খুলনা: গত কয়েকদিন ধরে খুলনার বাসিন্দা রহিমা বেগমের অন্তর্ধান নিয়ে নানা ধরণের জল্পনা চলছিল দেশজুড়ে। তিনি গুম হয়েছিলেন, নাকি তাকে অপহরণ করা হয়েছিল; নাকি নিজেই নিজেকে আড়াল করেছিলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছিল তুমুল আলোচনা।
রহিমার অন্তর্ধান ও উদ্ধার পরবর্তী অবস্থায় তাকে অপহরণের বিষয়টি বেশ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কিন্তু পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনার দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা থেকে তাকে অপহরণের এমন কোনো তথ্য বা প্রমাণ তারা পাননি।
রহিমা বেগম একেক সময় একেক তথ্য দিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। এও বলেন, রহিমা বেগম যদি মিথ্যার আশ্রয় নেন এবং তার অন্তর্ধান সাজানো হয়, তবে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার বলেন, রহিমা বেগম জানিয়েছিলেন গত ২৭ আগস্ট রাতে অপহৃত হওয়ার পর যখন তার হুঁশ ফেরে, নিজেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আবিষ্কার করেন তিনি। আশপাশের সাইনবোর্ডের লেখা পরে তিনি এটি বুঝতে পারেন। সেখান থেকে তিনি বান্দরবন এলাকার মনি বেগমের ভাতের হোটেলে চাকরি করেছেন। হোটেল মালিক তাকে স্থানীয় একটি ক্যাম্পে চাকরি দেওয়ার কথাও নাকি বলেন। কিন্তু এর জন্য তার জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজন।
এসব নিতে তিনি সরাসরি চলে আসেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে তার পূর্ব পরিচিত কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে। সেখানে অবস্থান করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর যান সৈয়দপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হকের কাছে। সেখান তিনি জানান, তার জন্ম বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে। কর্মের তাগিদে তিনি বাগেরহাটে থাকেন। সেখানে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। কিন্তু চেয়ারম্যানের সন্দেহ হলে রহিমা জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
খুলনা পিবিআই প্রধান আরও বলেন, রহিমা বেগম প্রতিটি স্থানেই বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়েছেন। আদালত ও আমাদের কাছেও তিনি ভুল ব্যাখ্যা ও তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্ত চলছে। অপহরণে এ ঘটনা মিথ্যা হলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে রহিমার অন্তর্ধান হয়। এ নিয়ে তারপর থেকে নানা নাটকীয়তা দেখে মেধের মানুষ। নিখোঁজের ঘটনায় দৌলতপুর থানায় মামলা করে তার সন্তানরা। এতে গ্রেফতার হন ছয়জন। পুলিশের কাছ থেকে পরে মামলাটি যায় পিবিআইর হাতে। গত ২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, তিনি তার মায়ের লাশ পেয়েছেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালমারি থেকে রহিমা বেগমকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে বোয়ালমারিতেই অবস্থান করছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২
এমআরএম/এমজে