ঢাকা: জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনে বিএনপি-জামায়াত আমলে নিযুক্ত এক কর্মচারী নিউইয়র্কে গা ঢাকা দিয়েছেন! মিশনের ফাইল থেকে তার পাসপোর্টের কপিসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রও উধাও হয়ে গেছে। প্রায় তিন বছর আগে তাকে ঢাকায় বদলি করা হলেও দেশে ফিরে কাজে যোগ না দিয়ে নিউইয়র্কেই অবস্থান করছেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি বলছে, ২০০২ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের বিশেষ সহকারী হিসেবে রাজনৈতিক নিয়োগ পেয়েছিলেন কাউসার মুমিন নামে এই ব্যক্তি। ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের প্রটোকল সাইফার অ্যান্ড কনস্যুলার বিভাগে সহকারী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। ২০১০ সালে কাউসার মুমিনকে মিশন থেকে দেশে ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সরকারি নথি অনুযায়ী বর্তমানে তার কোন ‘সন্ধান মিলছেনা’। তবে এ অবস্থায় প্রায় চার বছর পার হয়ে গেলেও ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার চাকরি এখনো বহাল রয়েছে বলেই নিশ্চিত করেছে সূত্র।
এদিকে, অতি সম্প্রতি একটি গোপন তথ্য সরকারের জন্য এখন সবচেয়ে বড় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টিতে বিপাকে পড়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।
সুত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক রাষ্ট্রদূত বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমশের মবিন চৌধুরীর বিশ্বস্ত ও বিশেষ অনুগত এবং আদর্শগতভাবে জামায়াতে ইসলামীপন্থি এই সরকারি কর্মচারী এখন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কাউসার মুমিনের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা মঞ্জুরে শমশের মবিনের সহযোগিতায় বিশেষ একটি মাধ্যমে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদ্বির চলছে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মচারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার এমন প্রচেষ্টায় সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আশঙ্কায় মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন।
সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয় চাকরিচ্যুত করলে সেই কারণ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় বাগিয়ে নেওয়ার পায়তারা করছেন কাউসার মুমিন। ফেসবুক, টুইটারে নিজেকে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। তার নানা ধরনের লেখালেখিও এই রাজনৈতিক আশ্রয় লাভকে কেন্দ্র করেই।
সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিএনপির একজন মন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পেলেও কাউসার মুমিন মূলত জামায়াত-শিবিরপন্থি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুত্র জানিয়েছে, প্রায় চার বছর আগে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় বদলি করা হয় জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনের সাইফার অ্যাসিস্ট্যান্ট কাউসার মুমিনকে। ঢাকায় ফিরে কাজে যোগদানের উদ্দ্যেশ্যে নিয়মানুযায়ী বিমান টিকেটসহ যাবতীয় ভাতা ও প্রাপ্য অর্থও সরকারের কাছ থেকে নিয়ে নেন কাউসার মুমিন। এসব নিয়ে দিন কয়েক গা ঢাকা দিয়ে নিউইয়র্কেই প্রকাশ্য হন তিনি।
তবে তখন থেকেই সরকারি নথিতে তিনি ‘সন্ধান মিলছে না’ স্ট্যাটাসে রয়েছেন।
বর্তমানে নিউইয়র্কেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কাউসার মুমিন। জাতিসংঘ স্থায়ী মিশন থেকে পালিয়ে থাকলেও সেখানেই যাচ্ছেন সাংবাদিক সেজে। আবার কখনো রাজনৈতিক কর্মী হিসেবেও যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত দুই দফায় কাউসার মুমিনকে অবিলম্বে কাজে যোগদানের নোটিশ দেওয়া হয়েছে । কিন্তু কোনও নোটিশেরই উত্তর পায়নি মন্ত্রণালয়।
জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশন বলছে, কোনো নোটিশই কাউসার মুমিনের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তার কোনো ঠিকানা মিশনের কাছে নেই যেখানে চিঠি বা নোটিশ পৌঁছে দেওয়া হবে। আর সে কারণেই বিষয়টি ঝুলে থাকছে বছরের পর বছর, বাংলানিউজকে এ কথা বলেছেন মিশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
দাপ্তরিকভাবে ‘সন্ধান মিলছে না’ স্ট্যাটাসে থাকলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কাউসার মুমিনের চলাফেরার সব তথ্যই যে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দায়িত্বশীল সূত্রটি। কাউসার মুমিন নিউইয়র্কে কখনো প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে ফায়দা নিচ্ছেন, কখনো রাজনৈতিক পরিচয় দিচ্ছেন আবার কখনো নিজেকে কমিউনিটির গুরুত্বপূর্ণ একজন হিসেবে তুলে ধরে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করছেন সে তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছেও রয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানায় সূত্রটি।
জাতিসংঘ মিশন জানিয়েছে, কূটনৈতিক নিয়মে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরেও কাউসার মুমিনের বদলি হবার কথা জানানো হয়েছে। তবে সবশেষে ‘নথিপত্রে নিখোঁজ’ কাউসার মুমিনের খোঁজে পুলিশের শরনণাপন্ন হতে গিয়ে মিশন কর্তৃপক্ষ আবিস্কার করে, ব্যক্তিগত রেকর্ড ও নথিপত্র থেকে কাউসার মুমিনের পাসপোর্টের কপিসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র উধাও হয়ে গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রটি জানিয়েছে, নিয়ামুনাযায়ী মিশনের ফাইলে প্রত্যেক কর্মকর্তা কর্মচারীর ব্যক্তিগত রেকর্ড সংরক্ষিত থাকে। এই নথি উধাও হওয়ার পেছনে কাউসার মুমিনেরই হাত রয়েছে বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়।
এদিকে, ঢাকায় একটি ট্যাবলয়েডে নিউইয়র্ক প্রতিনিধি হিসেবে প্রায় নিয়মিত খবর পাঠাচ্ছেন কাউসার মুমিন। ওই পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয়ে জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতেও যোগ দিচ্ছেন তিনি। এত কিছুর পরেও মিশন সরাসরি তাকে আটকাতে পারছে না।
রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার পক্ষে কারণ দাঁড় করাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকারের বিরুদ্ধে পত্রিকায় লেখালেখি করছেন কাউসার মুমিন। মিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাটি জানান, কাউসার মুমিনের এই অভিপ্রায়ের বিষয়টি বুঝতে পেরে এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তা অবহিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় ২০৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৪