ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বৃষ্টি হলেই জলে ভাসে সিলেট!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২
বৃষ্টি হলেই জলে ভাসে সিলেট!

সিলেট: জলাবদ্ধতার কবলে পড়া যেন সিলেট নগরবাসীর নিয়তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ভারী বর্ষণ হলেই জলে ভাসে সিলেট।

বাসা-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটে ওঠে পানি। জলমগ্ন হয়ে পড়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ।
 
সোমবার (০৫ সেপ্টেম্বর) সকালেও মাত্র দু’তিন ঘণ্টার প্রবল বর্ষণের নগরের বিভিন্ন এলাকা বাসা-বাড়ি, রাস্তা-ঘাটে কোথাও হাঁটুজল, কোথাও পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পানি উঠে যায়। বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনের নোংরা পানি সড়কে-বাসাবাড়িতে উঠে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। এসব নোংরা পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় নগরবাসীকে।  
 
এদিন ভোররাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ভারী বর্ষণ হয়। অতিবর্ষণে নগরের ছড়াখালগুলো উপচে রাস্তাঘাট-বাসাবাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এ জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে দায়ি করেছেন নগরবাসী।
 
নগরের অধিকাংশ ড্রেনগুলো দিয়ে বৃষ্টির পানি টানতে পারছে না। অথচ সিলেট শহরের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীতেও ঢল নেই। এ অবস্থায় জলাবদ্ধতার জন্য সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত উন্নয়নকে দায়ী করেছেন অনেকে।  
 নগরের কেওয়াপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী মামুন আহমদ বলেন, ভোর রাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত হওয়া বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা বাসায় পানি উঠে যায়। এলাকার অনেকের বাসায় পানি উঠেছে।
 

একই এলাকার সুমন আহমদ বলেন, এলাকার বিভিন্ন বাসার নিচতলা পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনের ময়লা আবর্জনা উঠে আসে। আকস্মিক জলাবদ্ধতায় অনেকের বাসা ও দোকানের জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়।
 
নগরের পায়রা এলাকার বাসিন্দা আজমল আলী বলেন, সোমবার অল্প সময়ের বৃষ্টিতে বাসায় পানি উঠে যায়। এ সময়ে এমন জলাবদ্ধতার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। মূলত ড্রেনগুলো সংস্কার না হওয়া জলাবদ্ধতার কারণ।
 
নগরের লালাদীঘিরপাড়ের বাসিন্দা মাসুদ আহমদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের বন্যা পরিস্থিতিতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছি। তখন হয়তো সুরমার পানি বিপৎসীমার ওপরে ছিল। কিন্তু এখন তো নগরের ছড়াখালের পানি সুরমার বুকে ধারণের সক্ষমতা রয়েছে। যতই বৃষ্টি হোক এমন জলাবদ্ধতা হওয়ার কথা না। মূলত যথাযথভাবে ড্রেনেজ সংস্কার কাজ না হওয়ায় নগরবাসীকে এমন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।  
 
নগরের জলাবদ্ধতায় ছড়াখাল, ড্রেন ভরাট হওয়া ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজকে দায়ী করেছেন নগরের বাসিন্দারা। যে কারণে বৃষ্টির পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হয়ে পড়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
 

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ময়লা আবর্জনা ফেলে ড্রেনগুলোতে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে আমাদের সচেতন হতে হবে। নগরবাসী সবধরনের ময়লা আবর্জনা, পলিথিন যাতে ড্রেনে না ফেলেন। তবে অনেক স্থানে ড্রেনের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে স্বীকার করেন তিনি।
 
আওবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার (০৫ সেপ্টেম্বর) ভোররাত পৌনে ৫টা থেকে বর্জ্রসহ ভারী বর্ষণ শুরু হয়। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১০৮ দধমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরপর সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ভারী বর্ষণ হয়। আর আগেরদিন রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত মাত্র ১৩ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অল্পসময়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় নগরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।  
 
তিনি বলেন, আগের দিন রোববার ১১৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মূলত; আগের দিনের বৃষ্টির পানিতে ছড়াখাল নিমজ্জিত ছিল। এরপর আবারো ভারী বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পড়ে নগরের অনেক এলাকা। ফলে মানুষজন দুর্ভোগে পড়েন।  
 
তিনি আরও বলেন, ভারী বর্ষণ মঙ্গলবার সকালেও হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া আগামী ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর ফের ভারি বর্ষণ হতে পারে। আর এ মাসের শেষের দিকে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হবে মৌসুমের শেষ বৃষ্টিপাত। তাছাড়া সিলেটের উজানে বৃষ্টিপাত মোটামোটি থাকলেও সুনামগঞ্জর উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জি এলাকায় আকাশে মেঘ বেশি থাকায় ভারী বর্ষণে বৃষ্টির পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরে  জলাবদ্ধতায় রোগীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যদিও হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটেনি।  

এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের মিরেরময়দান, কেওয়াপাড়া, কাজলশাহ, লালাদীঘির পাড়, লামাবাজার, তালতলা, দরগাহ রাজারগলি এলাকা, আম্বরখানা, শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, সেনপাড়া, সোনারপাড়া, তোপখানা এলাকায় অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২২
এনইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।