ঢাকা, শনিবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ফরিদপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বস্তায় চাল কম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২২
ফরিদপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বস্তায় চাল কম

ফরিদপুর: ফরিদপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে গুদাম ও ডিলারদের কারসাজিতে চলছে ব্যাপক অনিয়ম। এতে ঠকছেন উপকারভোগীরা, ফুঁসে উঠছেন ডিলার মালিকরা।

কেজিপ্রতি ১৫ টাকায় ৩০ কেজির চালের পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে ২৬ থেকে ২৮ কেজি। এর বিপরীতে ৩০ কেজির টাকাই গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।  

তবে এ বিষয়ে ফরিদপুর সদরের খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ও ডিলারদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে। একে অপরকে দুষছেন তারা।

জানা যায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ফরিদপুর সদর উপজেলায় ৪০ জন ডিলারের আওতায় ২০ হাজার ৭১২ জন কার্ডধারী বা ভোক্তা রয়েছে। বর্তমানে একজন ডিলার প্রবাসে চলে যাওয়ায় এবং আরেকজন মারা যাওয়ায় ৩৮জন ডিলারের মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে এ চাল। বছরে পাঁচ মাস এই সুবিধা পেয়ে থাকেন ভোক্তারা। এরমধ্যে বছরের ‘মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর’ মাসে খোলাবাজারে এ কর্মসূচির চাল বিক্রয় করা হয়। এর আগে এ কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা দরে প্রতি কেজি চাল পাওয়া যেত। গত বাজেটে এর দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা কেজি করা হয়, যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিক্রি শুরু হয়।  

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) এ কর্মসূচির অক্টোবর মাসের শেষদিন ছিল। এদিন ফরিদপুর সদরের কয়েকজন ভোক্তার কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গেলে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র উঠে আসে। সদরের ঈশাণগোপালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর বাজারের ক্ষিতিশ বিশ্বাসের ডিলারে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেক কার্ডধারীদের ৩০ কেজি চাল ১৫ টাকা করে ৪৫০ টাকা রাখা হচ্ছে। অথচ তাদের ২৮ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।

কয়েকজন উপকারভোগী এ প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি জানান। এ সময় প্যাকেট করা ৫০ কেজি ওজনের কয়েকটি বস্তা ওজন করে দেখা যায়, কোনো কোনো বস্তায় ৪৫ কেজি, ৪৬ কেজি, ৪৭ কেজি চাল রয়েছে।

এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ডিলার মালিক ক্ষিতিশ বিশ্বাস বলেন, প্রায় বস্তায় চাল কম রয়েছে, এজন্য আমি কার্ডধারীদের বলেই ২৮ কেজি করে চাল দিচ্ছি। অম্বিকাপুর খাদ্য গুদাম থেকে এভাবেই আমাদের চাল দিয়েছে, যেখানে বস্তা প্রতি চাল কম রয়েছে ৩ থেকে ৫ কেজি করে। এই চালগুলোর ঘাটতি আমি কোথায় পাবো? এতো মালের ঘাটতি পূরণ করতে না পারলে অনেক কার্ডধারীদের চাল দিতে পারবো না। বিষয়টি আমি অম্বিকাপুর খাদ্য গুদামের সারোয়ার নাম করে একজনকে বলেছি, ফুড অফিসেও বলেছি। ৪০ জন ডিলারের মধ্যে আমার একার কথা তারা গ্রাহ্য করে না।

এদিন একই ইউনিয়নের পিঠাকুমরা বাজারের ডিলার এস এম সুলতানের দোকানেও একই চিত্র পাওয়া যায়। তারা স্বীকারও করেন ভোক্তা প্রতি ২৮/২৯ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে। এখানেও ৫০ কেজি ওজনের বস্তায় চাল কম পাওয়া যায়। এ সময় এক কর্মচারী জানান, একটি বস্তায় ৪১ কেজিও পাওয়া গেছে।

বিষয়টি নিয়ে ডিলারে থাকা পার্টনার পরিচয়ধারী ওসমান হোসেন জানান, দেখা যায় ১০টা বস্তার মধ্যে ৫টি বস্তায় ৩ থেকে ৫ কেজি করে চাল কম রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণ করার জন্যই আমরা সুবিধাভোগীদের ২৮/২৯ কেজি করে চাল দিচ্ছি।

বিষয়টি নিয়ে অম্বিকাপুর খাদ্য গুদামের এসএমও মুশফিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। পরে বলেন, খাদ্য বান্ধবের যে চাল তা ডিলাররা নিজ জিম্মায় বুঝে নিয়ে যান। এখানে থেকে মাল গেটের বাইরে গিয়ে কিছু হলে সে দ্বায়ভার আমাদের না। যার মাল সে নিজে বুঝে নেবে এটা তার দায়িত্ব।

এ সময় খাদ্য গুদামের দুই নিরাপত্তা প্রহরী লিটন ও সারোয়ার হোসেন বলেন, আমরা তাদের ওজন দিয়ে মাল বুঝিয়ে দেই। যেটা কম হয় সেটা তারা নেয় না। মাল যে কোথায় কম হইতেছে, কেন কম হইতেছে- এটা আমরা বলতে পারি না।

এ বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তারেক রহমান বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অধিকার আছে- শতভাগ মাল বুঝে নেওয়ার এবং স্পটেই তাদের বুঝে নিতে হবে। বস্তা ছেঁড়া-কাটা থাকলে সেটাও সেলাই করে দিতে বাধ্য। ডিলাররা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যদি কম দেয় এবং আমরা যদি অভিযোগ পাই তাহলে ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।  

এসব অভিযোগের বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন ঢালী বলেন, অভিযোগটি খাদ্য কর্মকর্তাদের বলা হবে এবং তদন্তে প্রমাণিত হলে ডিলারদের ডিলারশিপ বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।