ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী একটি চক্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোকে ক্রমাগত প্ররোচনা দিয়ে যাছে এই চক্রটি।
তাছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্রমেই খারাপ করে তুলতেও উঠেপড়ে লেগেছে এরা।
বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সেজন্য চক্রটি যে অন্যায় লবিং চালাচ্ছে, এ ব্যাপারে বাংলানিউজের কাছে নিশ্চিত তথ্য রয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের মতো পত্রিকায় কোটি টাকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানোর প্রস্তুতি চলছে।
একই সঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর, কংগ্রেসম্যানদের কাছে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। এজন্য অনেক আগেই কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছে তারা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্পর্কে সাতজন মার্কিন সিনেটরের দেওয়া প্রস্তাবের পেছনেও এই গ্রুপটির প্ররোচনা ছিলো বলে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, এই গ্রুপটি রীতিমতো ‘জিহাদ’ ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। তারা বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিয়ে অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। এ নিয়ে চলছে চক্রটির মধ্যে ই-মেইল চালাচালি।
একটি ই-মেইলে বলা হচ্ছে, ‘আমাদের সিনেটরদের সঙ্গে বসা উচিত এবং তাদের আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানো উচিত। এছাড়াও আমাদের তহবিল সংগ্রহ করতে হবে যাতে নিউইয়র্ক টাইমসে বিজ্ঞাপন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক দেশগুলোর প্রতি বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানো যায়। ’
অন্য একটি মেইলে বলা হচ্ছে, ‘আমরা বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করে সরকারের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর সংগ্রহের উদ্যোগ নিচ্ছি। এক হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহকে টার্গেট ধরেই এগুতে হবে। ’
আরেকটি ই-মেইলে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্য বড় দেশগুলো জাতিসংঘের মাধ্যমে হাসিনা প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশবিরোধী এই চক্রটির অন্যসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশকে ঋণসহায়তা ও অনুদান না দেবার অনুরোধ জানিয়ে বিশ্বব্যাংক (ডব্লিউ বি) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংককে (এডিবি) চিঠি লেখা। ওয়াশিংটনে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও আবর দেশগুলোর দূতাবাসে যোগাযোগ করে তাদের প্রতি বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানোও এদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের অংশ। আর এসব ক্ষেত্রে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সংগঠিত করতেও উদ্যোগী হয়েছেন তারা।
অপর একটি ই-মেইলে যতদ্রুত সম্ভব জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে যেন কড়া লবিং শুরু করা হয় আহ্বানও জানানো হয়েছে একটি ই-মেইলে।
একই সঙ্গে এই চক্রটি বাংলাদেশে অবস্থানকারী ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের লেখা একটি রিপোর্টের কপি নিজেদের মধ্যে চালাচালি করছেন। যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দল টোরি পার্টির নিয়ন্ত্রণাধীন ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশে তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে কিনা তা পর্যালোচনা করে দেখছে। এই রিপোর্টে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় জামায়াত-বিএনপি’র হামলা ও হতাহতের ঘটনায় গ্রামবাসীরা খুশি হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
গ্রামবাসীর আনন্দ (?) প্রকাশের ছবি তুলে ধরে বলা হয়েছে, বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে হামলার পর তারা এই আনন্দ দেখিয়েছে।
এদিকে বিষয়টিকে সরাসরি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বলে অভিমত দিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, দেশের বাইরে অবস্থান করায় এই মানুষগুলো যা খুশি তাই করতে পারছে। বিদেশে নিজের দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার পরিবর্তে তারা দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানাচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াতের একটি সিন্ডিকেট এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে বলেই মনে করেন ড. মোমেন।
তিনি বলেন, এদের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে দেশের স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকেও সক্রিয় হতে হবে।
এদের প্রচারণামূলক ও দেশবিরোধী কাজগুলোকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানদের কাছে। এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কাজ করতে পারেন বলেও মনে করেন তিনি।
তবে ড. মোমেন মনে করেন, এই দেশবিরোধী চক্রটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের কাছে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে প্রয়োজনে সরকারকে আন্তর্জাতিক লবিস্ট গ্রুপ নিয়োগ করতে হতে পারে।
ড. মোমেন জানান, তিনি নিজেও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে কিছু কাজ করছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। সেগুলো ভেঙ্গে দেওয়া এই কুচক্রিদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
জাতিসংঘ মহাসচিবও বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক সূচকের অগ্রগতিতে আশান্বিত। তার কাছেও এসব কুচক্রিমহল কোনো ফল পাবে না বলেই মনে করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের এই স্থায়ী প্রতিনিধি।
তবে দেশের স্বার্থবিরোধী চক্রটি যতটা সক্রিয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তথা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ততটাই নিষ্ক্রিয় বলে মনে করেন ড. মোমেন। তিনি বলেন, এই নিষ্ক্রিয়তা ভেঙ্গে তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ সময় ১৪০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৩
এমএমকে/জেএম