ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

মানুষের কষ্ট হয় এমন কিছু করবেন না: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
মানুষের কষ্ট হয় এমন কিছু করবেন না: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: মানুষের কষ্ট হয় এমন কিছু না করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (২০ নভেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫০টি শিল্প কারখানা ও বাণিজ্যিক অবকাঠামোর উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। মানুষের কল্যাণে যত বেশি কাজ করবেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের সহযোগিতা করবো কিন্তু এমন কিছু করবেন না যাতে মানুষ কষ্ট পায় বা মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারণ সারা বিশ্বব্যাপী এখন খাদ্যের অভাব। এ জন্য আমরা উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।

আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে নিয়মের মধ্যে আনতে সক্ষম হয়েছে মন্তব্য করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আর হাওয়া ভবন নেই যে আপনাদের কোনো কাজ পেতে হলে হাওয়া ভবনে পাওনা বুঝাতে হয় বা এখানে-ওখানে ছোটাছুটি করতে হয়। আমরা সব ধরনের নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে দেশকে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন। কাজে ব্যবসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা, সেটা কিন্তু আমরা করে দিচ্ছি।

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ অতটা খারাপ অবস্থায় পড়েনি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দেশ নিজেরাই অর্থনৈতিক মন্দা ঘোষণা দিয়ে গেছে। এখনো আমি বলতে পারি, বাংলাদেশ অন্তত অত খারাপ অবস্থায় নেই কিন্তু আমাদের এখানে যারা শিল্পপতি আছেন, তাদের অনুরোধ করবো ইন্ডাস্ট্রি চালিয়ে অন্তত নিজের দেশের মানুষের চাহিদা পূরণের প্রচেষ্টা আপনারা নেবেন। কারণ আপনাদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে।

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক ধাক্কাটা সারা বিশ্বব্যাপী লেগেছে, বাংলাদেশও তার থেকে ব্যতিক্রম না। তারপরও আমি বলবো, অন্তত আমাদের অর্থনীতির গতিশীলতা যাতে অব্যাহত থাকে সে ব্যবস্থা আমি নিচ্ছি। এর ওপর এলো মরার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ; ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞার ফলে আমাদের ক্রয় করার সুযোগ অনেক কমে গেছে। আমরা যেসব জিনিস বাইরে থেকে আমদানি করি, সেগুলোর দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। পরিবহন খরচ আরও বেড়ে গেছে।

তরুণদের শুধু চাকুরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হচ্ছে, আরও আসবে। সেই সঙ্গে আমি যুব সমাজকে বলবো, শুধু চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেরা নিজেদের শিল্প-ব্যবসা গড়ে তোলেন। নিজেরা অন্য লোককে চাকরির সুযোগ করে দেন। নিজের মাস্টার নিজেই হোন।

নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে আরও বেশি এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের নারী উদ্যোক্তা আরও বেশি আসা দরকার। এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে আমরা নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিয়েছি। প্রত্যেকটা শিল্পাঞ্চলে নারীদের আলাদা প্লট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আমি আশা করি, আমাদের নারী উদ্যোক্তারাও আরও এগিয়ে আসবেন। সেটাই আমি চাই।

যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মাছ, মাংস, ডিম, মুরগি, দুধ সব উৎপাদনে আমরা অনেক উন্নতি করেছি। আমাদের চাহিদা পূরণ করার মতো যোগ্যতা আমরা অর্জন করেছি। আমরা অতিরিক্ত উৎপাদনের মাধ্যমে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশে রপ্তানি করার সক্ষমতা রাখি। হালাল মাংস উৎপাদন করে আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। কিছু কিছু কাজ শুরু হয়েছে। এসব বিভিন্ন নতুন নতুন দিকে আমাদের যারা উদ্যোক্তা, বিশেষ করে যুব সমাজ এগিয়ে আসবেন। তাদের জন্য আমরা অনেক সুযোগ রেখেছি।

বিদেশি বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের চারটি কারখানার পাশাপাশি সিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের দুটি, মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাতটি এবং শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি শিল্প-কারখানা মোট ১৪টি কারখানার বাণিজ্যিক উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনৈতিক অঞ্চলের সড়ক, ভবন, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উদ্বোধন করেন তিনি।

এছাড়া দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্মাণাধীন ২৯টি কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকার প্রধান।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর প্রান্ত থেকে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন এবং বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান তাসভীর।

অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে কর্ণফুলি ড্রাই ডক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং মুন্সীগঞ্জের হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল, শ্রী হট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, কক্সবাজার সাবরাং ট্যুরিজম ইকোপার্ক থেকে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জেলাপ্রশাসনের কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
এমইউএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।