নাটোর: নাটোরের গুরুদাসপুরে জামাইয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে কুলসুম বেওয়া (৬৫) নামে এক বৃদ্ধাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় উল্টো নির্যাতিতার নামেই মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকালে গুরুদাসপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ইমরান হোসেন বাদী হয়ে নির্যাতিতা ওই বৃদ্ধা ও তার জামাতার নামে ২৯০ ধারায় মামলা দিয়ে দুপুরে আদালতে পাঠান।
বিকেলে শুনানি শেষে নাটোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুন্নাহার রীটা জেলা আইনজীবী সমিতির জিম্মায় উভয়কে জামিন দেন। নির্যাতিতা কুলসুম বেওয়া ওই এলাকার মৃত সুরত আলীর স্ত্রী এবং জামাইয়ের নাম আবুল কাশেম।
নাটোর জজ কোর্টের পাবলিস প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, কুলসুম বেগমের স্বামী সুরত আলী অনেক আগে মারা গেছেন। তার চারটি মেয়ে, কোনো ছেলে সন্তান নেই। তাই মেঝো মেয়ে রফেলার বিয়ের পর থেকেই তার নিজ বাড়িতে জামাই নিয়ে বসবাস করেন।
জামাইয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) দিনগত রাতে গুরুদাসপুর উপজেলার পমপাথুরিয়া গ্রামের ওই বৃদ্ধাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালায় রতন আলী ও উজ্জল হোসেন নামে স্থানীয় দুই ব্যক্তি। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ বৃদ্ধা ও তার জামাই আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে থানায় নিয়ে নির্যাতন কারীদের বাদ দিয়ে উল্টো নির্যাতিতা ও তার জামাইয়ের নামে মামলা করে পুলিশ।
কুলসুম বেগম বলেন, আমার ছোট মেয়ের বাচ্চা হওয়ার কারণে মেঝো মেয়ে রফেলাসহ অন্য মেয়েরা তাকে দেখতে হাসপাতালে যায়। বাসায় আমি ও জামাই ছিলাম। হঠাৎ সন্ধ্যার দিকে গায়ে জ্বর এলে বিষয়টি জামাইকে বলি। এ অবস্থায় জামাই বাজারে গিয়ে ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ কিনে এনে আমাকে দিতে ঘরে প্রবেশ করে।
এর কিছুক্ষণ পরেই প্রতিবেশী আলমের ছেলে রতন ও বকুলের ছেলে উজ্জল হইচই করতে থাকে। এসময় জামাইয়ের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ছিলাম বলে অপবাদ দেয়। একপর্যায়ে তারা কাদা পানির মধ্যে দিয়ে টেনে জনসম্মুখে বাড়ির বাইরে নিয়ে ডাব গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং মারধর করে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জামাইয়ের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় থাকার কথা সঠিক নয়। তারা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। আমি তদন্ত করে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
ভুক্তভোগীর মেঝো মেয়ে রফেলা বেগম জানান, অসুস্থ থাকায় তিনি বনপাড়া ক্লিনিকে ছিলেন। এদিকে তার মাও জ্বরে ভুগছিলেন। পরে তার স্বামী ওষুধ কিনে এনে তার মাকে ডেকে তা খেতে বলেন। এ সময়ের মধ্যে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মা ও স্বামীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। যারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
ভুক্তভোগীর আইনজীবী মুক্তার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বৃদ্ধা ও তার জামাতার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আসলে এ বৃদ্ধার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তাদের সম্পত্তি ছিনিয়ে নিতে প্রতিবেশীরা মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। সেই সঙ্গে পুলিশও নির্যাতনকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গণউপদ্রব আইনে মামলা করে তাদের আদালতে পাঠিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জেলা মানবাধিকার সংস্থার সভাপতি সোহেল রানা বলেন, কেউ অপরাধ করলে তার জন্য আদালত আছে, আইন আছে। কিন্তু তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।
এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন বাংলানিউজকে জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই বৃদ্ধা ও তার মেয়ে জামাইকে আটক করে গণউপদ্রব আইনে মামলা করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে বৃদ্ধাকে বেঁধে নির্যাতন করল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন- এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
** নাটোরে বৃদ্ধাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন!
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২২
আরএ