ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আধুনিক সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক অমিত হাবিব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২
আধুনিক সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক অমিত হাবিব দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিব স্মরণে ‘অসীমে অমিত’ শিরোনামে স্মরণসভা | ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: বৃহস্পতিবারে জন্ম বলে গ্রামের মানুষ তাঁকে বিষু বলে ডাকতেন। এই বিষু বা অমিত হাবিব ছিলেন আধুনিক সাংবাদিকতার অন্যতম পথপ্রদর্শক।

তিনি নিজে যেমন আধুনিক সাংবাদিকতার চর্চা করতেন ঠিক একইভাবে এ ধারার অনেক সাংবাদিককে তৈরি করেছেন। তিনি চলে গেলেও তার কর্মের মধ্যে দিয়ে তাঁকে সাংবাদিক সমাজ সব সময় স্মরণ করবে।

বরেণ্য সাংবাদিক ও দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিব স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এভাবেই তাকে মূল্যায়ন করা হয়।

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘অসীমে অমিত’ শিরোনামে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। দেশ রূপান্তর পত্রিকা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।



স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এতে অমিত হাবিবকে কথামালায় স্মরণ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সুকান্ত গুপ্ত অলোক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, জাতীয় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স ম গোলাম কিবরিয়া, দেশ রূপান্তরের প্রকাশক ও কো-চেয়ারম্যান মাহের আলী খান রাতুল, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন, লেখক কলামিস্ট ড. এমএ মোমেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী।

পরিবারের পক্ষ থেকে কথা বলেন অমিত হাবিবের ছোট ভাই ফয়জুল হাবিব রাঙা। সঞ্চালনা করেন আহমেদ মনিরুদ্দিন তপু। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাঁশিতে করুণ সুর তোলেন সৌরভ সরকার।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর। অমিত হাবিব সে হিসেবে অনেক আগেই চলে গেলেন। কিছু মানুষ সমাজকে সমৃদ্ধ করে যায়, অমিত হাবিব তেমন একজন ছিলেন। তিনি সাংবাদিকতাকে, সংবাদমাধ্যমকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। আমার কাজের জন্য, দলের প্রচার সম্পাদক হিসেবে কোনো পত্রিকা কেমন তা আমাকে দেখতে হয়েছে। এই সময়ে তাঁর কাজের মাধ্যমে তাঁর সাথে আমার পরিচয়। একটি নতুন পত্রিকাকে দাঁড় করানোর যে মুন্সিয়ানা বা পত্রিকাকে সৃজনশীল করা, সেটি তিনি করে দেখিয়েছেন। নতুন অনেক পত্রিকার মাঝে তিনি তার পত্রিকাকে নির্দিষ্টভাবে পরিচিত করিয়েছেন। সমাজের অনেক দিক আছে যেগুলোর দিকে সমাজ বা রাষ্ট্র তাকায় না। সংবাদমাধ্যমের কাজ সেগুলোতে সামাজের দৃষ্টি নেওয়া। সেটিকেই মুন্সিয়ানা বলে। তিনি সেটি করতে পেরেছেন।



তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিটি মানুষের জীবনের একটা গল্প থাকে। রাস্তার ধারে বিড়বিড় করে চলা পাগল বলে আখ্যায়িত মানুষেরও বেদনার গল্প থাকে। যেদিকে সমাজ-রাষ্ট্র তাকানোর ফুরসৎ পায় না, সেই সব গল্প তুলে এনে যে সাংবাদিকরা আমাদের দৃষ্টি খুলে দেয়, অমিত হাবিব শুধু তাদেরই একজন নন, তিনি ছিলেন তেমন সাংবাদিক তৈরির কারিগরও। মানুষের জীবন বুদবুদের মতো হলেও কিছু কিছু মানুষ তাদের কর্ম দিয়ে জগত-সমাজকে সমৃদ্ধ করে যান, অমিত হাবিব তাদেরই একজন। অমিত হাবিব আমাদের সাংবাদিকতাকে সমৃদ্ধ করেছেন, সংবাদজগতের প্রেরণা ছিলেন, প্রেরণা হয়েই থাকবেন। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, অমিত হাবিব যৌক্তিক কাজগুলো করতে পছন্দ করতেন। সমাজতন্ত্রের ভাবধারা ছিল তার আদর্শ। সমাজ পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তিনি কলম ধরেছিলেন তার অনেকটাই পূর্ণ হয়েছে। সাংবাদিকরা সরকারের ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেন। এই ভুল যদি ধরিয়ে দেওয়া না হতো তাহলে সংশোধনের সুযোগ থাকতো না। তরুণ সাংবাদিকরা অমিত হাবিবের কর্মনিষ্ঠার পদাঙ্ক অনুসরণ করলে সাংবাদিক জগত আরও সমৃদ্ধ হবে।

ফয়জুল হাবিব রাঙা বলেন, আমাদের পরিবারের গর্ব করার মতো কয়কটি বিষয় আছে। পরিবারের অনেকেই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। আমার বাবার যোগ্য উত্তরাধিকারী ছিলেন আমার বড় ভাই অমিত হাবিব। বাবার মৃত্যুর পর তিনিই ছিলেন আমাদের পরিবারের ছায়া।

সুকান্ত গুপ্ত অলক বলেন, কর্মসূত্রে আজকের কাগজ পত্রিকায় আমাদের পরিচয়। অমিতদা ছিলেন অত্যন্ত গুণী একজন সাংবাদিক। অনেক সাংবাদিকের বিনির্মাণ তার হাতে।

মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, অমিত হাবিবের মৃত্যু সাংবাদিকতার একটা বড় ক্ষতি। ভালো সাংবাদিক হয়ে ওঠা এখন অনেক কঠিন। সবমিলিয়ে একটি ভালো সংবাদপত্র প্রতিদিন উপহার দেওয়া সহজ নয়। অমিত হাবিব তা পারতেন। অমিতের অনুপস্থিতিতে তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাঁর কাছে কাজ শেখা সাংবাদিকরা নিজেদের কাজ সৎভাবে করে যাবেন এই প্রত্যাশা আমাদের।



মামুনুর রশীদ বলেন, অমিত হাবিবের সঙ্গে আমার পরিচয় সংঘাত দিয়ে। তিনি এক সময় নাটকের সমালোচনা লিখতেন। আমাদের একটি নাটকের সমালোচনা লিখেছিলেন। তারপর তাঁর সঙ্গে আরও অনেকবার কথা হয়েছে। অমিত হাবিবের কর্মময়তাকে আমরা স্মরণ রাখবো।

ড. এম এ মোমেন বলেন, অমিত হাবিব ছিলেন একজন অপূর্ব মানুষ। তাঁর হাসিটা ছিল খুব সুন্দর। ছোট থেকে বড় সবার সঙ্গে খুব সুন্দর ব্যবহার করতেন। অমিত হাবিবের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা তিনি কোনো শত্রু তৈরি করতে পারেননি।

সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, তিনি ছিলেন অসম্ভব বন্ধুবৎসল একজন মানুষ। মানুষকে তাঁর কথা দিয়ে মাতিয়ে রাখতে পারতেন।

মোস্তফা মামুন বলেন, অমিত হাবিব ছিলেন একজন আধুনিক সাংবাদিক। এই সময়ের আধুনিক সাংবাদিক যারা আছেন তাদের অনেকেই অমিত হাবিবের সঙ্গে কাজ করেছেন। অমিত হাবিব তাদের অনেককেই তৈরি করেছেন। মানুষকে প্রভাবিত করার অসীম ক্ষমতা ছিল অমিতদার।

সভায় ‘অসীমে অমিত’ শিরোনামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এ সময় অমিত হাবিবের প্রিয় সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২২
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।