ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মোংলা বন্দর চেয়ারম্যানের অপসারণ ও শাস্তি দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২২
মোংলা বন্দর চেয়ারম্যানের অপসারণ ও শাস্তি দাবি

ঢাকা: খুলনার দাকোপে বানিশান্তার তিন ফসলি জমিতে বালি ফেলে শস্য উৎপাদন ধ্বংস করার ভুল সিদ্ধান্তের জন্য মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যানের অপসারণ ও শাস্তি দাবি করেছেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল।

বুধবার (২৪ আগস্ট)  জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ৯টি মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন আয়োজিত নাগরিক সভায় তিনি এ দাবি করেন।

সুলতানা কামাল বলেন, উন্নয়ন হলো উপায়। উন্নয়ন কোনো জাতির লক্ষ্য হতে পারে না। লক্ষ্য হবে জনস্বার্থ মানবাধিকার ও জনকল্যাণ। জনগণের জন্যই উন্নয়ন। আজ কর্তাব্যাক্তিরা উন্নয়নকেই লক্ষ্য হিসেবে ধরে নিয়েছে। জনস্বার্থকে আমরা উন্নয়নের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছি।

তিনি বলেন, জনস্বার্থ বিবেচনা না করে নীতি নির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এই উন্নয়ন আমাদেরকে বিপদে ফেলেছে, বিরক্ত করছে। বানিশান্তার আন্দোলনকে বাপা নিজেদের আন্দোলন মনে করে এবং আমরা তাদের পাশে আছি। এ ধরনের জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত ও অসদাচরণের জন্য মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসার অপসারণ ও গ্রেফতার দাবি করছি। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়, কিন্তু তাকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আমরা অনতিবিলম্বে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি।

নিজেরা করি সংগঠনের সমন্বয়ক খুশী কবির বলেন, দেখানোর জন্য উন্নয়ন করা হলে সেটি উন্নয়ন নয়। জনগণের ক্ষতি করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে সেটি জনস্বার্থ বিরোধী এবং এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষির উন্নয়নের কথা বলেন। কিন্তু এসব নীতিনির্ধারকরা হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবজ্ঞা করছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা এগুলো করার স্পর্ধা দেখান।

তিনি আরও বলেন, সবাই গণতন্ত্র বলতে শুধু সঠিকভাবে ভোট দেওয়াকে মনে করে। যাদেরকে নির্বাচিত করা হয় তারা জবাবদিহি করবে কিনা সেটা দেখা হয় না। জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি না থাকায় তারা বিভিন্ন গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রবন্ধে বলেন, উপকূলীয় খুলনা একটি কৃষি প্রধান জেলা। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর নদী ড্রেজিং সংক্রান্ত ‘মোংলা বন্দর ইনারবার ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের অধীন পশুর নদীর ড্রেজিং করা বালুমাটি ফেলার জন্য ১০০০ একর জমি হুকুম দখলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে খুলনার দাকোপ উপজেলাধীন বানীশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর তিন ফসলী উর্বর কৃষিজমি। বানীশান্তার কৃষিশ্রমিকদের সুরক্ষিত রাখতে এবং কৃষি ব্যবস্থা উন্নততর করার উদ্দেশ্যে সরকার বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বানীশান্তাসহ ৩৩ নম্বর পোল্ডারে ২০১৫ সালেন ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কোস্টাল এমব্যান্ডমেন্ট ইরিগেশন প্রকল্পের আওতায় বাঁধ দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বানীশান্তায় এখন তিন ফসল আবাদ হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ কৃষি জমিতে আষাঢ় থেকে পৌষ মাসে আমন, পৌষ থেকে বৈশাখ মাসে তরমুজ, বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত আউশ ধান ও অন্যান্য রবিশস্য চাষ করা হয়। মাটি ফেলার জন্য প্রস্তাবিত জমিতে শুধুমাত্র শস্য চাষই ব্যহত হবে তা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে এলাকার প্রান্তিক মানুষদের জীবন জীবিকার অন্যতম সংস্থান পুকুর, জলাশয়, মৎস্য সম্পদ ও গবাদি প্রাণী।

ফলশ্রুতিতে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হবে অন্তত ১৫০০ ধর্মীয় সংখ্যালঘু-সনাতনী ধর্মের পরিবার। ক্ষতিগ্রস্তরা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানালে তারা স্থানীয়দের পক্ষে মত দেয়। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বানীশান্তা এলাকার তিন ফসলি কৃষি জমিতে পরবর্তীতে মাটি ভরাটের উদ্যোগ নিলে সেখানে তীব্র জনরোষের সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসী নদী ড্রেজিংয়ের বিপক্ষে নয়। কিন্তু তা কৃষকের স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে এবং একটি কৃষিব্যবস্থা ও সমাজ ভেঙে দিয়ে হতে পারে না। বন্দর কর্তৃপক্ষ দুই বছরের জন্য উর্বর কৃষিজমি হুকুম দখলের প্রস্তাব করলেও বাস্তবতা হচ্ছে মাটি ভরাটের পর এ জমি আর কোনো কৃষি কাজের উপযোগী থাকবে না। ড্রেজিংকৃত মাটি, পলি মাটি ফেললে সে জমি উর্বর হবে এবং কৃষক সে মাটি বিক্রি করে লাভবান হবে এমন দাবি সম্পূৰ্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং বাস্তবতা বিবর্জিত।

গত ২০১১ এবং ২০২১ এ চিলাতে ফেলা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ড্রেজিংয়ের মাটিতে ফসল তো দূরে থাক, কোনো আগাছাও জন্মায়নি। চিলার মত বানীশান্তাতেও মাটি ফেললে এলাকার জনগোষ্ঠী জীবন ও জীবিকা হারিয়ে স্থানান্তরে বাধ্য হবে, যা অসাংবিধানিক ও অসংবেদনশীল।

নাগরিক সভায় বানিশান্তার ভুক্তভোগীরা তাদের সমস্যা ও অভিযোগ গলো বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, শামসুল হুদা, মনীন্দ্র কুমার নাথ, সোহরাব হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘন্টা, ২৪ আগস্ট, ২০২২
এমকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।