নিউইয়র্ক: বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টিও নাৎসি ও গেস্টাপো বাহিনীর মতো ‘নন নেগোশিয়েবল’ বা যে কোনো ধরনের দরকষাকষির উর্ধ্বে বলে মন্তব্য করেছেন সর্বস্তরের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা। বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিনই যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করবে না বলেও উল্লেখ করেছেন তারা।
যুদ্ধাপরাধ ও বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আশরাফুজ্জামান খানকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়ে এক সমাবেশে এসব কথা বলেছেন প্রবাসীরা।
ইসলামিক সেন্টার অব নর্থ আমেরিকার (ইকনা) সাবেক সভাপতি আশরাফুজ্জামান খানকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতারের দাবিতে রোববার বিকেলে নিউইয়র্কে ‘ইসলামিক সেন্টার অব নর্থ আমেরিকা’র সামনে শিল্পী, লেখক সাংবাদিকসহ শতাধিক প্রবাসী এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে ‘আশরাফুজ্জামান যুদ্ধাপরাধী, তাকে আমেরিকা থেকে বহিষ্কার করো’, ‘আশরাফুজ্জামানকে দেশে ফিরিয়ে ফাঁসির রায় কার্যকর করো’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। এ সময় তাদের হাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আশরাফুজ্জামানকে বহিষ্কার, ফাঁসির রায় কার্যকর ও গ্রেফতারের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ও ফেস্টুন দেখা যায়।
বিক্ষোভ সমাবেশে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, শহীদ হাসান, নাট্যশিল্পী জামাল উদ্দীন হোসেন ও রওশনারা হোসেন,সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা কবীর আনোয়ার, সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ ও মুজাহিদ আনসারী, লেখক বেলাল বেগ, রাজনীতিবিদ ড. প্রদীপ কর, কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্য্য, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুকিত চৌধুরী,গোলাম মিরাজ খান, কমিউনিটি কর্মী আবুল কাশেম, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সুব্রত বিশ্বাস প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্য্য বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টিও নাৎসি ও গেস্টাপো বাহিনীর মতো ‘নন নেগোশিয়েবল’ বা যে কোনো ধরনের দরকষাকষির উর্ধ্বে। বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিনই তাদের ক্ষমা করবে না। তাই আমরা আশরাফুজ্জামানকে দেশে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি ।
সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ বাংলানিউজকে বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান আসামি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আশরাফুজ্জামানকে এই মুহূর্তে গ্রেফতার করে বাংলার মাটিতে ফেরত পাঠিয়ে তার রায় কার্যকরের জোর দাবি জানাই।
সাংবাদিক মুজাহিদ আনসারী বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ঠিক আগে দেশকে মেধাশূন্য করতেই সুপরিকল্পিতভাবে সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল এই ঘাতক যুদ্ধাপরাধীরা। তাই অবিলম্বে আশরাফুজ্জামানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে তার ফাঁসির রায় কার্যকরে ‘মানবতা ও মানবাধিকারের দেশ’ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনিও।
শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দীন হোসেনের ছেলে ফাহিম রেজা নূর আশরাফুজ্জামানকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল নায়ক যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান। তারা আমার বাবা সাংবাদিক সিরাজ উদ্দীন হোসেনকেও হত্যা করেছেন।
লেখক বেলাল বেগ বাংলানিউজকে বলেন, যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও হুমকিস্বরুপ। কারণ, তার রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মকাণ্ড সমগ্র মানবতা ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। আর সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচিত, অবিলম্বে আশরাফুজ্জামানকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা।
শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ও আশরাফুজ্জামানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের প্রতি দাবি জানান।
চলচ্চিত্র নির্মাতা করীর আনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন। সে দণ্ড কার্যকরে অবিলম্বে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক।
যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সমন্বয়ক মুকিত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আশরাফুজ্জামান লুকিয়ে আছেন। তাকে খুঁজে বের করে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
নাট্যকার জামাল উদ্দীন হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ হত্যাকারী, মুক্তিযুদ্ধের অবমাননাকারী, নারী ধর্ষণকারী ,দেশের শত্রু, গণশত্রু যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামানকে অবিলম্বে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই।
কবি হাসান আবদুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, যেভাবেই হোক এ যুদ্ধাপরাধীকে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে এবং ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে।
উদীচীর সুব্রত বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, তিনি বিশ্বাস করতে পারেন না, কিভাবে আশরাফুজ্জামান খান এদেশে পালিয়ে থাকেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নিউইয়র্কের আয়োজনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পাকিস্তানের সংসদে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাবের প্রতিবাদে সোমবার পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩
সম্পাদনা: জনি সাহা, নিউজরুম এডিটর ও অশোকেশ রায়, অ্যাক্টিং আউটপুট এডিটর