ঢাকা, রবিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জুন ২০২৪, ২২ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

যাত্রীসেবায় নতুনত্ব নিয়ে আসছে বিলাসবহুল সুন্দরবন-১৬

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২২
যাত্রীসেবায় নতুনত্ব নিয়ে আসছে বিলাসবহুল সুন্দরবন-১৬

বরিশাল: নৌপথে যাত্রাকে আরও নিরাপদ, আরমদায়ক ও বিলাসবহুল করতে বাহারি নকশায় তৈরি প্রযুক্তি নির্ভর ‘চারতলা’ এমভি সুন্দরবন-১৬ যুক্ত হবে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে।  এরইমধ্যে ড্রাইডক ইয়ার্ড থেকে নামানো নৌযানটি পানিতে ভাসিয়ে শেষ মুহূর্তের কাজগুলো সম্পাদক করা হচ্ছে।

সেসঙ্গে প্রথম পর্যায়ে ট্রাইলরানও সম্পন্ন করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বর-নভেম্বরের মধ্যে নৌযানটি যাত্রীসেবায় নামছে ঢাকা-বরিশাল রুটে।

বলা হচ্ছে, নৌযানটি শুধু সুন্দরবন নেভিগেশন গ্রুপেরই নয়, দক্ষিণাঞ্চলসহ গোটা দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের এ যাবৎকালের সব থেকে বড় আকারের যাত্রীবাহী লঞ্চ এটি। সুন্দরবন নেভিগেশন গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, চারতলা বিশিষ্ট এমভি সুন্দরবন-১৬ লঞ্চটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ২০০টির ওপরে কেবিন রয়েছে। এর প্রতিটিতে আলাদা করে টেলিভিশন থাকবে যাত্রীদের বিনোদনের জন্য। কেবিনগুলোর মধ্যে ছয়টি বাহারি নকশার ভিআইপি কেবিন রয়েছে। এছাড়া সিঙ্গেল, ডাবল, ফ্যামিলি, সেমি ভিআইপি, ডুপ্লেক্স কেবিনও রয়েছে লঞ্চটিতে।  

সুন্দরবন নেভিগেশন গ্রুপের অন্য লঞ্চগুলোর মতো এটিতেও রাখা হয়েছে সোফা জোন। যেখানে সংযুক্ত ২৫টি সোফায় শুয়ে-বসে যেতে পারবেন যাত্রীরা। এছাড়া তিনতলায় অজুখানাসহ রাখা হয়েছে নামাজের আলাদা স্থান। ভিআইপি, সেমি-ভিআইডি, ডুপ্লেক্স ও কিছু ফ্যামিলি কেবিনের ভেতরে টয়লেটের ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি শ্রেণী ও জোনভেদে রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা।

বয়স্ক ও চলাচলে অক্ষমদের জন্য লিফটের ব্যবস্থা থাকা লঞ্চটিতে রয়েছে বিশাল বারান্দা। সেসঙ্গে এ লঞ্চটিকে নিরাপত্তার স্বার্থে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখা হবে। বারান্দার গ্রিলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে বাহারি নকশার ছোট ছোট চেয়ার। এছাড়া ভিআইপি জোনে রাখা হয়েছে আলাদা বসা ও খাওয়ার ব্যবস্থা। ডেক শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য ক্যান্টিন ও ডাইনিং ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি দো-তিনতলায় আলাদা ডাইনিং রুম রাখা হয়েছে। সেসঙ্গে তিনতলায় টি-স্টোর এবং চারতলায় রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেখানে বসে খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। আর প্রতিটি ক্যান্টিনেই অর্ডার দিলে মিলবে বাহারি ধরন ও স্বাদের খাবার।

প্রায় ৩২০ ফুট লম্বা ও ৫৮ ফুটের মতো প্রস্থ লঞ্চটির নিচতলার ডেকের নিচের অংশকে নিরাপদ করতে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যাতে কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পুরো লোয়ার ডেকে পানি প্রবেশ না করতে পারে।

এতে ক্ষতিগ্রস্ত অংশে পানি প্রবেশ করলেও লঞ্চটি ভেসে থাকতে পারবে। এছাড়া ডেক থেকে শুরু করে প্রতিটি তলার ভেতরের প্রতিটি স্থানের নকশায় আনা হয়েছে নতুনত্ব। যদিও বাহির থেকে লঞ্চটি দেখতে বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলকারী এমভি সুন্দরবন ১০ ও ১১ এর মতোই।  

বড় আকারের প্রপেলার দিয়ে লঞ্চটিকে চালনা করে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যবহার করা হচ্ছে জাপানের বিখ্যাত ডিইজাটসুর ইঞ্চিন। আর আনুমানিক সাত হাজারের মতো আলোকবাতিসহ কয়েকশত ফ্যান ও এসি চালনার জন্য বেশ কয়েকটি জেনারেটর ইঞ্জিনও থাকছে লঞ্চটিতে। পণ্য ও যাত্রীর ধারণক্ষমতা নির্ধারণ না হলেও স্বাভাবিক সময়ে দেড় থেকে দুই হাজার যাত্রী ধারণ করবে লঞ্চটি, আর বিশেষ সময়ে অর্থাৎ যাত্রী চাপ থেকে এর কয়েকগুণ যাত্রী বহন করতে সক্ষম হবে লঞ্চটি।
এদিকে দক্ষ চালক, মাস্টার, ড্রাইভার, সুকানী, গ্রিজারের মাধ্যমে লঞ্চ পরিচালনার জন্য সংযুক্ত করা হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। যেখানে হাইড্রোলিকসসহ ম্যানুয়াল চালনার ব্যবস্থা ছাড়ায় সংযোজন করা হয়েছে আধুনিক রাডার, ইকোসাউন্ডার, ভিএইচএফ (যোগাযোগ স্থাপনের রেডিও)ও হর্ন।  

 সুন্দরবন নেভিগেশন গ্রুপের চেযারম্যান আলহাজ সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন,সুন্দরবন-১৬ যাত্রীসেবায় যুক্ত হলে এটিই হবে সব থেকে বৃহৎ যাত্রীবাহী নৌযান। আধুনিক প্রযুক্তি ও নকশার এ লঞ্চটিতে সব থেকে চেষ্টা করেছি আগের লঞ্চগুলোর থেকে যাত্রীদের জন্য ভালো সুযোগ-সুবিধা রাখার। আশা করি, বর্তমান পরিস্থিতি লঞ্চটিকে সাদরে গ্রহণ করবে নৌপথের যাত্রীরা।

তবে কবে নাগাদ নৌযান বরিশাল-ঢাকা রুটে যুক্ত হচ্ছে সেটি নিশ্চিত করে না বললেও সেপ্টেম্বর-নভেম্বরের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। যদিও লঞ্চটিকে অনেক আগেই তৈরি করা হয়েছিলো এবং গেল পহেলা জুলাই দোআ-মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় রিভার ট্রাইলও দেওয়া হয়েছিল। তবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর নৌপথে যাত্রী হ্রাস ও জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ার কারণে ভাড়া বাড়ায় নতুন লঞ্চ নামানোয় ঝুঁকির কথা জানিয়েছেন মালিকরা।

সেক্ষেত্রে সুন্দরবন-১৬ লঞ্চটিতে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে তাতে আশানুরুপ যাত্রী নিয়ে সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারবে বলে মনে করছেন ওই গ্রুপের পরিচালকরা।
এদিকে নতুন লঞ্চ মানেই ঢাকা-বরিশাল রুটের জন্য সু-খবর বয়ে আনবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২২
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।