ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিধ্বস্ত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়ক!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
বিধ্বস্ত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়ক!

খুলনা: কয়েক বছর আগে পিচ ঢালাই উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে বড়বড় গর্তের।

বৃষ্টিতে এসব গর্তের কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানি জমে যায়, মনে হয় পুকুর! এতে প্রতিদিন উল্টে পড়ছে যানবাহন, আহত হচ্ছে যাত্রীরা।

খুলনার রূপসা উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কটি খানাখন্দে ভরা ও ভাঙাচোরা। বিধ্বস্ত সড়কে চলাচলরত যানবাহন, চালক, যাত্রী, পথচারী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।  

জানা গেছে, পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ড থেকে খানজাহান আলী (র.) সেতু সংলগ্ন ওরিয়ন পাওয়ার প্লান্ট পর্যন্ত এলজিইডির আওতাধীন সড়কটি সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ। বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৫০ গজ গেলেই রূপসা নদীর পাড়ে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের মাজার। এছাড়া এ সড়কের দুই পাশে রয়েছে প্রায় ১৫টি হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানিকারক কোম্পানি। কয়েকটি বরফকল, প্যাকেজিং কোম্পানি, কোস্টগার্ডের কার্যালয়সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সড়কটি দিয়ে বালু, পাথর, ইট , খোয়া বোঝাই ড্রাম ট্রাক, মাছ কোম্পানির গাড়ি এবং কয়লা ও টাইলসের মাটির ভারী যানবাহন চলাচল করে। মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানির গাড়িও চলে, যা ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি। এসব কোম্পানিতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। যাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে হয়। এছাড়া এ এলাকার বাসিন্দাদের রূপসা সেতুতে যেতে হয় এ সড়ক দিয়ে।  সর্বশেষ রাস্তাটি ৮/৯ বছর আগে সংস্কার করা হয়েছে।

পথচারী ও এলাকাবাসী দীর্ঘদিন সড়কটি সংস্কারের দাবি করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কের প্রবেশদ্বারের কিছুটা ভেতরে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের মাজারের কাছে ২০ হাত ১৫ হাত ১০ হাত ৮ হাত এমন টাইপের প্রায় ৪টি বড় পুকুরের মতো গর্ত। হাড় কোম্পানি সংলগ্ন জামে মসজিদের সামনে প্রায় ১০-১২ হাত সিকদারের বালুর মাঠের পাশে প্রায় ২০ -২৫ হাত, জাহানাবাদ সী ফুডসের পাশে প্রায় ২৫ হাত, আজিমুশ্বান জামে মসজিদের পাশে প্রায় ১২ হাত, নিউ ফুডস লিমিটেড কোম্পানির সামনে ৪-৬ হাত গর্ত প্রায় ১২-১৫টি  জায়গাজুড়ে বড় গর্ত। ইউনিক কোম্পানির সীমানা শেষ থেকে প্রায় ৪০০ ফুট রাস্থাজুড়ে দূর্বিষহ অবস্থা। পাশে বালুর বেড থাকার কারণেই এই অবস্থা হয়েছে। শুকুরমারী খালের পাশে বেশ লম্বা একটি জায়গা জুড়ে অনেক বড় গর্ত যেটা প্রায় ৩০ হাতের ওপরে, সিলভার সেলিমের বাটার ঘেরের পাশের রাস্তা পুরোটা জুড়েই খুব দূর্বিষহ অবস্থা। রূপসা সেতুসংলগ্ন কোস্টগার্ড স্টেশনের সামনে প্রায় ৮-১০ টি বড় বড় গর্ত।
চর রূপসার গ্রামের বাসিন্দা শাহারুজ্জামান শাওন বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়ক আমাদের অত্র এলাকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি, অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। এ সড়কের দুই পাশে মাছ কোম্পানি ও বরফকলসহ ৩০টির উপর কোম্পানি রয়েছে। ২০০-এর উপর চিংড়ে মাছের ডিপো আছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি দ্রুত যেন সড়কটির দ্রুত সংস্কারের।  

তিনি আরও জানান, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বড় বড় যানবাহন চলাচল করার কারণেই সড়কটির এ বিধ্বস্ত অবস্থা। কেউ অসুস্থ হলে এ সড়ক দিয়ে খুলনা শহরে বা উপজেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে রোগীর মৃত্যু হওয়ার উপক্রম হয়ে যায়।

এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পূর্ব রূপসা ব্যাংকের মোড়ের ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এ সড়ক বেহাল অবস্থায় থাকলেও এর কোনো সংস্কার না করায় আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

একাধিক চালক ও যাত্রীরা জানান, প্রতিদিন গাড়িতে যাতায়াত করতে ও এ সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। গর্তে ঢেউ তুলে গাড়ি চালাই, সড়কে নাকি পুকুরে গাড়ি চলে বোঝা যায় না! গাড়ি চালাতে গিয়ে ঝাঁকুনিতে কোমর ব্যাথা হয়ে যায়। জরুরি ভিত্তিতে তারা সড়কটি সংস্কার করার দাবি জানান।

রূপসা উপজেলা প্রকৌশলী এস এম অহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তার পাশে নদীর পাড়ে বালুর বেড রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ইট, পাথর ও কয়লার গোলা। ১০ চাকার ট্রাকগুলোর ১৫ টন ধারণক্ষমতা থাকলেও এ সড়ক দিয়ে ২৫ টনের বেশি বালু পরিবহন করা হয়। ইট, বালি, পাথর ও কয়লার এসব ট্রাকের জন্যই রাস্তাটি নষ্ট হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে পুরো রাস্তা মেপে কোথায় কি লাগবে তার একটি তালিকা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠাবো।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
এমআরএম/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।