ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সাধারণ পদ্ধতিতে ফল-সবজি থেকে দূর হবে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২
সাধারণ পদ্ধতিতে ফল-সবজি থেকে দূর হবে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ

ঢাকা: রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের পর আগেভাগেই ফসল সংগ্রহ করলে বিষাক্ত উপাদান থেকে যেতে পারে। এ অবস্থায় কয়েকটি সাধারণ পদ্ধতি ব্যবহার করে ফল-মূল ও শাকসবজি থেকে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সুলতান আহমেদ।

তিনি বলেন, পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ হতে ফসলকে রক্ষা করা ও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদন ধরে রাখতে কৃষকরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করেন। এ মধ্যে রয়েছে কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক ওষুধ। এ সমস্ত রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশে এবং জনস্বাস্থ্যে নানারূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে ফসল সংগ্রহ করলে রাসায়নিক বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ থেকে যেতে পারে। এমন অবস্থায় সাধারণ পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব সহজেই ফল-মূল ও শাকসবজি নিরাপদ খাদ্য হিসেবে পাওয়া যায়।

ড. মো. সুলতান আহমেদ বলেন, ফল-মূল, শাকসবজি ইত্যাদি খাদ্য দ্রব্য চলমান অথবা স্থায়ী পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করা যায়। এগুলো ধোয়ার সময় যদি ১ মিনিট হাত দিয়ে ভালভাবে ফল-মূল, শাকসবজি পরিষ্কার করা হয় তবে এ পদ্ধতির কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া লবণ পানির মিশ্রণে ফল-মূল, শাকসবজি ডুবিয়ে রাখলে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পায়। এক্ষেত্রে ১ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম বা ২ চা চামচ খাবার লবণ (২ শতাংশ লবণ-পানির দ্রবণ) মিশিয়ে ১৫ মিনিট পর্যন্ত ফল-মূল, শাকসবজি ডুবিয়ে রাখলে বালাইনাশকের ক্রিয়ার ধরনের উপর ভিত্তি করে শতকরা ৩০-৮০ ভাগ পর্যন্ত বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করা যায়।

এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও বলেন, সবজির বাইরের পাতা এবং ফল-মূল ইত্যাদির বাইরের আবরণে তুলনামূলক বেশি বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ উপস্থিত থাকে। কাজেই যদি ফল-মূল এবং সবজির বাইরের আবরণটি দূর করা হয় তবে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। খোসা ছাড়ানোর মাধ্যমে প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করা যায়। এছাড়া পরিমিত তাপমাত্রায় রান্নার উপযোগী শাকসবজি রান্না করার মাধ্যমে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর হয়। এ পদ্ধতির কার্যকারিতা নির্ভর করে রান্নার সময়কাল, তাপমাত্রার পরিমাণ, খাদ্য দ্রব্যে পানি সংযোজনের পরিমাণ এবং রান্নার ধরণ (খোলা বা বন্ধ) ইত্যাদির ওপর।

গত রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় ফুড অ্যান্ড কেমিক্যাল ল্যাব এক্সপো ২০২২। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটিতে দিনব্যাপী চলে এই আয়োজন। এক্সপো উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধারণ চন্দ্র মজুমদার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং মার্কিন কৃষি বিভাগ এই এক্সপোর আয়োজন করে। এক্সপোয় নিজেদের স্টল থেকে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সুলতান আহমেদ।

বাংলানিউজকে সুলতান বলেন, ফসল উৎপাদন এবং সংরক্ষণের যে কার্যক্রম, তাতে রোগ ছড়াবে এটাই স্বাভাবিক। এগুলো দমন করতে কেমিক্যাল বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এর মাত্রা ঠিক রেখে সঠিক সময়ে ব্যবহারের জন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এছাড়া প্রতিটি কীটনাশকই ফসলে দেওয়ার পর একটা অপেক্ষমাণ সময় থাকে। কীটনাশকের শ্রেণিভেদে এই সময় পাঁচ থেকে ৩০ দিন। কীটনাশক দেওয়ার পর সময় পার করে যদি ফসল বা সবজি ব্যবহার করা হয়, তাহলে ফসল নিরাপদ থাকবে।

বর্তমানে খাদ্য নিরাপদ রাখতে রাসায়নিকের পরিবর্তে জৈব কীটনাশক ব্যবহারে সকলকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। গত ৫ বছরে এ বিষয়ক ৩০টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং এগুলো ব্যবহার করলে নিরাপদ ফল-শাক-সবজি উৎপাদন নিশ্চিত হবে। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে এসব প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান সুলতান আহমেদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২
এইচএমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।