে। স্থানীয় সরকার ও আইসিটি বিভাগ সাধারণ মানুষের আশা পূরণে সামনের দিনে সম্মিলিতভাবে জনকল্যাণমূলক কাজ করতে পারে। স্মার্ট সিটি বাস্তবায়নে নির্ধারিত এলাকার বসবাসরত জনসংখ্যাকে বিবেচনায় নিয়ে ওই এলাকার জন্য মাস্টারপ্লান তৈরি করতে হবে।

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাইন্ডসেট পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে জন্য শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, আমাদের কার কোন জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে, তার একটি সুনির্দিষ্ট ক্যানভাস তৈরি করতে হবে এবং প্রত্যেকের কাজগুলোর মধ্যে সমন্বয় রাখতে হবে। আমরা বিজ্ঞানমনস্ক, প্রযুক্তিবান্ধব, প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনে দক্ষ মানুষ তৈরি করতে চাই। যাদের মানবিক ও সৃজনশীল হতে হবে।

হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও হিউম্যানওয়ারকে এক সঙ্গে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও হিউম্যানওয়ার তিনটির এক সঙ্গে মিললেই বিজয়ী হওয়া সম্ভব। এর মধ্যে হিউম্যানওয়ার তথা মানুষকেই আসল ভূমিকা পালন করতে হবে অন্যথায় সব প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও তার যথোপযুক্ত ব্যবহার সম্ভব হবে না। আর একজন সত্যিকারের মানুষ তৈরির জন্য তাদের কেবল প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুললেই হবে না তাদের মানবিক মানুষ হিসেবেও তৈরি করতে হবে।  

ডিজিটাল কানেক্টিভিটির ওপর গুরুত্বারোপ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি হবে পরবর্তী উন্নয়নের মহাসড়ক। এই মহাসড়ক ছাড়া স্মার্ট সিটি বা স্মার্ট টেকনোলজি কোনোটাই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক এগিয়ে রয়েছে। ২০২১ সালেই আমরা পরীক্ষামূলকভাবে দেশে ফাইভ-জি চালু করেছি এবং এরইমধ্যে ফাইভ-জি কানেক্টিভিটি সেবা নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বিনির্মাণে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ও শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়নে আমাদের ফাইভ-জি কানেক্টিভিটির সুবিধাকে কাজে লাগাতে হবে।  

স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ উল্লেখ করে ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র বলেন, স্মার্ট সিটির কনসেপ্ট বাস্তবায়নে ঢাকা উত্তর সিটি এরইমধ্যে কাজ করা শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে সবার ঢাকা অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে করা ১ লাখ ২৮ হাজার ৭৬৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ডিএনসিসিতে ৪৮ হাজার স্মার্ট লাইট স্থাপন করা হয়েছে, যা মোবাইল ফোন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এসব লাইটের আলো প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হচ্ছে। অনলাইনে ট্যাক্স আদায় শুরু করা হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে ১ লাখ ২৮ হাজার বাসা-বাড়িকে সার্ভের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বায়োমেট্রিক হাজিরা, অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স এবং আইওটির মাধ্যমে ২ হাজার ৩৫০টি স্থানে ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নাগরিক সেবার সব কার্যক্রমকে পর্যায়ক্রমে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। এখন ৩৩৩ এর মাধ্যমে নাগরিকরা কোনো অভিযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গে এর সামাধান করা সম্ভব হচ্ছে।

বুয়েট উপাচার্য বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করার জন্য বুয়েটে এরই মধ্যে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং স্থাপন করা হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের উন্নয়নের জন্য অ্যাগ্রিকালচার, পাওয়ার এবং অন্যান্য সেক্টরের উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করা হচ্ছে। দেশের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার তৈরিতে বুয়েট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এক সঙ্গে কাজ করছে। স্মার্ট ভিলেজের অন্যতম উপাদান স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার। স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের জন্য আইওটি ডিভাইস ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের জন্য ন্যানো টেকনোলজি এবং এআই ব্যবহার করে পরিকল্পনা মাফিক কতটুকু সার এবং ওষুধ দেওয়া লাগবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব। প্রযুক্তি ব্যবহারে আগামী দুই বছরে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করা সম্ভব হবে। উচ্চফলনশীল ধান চাষাবাদের মাধ্যমে আগামীতে ধানের উৎপাদন বহুগুণে বাড়াবে। ধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে এবং আমদানি না করতে হলে আমাদের কোনো দুঃচিন্তা করতে হবে না।  

সভাপতির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালা থেকে পাওয়া সংশ্লিষ্টদের সুচিন্তিত মতামত, উপদেশ ও সুপারিশ ভবিষ্যতে আমাদের পথ দেখাবে। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সর্পোটেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফেকচারিং ও সাইবার সিকিউরিটি এই চারটি প্রযুক্তিতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।

কর্মশালায় জানানো হয়, স্মার্ট সিটি বলতে এমন এক নগরায়নকে বোঝায় যেখানে ন্যূনতম পরিবেশগত প্রভাব নিশ্চিত করে কোনো একটি শহরের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের পাশাপাশি নাগরিকদের জন্য উন্নত জনবান্ধব সেবা দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিগুলোকে কাজে লাগানো হবে। স্মার্ট সিটিতে অনেকগুলো উপাদান থাকলেও বাংলাদেশের জন্য প্রস্তাবিত স্মার্ট সিটি কাঠামোতে স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন, জননিরাপত্তা, ইউটিলিটি এবং নগর প্রশাসনসহ মোট ৫টি উপাদান এবং পরিষেবাকে মোটাদাগে চিহ্নিত করা হয়েছে।  

অন্যদিকে, স্মার্ট ভিলেজ বলতে এমন এক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বুঝায় যেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং উন্মুক্ত উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারের মাধ্যমে স্থানীয় নাগরিকরা বিশ্ব বাজারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পাবে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের বিভিন্ন সেবা দেওয়ার ব্যবস্থাকে উন্নত করা, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বিকাশে স্মার্ট ভিলেজ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।  

কর্মশালায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, আইসিটি বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা, চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিরা, আইসিটি খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা, সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা, টেলিকম ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিরা, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও নগর পরিকল্পনাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২২
এমআইএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।