ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মেলেনি সিট, ১৭ দিনের শিশুকে নিয়ে ১৬ ঘণ্টা ঢামেকের ফ্লোরে মা

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২২
মেলেনি সিট, ১৭ দিনের শিশুকে নিয়ে ১৬ ঘণ্টা ঢামেকের ফ্লোরে মা

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১৭ দিন বয়সের এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে অসুস্থ মা মোমেলা বেগমকে (৩২) সিট না পেয়ে ওয়ার্ডের বাইরে খোলা জায়গার ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। স্বজনরা ওয়ার্ডে গিয়ে বারবার দায়িত্বরত লোকজনদের কাছে অনুরোধ করছে ১৭ দিন বয়সের শিশু সন্তানকে নিয়ে এ ঠাণ্ডায় তার মা কীভাবে ফ্লোরে থাকবে।

তখন ওয়ার্ডের লোকজন তাদের বলেন, কিছুই করার নেই। ওয়ার্ডে সিট খালি নেই। এ ঠাণ্ডায় ১৭ দিন বয়সের শিশু সন্তান তার মার সঙ্গে নিচে ঘুমালেও ওয়ার্ডের ভেতরে দুটি পরিপাটি সিট স্টাফদের জন্য খালি রাখা হয়েছে।

শনিবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ২০৪ ও ২০৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী স্থানে নিচে নামার দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির পাশে মোমেনা খাতুন তার ১৭ দিন বয়সের শিশু সন্তান তানিয়াকে নিয়ে ফ্লোরে একটি পাটি বিছিয়ে শুয়ে আছে।  

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মান্দারতলা গ্রামের ভ্যানচালক মো. লেবু ফকিরের স্ত্রী মোমেলা বেগম। তাদের তিন সন্তান। গত ১৭ দিন আগে গোপালগঞ্জে একটি হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে তানিয়ার জন্ম হয়। কিছুদিন আগে থেকে মোমেলা বেগমের মাথা ও ঘাড় ব্যথা শুরু হয়।  

গত শুক্রবার দিনগত রাতে পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডের আন্ডারে মোমেনা ভর্তি হন। ওয়ার্ডের ভেতরে কোথাও সিট খালি না থাকায় হাসপাতালে লোকজনদের চলাচলের স্থানে মোমেনা বেগম তার ১৭ দিন বয়সের তানিয়াকে নিয়ে ফ্লোরে বিছানা করে সেখানেই চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।

শিশু তানিয়ার বাবা লেবু ফরিক জানান, হাসপাতালে ভর্তির ১৬ ঘণ্টা অতিক্রম হয়ে গেছে। অথচ ১৭ দিন বয়সের শিশুটির দিকে তাকিয়েও তার স্ত্রী মোমেলাকে কেউ একটি সিটের ব্যবস্থা করে দিল না। গতরাতে শিশুকে নিয়ে ওয়ার্ডে লোকজনদের বারবার অনুরোধ করেছি, এ শিশুকে নিয়ে ফ্লোরে শোয়া যাবে না। স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে এসে আমার সন্তানও অসুস্থ হয়ে যাবে। আপনারা একটি সিটের ব্যবস্থা করে দেন। এর উত্তরে ওয়ার্ডে থাকা দায়িত্বরত লোকজন বলেন, তাদের কিছুই করার নেই। ওয়ার্ডে সিট খালি নেই।  

রোববার সন্ধ্যার দিকে ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে আসলেই রোগীতে ভরপুর, কোনো সিট খালি নেই। এক পর্যায়ে ওয়ার্ড সংলগ্ন বারান্দায় গিয়ে দেখা যায়, চাদর বিছানো দুটি পরিপাটি বেড খালি পড়ে আছে। সেখানে দায়িত্বরত এক নারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে রাতে স্টাফরা ঘুমায়। তাদের বিশ্রামের জন্য দুটি বেড খালি রাখা হয়েছে।  

নিউরো সার্জারি বিভাগের ২০৪ নম্বর মহিলা ওয়ার্ডে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা রোগী এখানে ভর্তি হন। মহিলাদের পাশাপাশি ১১ বছরের নিচে ছেলে শিশুদেরও ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির সংখ্যা ১৫০ এর ওপরে। রোগীর সংখ্যা বেশির কারণে ওয়ার্ডের ফ্লোরসহ বারান্দার ফ্লোর, সিঁড়ির রুমের ফ্লোর সব জায়গায় রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তবে হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে টাকা ছাড়া এখানে সিট পাওয়া অলৌকিক ব্যাপার। কোন রোগী সকালে ছাড়পত্র পাবে এগুলো ওয়ার্ডে থাকা লোকজনই জানতে পারে। তখন অন্য রোগীরা সেসব লোকদের টাকা দিয়ে সিট আগে থেকেই বুকিং করে রাখে। এভাবেই চলছে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে প্রায় ওয়ার্ড।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, ১৭ দিন বয়সী বাচ্চাকে নিয়ে মা ফ্লোরে শুয়ে আছে। এ কথাটা যদি আমি সকালে জানতে পারতাম তাহলে ভালো হতো। আমি এখনই ওয়ার্ড মাস্টারকে বলে দিচ্ছি ওয়ার্ডের ভেতরে খালি থাকা সিটে মা ও তার শিশু সন্তানকে রাখার ব্যবস্থা করতে।

এর কিছুক্ষণ পরে ওয়ার্ড মাস্টার আবুল হোসেন ফোনে ভর্তি মোমেনা খাতুন ও তার শিশুর সম্বন্ধে জানতে চান এবং জানান দ্রুত তার সিটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২২
এজেডএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।