ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

নিউইয়র্ক স্থায়ী মিশনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪
নিউইয়র্ক স্থায়ী মিশনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

নিউইয়র্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।

দিনটি উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এতে জাতিসংঘে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্যে তিনি বলেন, একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ মানে এক কালজয়ী উপাখ্যান।  

তিনি বলেন, রক্তের সঙ্গে যেমন হিমগ্লোবিনের সম্পর্ক, তেমনি মাতৃভাষার সঙ্গে মানুষের হৃদস্পন্দনের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বাংলার দামাল ছেলেরা ১৯৫২ সালে রুখে দিয়েছিল বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে।

আব্দুল মোমেন বলেন, মানুষ জীবন দেয় দেশের জন্য, স্বাধীনতার বিজয় পতাকা আকাশে উত্তোলনের জন্য। কিন্তু, ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে বিশ্বে এমন ইতিহাস বিরল।

তাই, বাঙালির কাছে একুশ মানে মাথা নত না করা।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন প্রথমবারের মতো বাণী প্রদান করায় তাকে ধন্যবাদ জানান।

দিবসটি পালন উপলক্ষে কর্মসূচির মধ্যে ছিল মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করা।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন মিলনায়তনে সাময়িক ভিত্তিতে শহীদ মিনার স্থাপন করে ৬২তম শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সরকারিভাবে পালন করেছে বাংলাদেশ মিশন।

নিউইয়র্কে স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একুশের অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয়। এতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে ১২টা ১ মিনিটে মিশনে স্থাপিত শহীদ মিনারে মিশনের পক্ষে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ.কে.আব্দুল মোমেন।

পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকও পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সরকারিভাবে আয়োজিত শহীদ দিবস পালনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা  মিশন মিলনায়তনে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত শহীদ মিনারে পুষ্প অর্পণ করেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধারা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও শ্রমিকলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।

এদিকে, শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানমালার শুরুতেই ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে প্রথমে রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন মিশনের উপস্থায়ী প্রতিনিধি মো. মুস্তাফিজুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন মিশনের ইকোনমিক মিনিস্টার বরুণ দেব মিত্র। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন মিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম আখতারউজ্জামান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিবের বাণী পাঠ করেন ডিপিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজ দেবোরা সেওয়ার্ড, রাশিয়ার স্থায়ী মিশনের ডিপিআর (প্রথম), ডিরেক্টর ইউনেস্কো মিজ ভিবেক জেনসেন, জাপান মিশনের মিজ এরিকো ইউমোরা একুশের ওপর বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কান ক্ষুদে শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে লালন শাহর গান পরিবেশন করেন সায়রা রেজা, হাছন রাজার গান পরিবেশন করেন চন্দ্রা রায়, আব্দুল করিম শাহর গান পরিবেশন করেন গোলাম সারওয়ার হারুন, ভাষার গান পরিবেশন করেন রথীন্দ্রনাথ রায়, আমি বাংলার গান গাই পরিবেশন করেন বাসমা স্বিয়া, বিরসা চট্টোপাধ্যায় ও রোহান মিশ্র।

এ ছাড়া রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি, দ্বিজেন্দ্র গীতি পরিবেশন করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন আনন্দধ্বনি, নিউইয়র্ক। অনুষ্ঠানে আমেরিকান নাগরিকদের সংগঠন ‘শ্রী চিন্ময় সেন্টার’ এর শিল্পীরা বাংলায় গান পরিবেশন করেন। নৃত্য পরিবেশন করেন সেমন্তী ওয়াহেদ ও সহশিল্পীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘বিবিধ রতন’ এর গ্রন্থনা ও পরিকল্পনা করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম সারওয়ার হারুন।

অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন মিশনের প্রথম সচিব জামাল উদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে ড. এ কে. আব্দুল মোমেন বলেন, মহান ২১  ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্ববাসীর কাছে অলঙ্কার আর অহঙ্কারের দিন। আনন্দের খবর গত বছর জাতিসংঘ তাদের ওয়েবসাইটে আমাদের অনুরোধে জাতিসংঘের ৬টি ভাষার সঙ্গে বাংলাকে স্থান দিয়েছে এবং ইউএনডিপি অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি বাংলায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

গত ৩ বছর থেকে জাতিসংঘ ‘একুশের স্তম্ভকে’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতীক হিসেবে তাদের ওয়েবসাইটে প্রচার করছে; যা ভাষা শহীদদের প্রতি বিরল সম্মানের সাক্ষ্য বহন করছে।

স্বাগত বক্তব্যে ড. একে. আব্দুল মোমেন আরো বলেন, বাঙালিদের বিশ্বাস একুশ মানে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার। ভাষার লড়াই কিংবা মুক্তিযুদ্ধ কোনোটিতেই বাঙালিরা যেমন মাথা নত করেনি, তেমনি ভবিষ্যতেও কোন বাধাই তাদের সামনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন কিংবা মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির ঐক্যই মুক্তির মন্ত্র হিসেবে কাজ করেছে। তাই জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। ক্ষুধা-দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বাঙালির সংগ্রামের বিজয় অনিবার্য।

এদিকে, সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ হয় আলোচনা পর্ব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর গভীর রাত পর্যন্ত শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শেষ হয় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত বাঙালির ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ