জীবনে অনেকবার টিকিট ছাড়া ট্রেন ভ্রমণ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত দুদক কর্মকর্তা এমদাদুল হক (৬৫)। গতবছর অবসরে যাওয়ার পর সময় হয়েছে অনেক কিছু চিন্তা করার।
সোমবার (০৫ সেপ্টেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে আসনবিহীন টিকিট কাটার মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করেন এমদাদুল হক। এ সময় তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন প্রধান বুকিং সহকারীর অফিসে বসিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। সেখানে স্টেশন মাস্টার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।
এমদাদুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কনিকাড়া গ্রামের শামসুল হকের ছেলে। জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইলে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক এমদাদুল দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তিনি কর্মজীবন থেকে অবসরে যান।
জানা গেছে, জীবনে যতবার বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করেছিলেন তার হিসেব করে রেখেছিলেন এমদাদুল। দেনার দায় থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশ রেলওয়েকে হিসাব করে দুই হাজার ৫৩০ টাকা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
এমদাদুল হকের বড় ছেলে ইমরান গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বাবা সৎভাবে জীবনযাপন করেন। অন্য কেউ মনে কষ্ট পাবেন এমন কাজ তিনি কখনও করেননি। কারও কাছে এক টাকা ঋণ থাকলেও তাকে খুঁজে বের করে পরিশোধ করেন।
তিনি আরও বলেন, শেষের দিকে বাবা দুদকের হেডকোয়ার্টারে কর্মরত ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা ট্রেনে অনেকবার যাতায়াত করেছেন। সেসময় বিভিন্ন কারণে তিনি ট্রেনে টিকিট না কেটে আসা-যাওয়া করেছেন। কিন্তু যতবার তিনি ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করেছেন, তার হিসেব তিনি করে রেখেছিলেন। আর সেই হিসেব অনুযায়ী তিনি সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে টাকা পরিশোধ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী কবির হোসেন তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্টেশন কাউন্টারে এক ব্যক্তি আসেন বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণের টাকা পরিশোধ করবেন বলে। তিনি জানান যে, আগে বিভিন্ন সময়ে টিকিট না কেটে ভ্রমণের হিসেব তার কাছে আছে। সে হিসাবে তিনি দুই হাজার ৫৩০ টাকা রেলওয়েকে দিতে চান। তখন স্টেশন বুকিং কাউন্টার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-চট্টগ্রাম পর্যন্ত মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেনে দুই হাজার ৫৩০ টাকা সমমূল্যের আসনবিহীন টিকিট ইস্যু করে দেওয়া হয়। পরে উনাকে স্টেশন প্রধান বুকিং সহকারীর অফিসে বসিয়ে আপ্যায়ন এবং ধন্যবাদ দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, এমদাদুল হক নতুন প্রজন্মকে একটি শিক্ষা দিয়ে গেলেন যে রেলে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা অন্যায়। উনি সবার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। তার ট্রেন ভ্রমণে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করব।
স্টেশন টিকিট বুকিং সহকারী দিদার মোল্লা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেনে দুই হাজার ৫৩০ টাকা সমমূল্যের আসনবিহীন টিকেট ইস্যু করা হয় এমদাদুল হকের নামে। তিনি সেই টাকা পরিশোধ করেছেন।
এমদাদুল হক বলেন, যতো পূণ্যই করি না কেন এই দেনার দায় তো কোনো পূণ্য দিয়ে শোধ করার উপায় নেই। তাই সরাসরি রেলের খাতেই জমা দিয়ে দিলাম। জানি না তাতে আমার দায় মুক্তি হবে কি না। তবে মানষিক প্রশান্তি পাবো।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২২
এফআর