ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অপরাধ প্রবণতা ঠেকাতে র‌্যাবের ‘নবজাগরণ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
অপরাধ প্রবণতা ঠেকাতে র‌্যাবের  ‘নবজাগরণ’

কক্সবাজার থেকে: অপরাধ ঠেকাতে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) প্রতিরোধমূলক নতুন কর্মসূচি ‘নবজাগরণ’। ‘অপরাধকে না বলুন’ স্লোগানকে সামনে রেখে অপরাধের ঝুঁকিতে থাকা তরুণদের স্বাবলম্বী করতে ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ধর্ষণকারী, নৈরাজ্যকারী, বিভিন্ন মামলার আসামি, অপহরণকারী, মানবপাচারকারী, জালনোট কারবারি, ছিনতাইকারী, ডাকাতসহ বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে র‌্যাব।

এবার সমাজকে অপরাধমুক্ত রাখতে কক্সবাজারে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় থাকা ৩৬ জন তরুণ-তরুণীকে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে র‌্যাবের ‘নবজাগরণ’ নামে নতুন প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

যা পর্যায়ক্রমে কক্সবাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অপরাধের ঝুঁকিতে থাকা লোকদের চিহ্নিত করে এ প্রকল্পের আওতায় এনে সুন্দর, স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য উৎসাহিত করা হবে।

দেশের অপরাধ কমাতে বিশেষায়িত এ বাহিনীটি বিভিন্ন সময়ে অপরাধ পর্যালোচনা ও গবেষণার মাধ্যমে যে কর্মপরিকল্পনা করে থাকে, তারই ধারাবাহিকতায় চালু হয় নতুন প্রকল্প ‘নবজাগরণ’। অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় এনে বিভিন্নভাবে অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা অনেকাংশে কমবে বলে মনে করছে র‌্যাব।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া এবং বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারীদের স্বাবলম্বী করার প্রয়াসও হাতে নেওয়া হয়েছে।

‘নবজাগরণ’ হলো র‌্যাবের আর্লি ইন্টারভেনশন। এ প্রকল্পে যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে, তারা এখনো অপরাধে জড়াননি। তবে জড়ানোর ঝুঁকিতে আছেন।

র‌্যাব সূত্র জানায়, এর আগে ‘নবদিগন্তের পথে’ নামের প্রকল্পে র‌্যাব যেসব কার্যক্রম করেছে, সেগুলো ছিল পোস্ট ইন্টারভেনশন। সে কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে ৪২১ জন অপরাধীকে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন ১৬ জন জঙ্গি এবং সুন্দরবন ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৪০৫ জন জলদস্যু।

আর নবজাগরণের আওতায় সমাজের পিছিয়ে পড়া, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া এবং বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করাই এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য।

যাদের পাইলট প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়েছে, তাদের সাফল্য অনুপ্রেরণা জোগাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে।

তাদের স্বাবলম্বী করতে প্রাথমিক পর্যায়ে পর্যটননির্ভর পেশা হোটেল-রেস্টুরেন্টে সার্ভিস বয়, ফটোগ্রাফার, ট্যুরিস্ট গাইড, ড্রাইভিং গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পরিবারের নারী সদস্যদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো পরিবার স্বাবলম্বী হবে।

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কক্সবাজারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ও র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ৩৬ জন তরুণ-তরুণীকে স্বাবলম্বী করতে তাদের হাতে বিশেষ এই প্রণোদনা তুলে দেবেন।

এ প্রসঙ্গে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নবজাগরণের ব্যাপ্তি পর্যায়ক্রমে বাড়বে। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে গ্রাম্য বৈঠক, কমিউনিটি বেজড নানা কর্মসূচি, সভা-সেমিনার এবং মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। র‌্যাবের নতুন এই কার্যক্রমে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা যুক্ত হয়েছেন।

তিনি বলেন, পাইলট প্রকল্পে ৩৬ জনকে নির্বাচিত করা হয়। প্রশিক্ষণের জন্য ৪-৫ জন করে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করা হয়। যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে, তারা অপরাধের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য আইকন হবেন। ঝুঁকিপূর্ণ লোকগুলো বৈধ পেশায় যুক্ত হতে উৎসাহ পেয়েছেন।

যাদের পাইলট প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে, তাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছর। তারা কোনো উৎপাদনশীল কাজে জড়িত না। কেউ স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে, কেউ বেকার, কেউ অল্প শিক্ষিত। আবার কেউ ভবঘুরে টাইপের। কেউ ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করলেও মানসম্মতভাবে ছবি তুলতে পারেন না। তাদের পরিবারের সদস্যদেরও নবজাগরণের আওতায় আনা হয়েছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর রইসুল আজম মনি বলেন, র‌্যাবের কর্মপন্থায় যুক্ত হওয়া ‘নবজাগরণ’ সমাজের অপরাধপ্রবণতা কমাতে অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, নবজাগরণের মাধ্যমে যাদের সমাজের মূল ধারায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাদের কিছু প্রশিক্ষণ র‌্যাব কর্মকর্তারা সরাসরি দিয়েছেন। বাকি প্রশিক্ষণ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
পিএম/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।