ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কৃষকের কোনো উপকারে আসছে না জিকে খালের পানি

জয়ন্ত জোয়ার্দ্দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
কৃষকের কোনো উপকারে আসছে না জিকে খালের পানি

মাগুরা: মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় কৃষি জমিতে জিকে সেচ প্রকল্পের পানি দেওয়া বন্ধ আছে অনেক দিন ধরে। এতে পাটে জাগ দেওয়া নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

জিকে প্রকল্পের পানি দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে শ্রীপুর পর্যন্ত। বর্তমানে কৃষকরা আমন চাষে সেচ ও পাট জাগ দেওয়ার জন্য তাকিয়ে থাকছেন জিকে সেচ প্রকল্পের দিকে। কিন্তু মিলছে না কাঙ্খিত সেই পানি।

জিকে সেচ প্রকল্প সুত্রে জানা গেছে, মাগুরা জেলায় জিকের সেচ যোগ্য জমির পরিমাণ রয়েছে নয় হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে সাত হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়। ভেড়ামার থেকে কালিনগর, চিলগাড়ি, টিকারবিলা, বরইচারা পর্যন্ত খালেই শুধু পানি আসে। কিন্তু ভেড়ামারা  থেকে শ্রীপুর পর্যন্ত এলাকার চাষিদের তাকিয়ে থাকতে হয় জিকের সেচ প্রকল্পের ওপরে। আর এতোগুলো এলাকাতে পানি সরবরাহ করার কাজ চলে মত্র একটি পাম্প দিয়ে। প্রকল্পের তিনটি খালের মধ্যে দুইটিই নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে খালের শেষ সীমানা পর্যন্ত সেচের পানি আসে না। এর ফলে কৃষকরাও সঠিক সময়ে চাষ করতে পারেন না। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।

চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরে জিকে সেচ প্রকেল্পর উন্নয়ন ব্যায় বরাদ্দ ছিল এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। দুই পাড়ের আগাছা পুরিস্কার ও আর উচু-নিচু ঠিক করেই বরাদ্দের পুরো টাকা শেষ হয়ে গেছে। জিকে খালের দুরত্ব কুষ্টিয়া ভেড়ামারা থেকে লাঙ্গবাদ পর্যন্ত ৭১ দশমিক ২ কিলোমিটার, লাঙ্গবাদ থেকে বরইচারা পর্যন্ত ২৬ দশমিক ২ কিলোমিটার, লাঙ্গবাদ থেকে বাখেরা পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার এবং বধনপুর থেকে তারাউজিয়াল পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার। এসব খালের দুই পাশের জঙ্গল পরিস্কার ও স্লুইচগেট মেরামত করেই বরাদ্দের পুরো টাকাটা শেষ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে ইট-বালি-চুন-সুড়কি খষে পড়ে অসংখ্য ফাটল ও শেওলাযুক্ত হয়ে পড়েছে শ্রীপুর উপজেলার বরালিধহ জিকে প্রকল্পের ভবন। বর্তমানে এটি গো খাদ্য রাখার স্থানে পরিণত হয়েছে। অথচ প্রতি বছরই এর জন্য বরাদ্দ থাকছে উন্নয়ন ব্যায়। তারপরেও নেই কোনো নতুন ভবন নির্মাণের নাম ঠিকানা। এভাবেই চলে আসছে বছরের পর বছর।

স্থায়ানী কৃষকরা বলছেন, প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা ব্যায় করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। শুধু এই জিকে খালটি আর মেরামত করা হচ্ছে না। এ জন্য কাঙ্খিত সুফল থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষদের। কোনো উপকারেই আসছে না জিকে খালের পানি।

তারা আরও বলেন, চলতি বছরে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় খাল-বিলে-পুকুর বা ডোবায় কোথাও পানি জমেনি। তাই অনেক কৃষক শ্যালো মেশিন চালিয়ে খালে পানি ভরাট করে পাট জাগ দেওয়ার কাজ করছেন।

শ্রীপুর উপজেলা বরালিদাহ গ্রামের কৃষক আসলাম শেখ বাংলানিউজকে বলেন, তিন বিঘা জমিতে পাট ও আমন ধানের আবাদ করেছি। জিকে সেচ প্রকল্পের পানি না আশায় এ বছর পাট জাগ দিতে ও আমন ধান চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে পারিনি। শ্যালো মেশিনে পানি দিয়ে চাষ করলে লাভ হয় না। ক্যানেলে পানি না আসলে ধান চাষ করবো কিভাবে! ধানের চারাগুলো প্রায় নষ্ট হতে চলেছে। আর তেলের যেই দাম, তাতে মেশিন চালিয়েও পানি নিতে পারবো না।

আরেক কৃষক সুজা শেখ বলেন, বরাইলদহ বাখেরা তারাউজিয়াল জিকে খালের পানি তেমন একটা আসে না। অথচ প্রতি বছর খাল কতৃপক্ষ এসে খালের দুই পাড় পরিস্কার করে চলে যায়। এ অঞ্চলের খালে পানি কৃষকের কোনো উপকারেই আসে না। শুধু শুধু সরকারের অর্থ ব্যায় করছে কতৃপক্ষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিকে প্রকল্পের উপ-সহকারী মো. তৌফিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কুষ্টিয়া ভেড়ামারা থেকে লাঙ্গাবাদ পর্যন্ত জিকে খালে পানি যায়। কিন্তু শ্রীপুর উপজেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত পানি যায় না। খালের সেচ পাম্পের জটিলতার কারেণ এ সমস্যা হচ্ছে। শ্রীপুর বরাইলিদহ এলাকায় নতুন পাম্প স্থাপন করা গেলে এ অঞ্চলের কৃষকরা আর পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন না।

মাগুরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এ.কে এম মোমিনুল ইসলাম বলেন, মাগুরায় জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার খাল রয়েছে। জিকে খালের পানি আসে মূলত ভেড়ামারা পাম্প স্টেশন থেকে। দুরত্ব বেশি হওয়ায় মাগুরা পর্যন্ত ওই খালে পানি আসছে না। এছাড়া ভেড়ামারায় মাত্র একটি সেচ পাম্প দিয়েই প্রকল্পের পানি দেওয়ার কাজ চলছে। তিনটি পাম্পের মধ্যে মাত্র একটি এখন ভালো আছে। এটির জন্যেও মাগুরা পর্যন্ত খালে পানি পৌচ্ছাছে না।

তিনি আরও বলেন, জিকে আবাসন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। নষ্ট পাম্পগুলো মেরামতের বিষয়ে জাপানি দুইটি কোম্পানির সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করি পাম্প দুইটি মেরামত করা হলে মাগুরার মানুষ জিকে খালের সুবিধা পাবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।