ঢাকা, শনিবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

শুকায়নি রক্তের দাগ, ফের নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই চলছে নির্মাণকাজ 

মাছুম কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২২
শুকায়নি রক্তের দাগ, ফের নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই চলছে নির্মাণকাজ  নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই প্রকাশ্যে রড তোলা হচ্ছে ক্রেইন দিয়ে।

ঢাকা: চলতি বছরের ১৫ আগস্টে রাজধানীর উত্তরার জসিমউদ্দিন এলাকার আড়ং শো-রুমের সামনে নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেইন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেকারে থাকা একই পরিবারের ৫ জন নিহত হয়।  মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনাটির রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি।

এ দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে মোট ১২টি কারণ উল্লেখ করা হলেও কম সক্ষমতা সম্পন্ন ক্রেইন ব্যবহার এবং নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই নির্মাণসামগ্রী তোলার কারণে দুর্ঘটনা ঘটার বিষয়টিই উঠে এসেছে। এরপর শুরু হয় নানান বাক্য চালাচালি, ঝরছে কথার ফুলঝুরি। কিন্তু বন্ধ হয়নি কাজ।

সোমবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁও রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় একই চিত্র দেখা গেছে।  

ওই এলাকায় দেখা যায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের একটি পিলারের কাজ চলমান অবস্থায় নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই প্রকাশ্যে রড তোলা হচ্ছে ক্রেইন দিয়ে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।  

ওই পথ দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ প্রচুর মানুষ যাতায়াত করে। প্রশ্ন উঠেছে এই সড়ক তাহলে চলাচলের জন্য নিরাপদ কি-না? জানতে চাইলে স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের জীবনের দাম নেই। এখানে সবগুলো পিলারের রডই এভাবে তোলা হয়েছে।

শামসুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলেন, আমরা তো আসলে এভাবে দেখে অভ্যস্ত। প্রয়োজনে নিজেরা পাশ কাটিয়ে যাই। কিন্তু এটা আসলেই ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, আসলে আমাদের কাজ তো এক জায়গায় নির্দিষ্ট থাকে না। ফলে নিরাপত্তা বেস্টনী দিলে, সেটি আবার তুলে সামনে নিতে সময় ব্যয় হয়। সেজন্য এভাবেই তোলা হচ্ছে রড।



জানতে চাইলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এইচ এম শাখাওয়াত আকতার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ১শ ভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করছি। এখানে বেষ্টনী ছাড়া কাজ করার সুযোগ নেই। নো সেইফটি, নো ওয়ার্ক। আমরা বিভিন্ন মিটিং, সেমিনারে এ নিয়ে অনেক কথা বলেছি। তারপরও যদি, এমন কিছু ঘটে থাকে, আমরা ব্যবস্থা নেবো।

এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যেহেতু দরপত্র নেওয়া হয়েছে তাদের নিরাপত্তা বেষ্টনী না রেখে কাজ করার সুযোগ নেই। কিন্তু এত বড় দুর্ঘটনা ঘটার পরেও যখন শাস্তি না দিয়ে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটাই স্বাভাবিক। এর দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিআরটি কর্তৃপক্ষের বেশি।

এর আগে ১৫ আগস্ট (সোমবার) বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কে নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার ভেঙে শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরো অন্তত দুইজন। নিহতরা হলেন- রুবেল (৫০), ঝর্ণা (২৮), জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। আরো একজনের পরিচয় নিশ্চিত হতে পারে পুলিশ। নিহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য।

চলতি বছরের ১৫ জুলাই বিকেলে চান্দনা চৌরাস্তার কে চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানি ফিলিং স্টেশনের সামনে গার্ডার চাপায় জিয়াউর রহমান (৩০) নামে এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। এতে এক পথচারীও আহত হন। ফ্লাইওভারের কাজ করার সময় লঞ্চিং গার্ডার টেইলার গাড়িতে উঠানো হচ্ছিল। এ সময় গার্ডারটি টেইলার থেকে কাত হয়ে জিয়াউর রহমানের ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

২০২১ সালের ১৪ মার্চ বিআরটির গার্ডার ভেঙে চারজন আহত হন। তাদের মধ্যে দুইজন বিদেশিও ছিলেন। তখন ফায়ারকর্মীরা জানান, ক্রেইনের মাধ্যমে গার্ডারটি তুলে ফ্লাইওভারে স্থাপনের কাজ চলছিল। সেসময় সেটি ছিটকে ভেঙে পড়ে।

আরও পড়ুন>>

**গার্ডার সরিয়ে গাড়ি কেটে মিলল ৫ মরদেহ
**গার্ডার দুর্ঘটনা: চালক-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা
**গার্ডারচাপায় নিহত রুবেলের ৮ স্ত্রীর সন্ধান, মর্গে উপস্থিত ৫ জন

**উত্তরায় দুর্ঘটনা: শিশু জাকারিয়া জীবিত ছিল আধাঘণ্টা

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২২
এমকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।