নিউইয়র্ক: বিশ্বব্যাপী অপরাধীদের মুখচ্ছবি চিহ্নিত করার গোয়েন্দা নজরদারি কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিপুল সংখ্যক ছবি সংগ্রহ করছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি’।
এছাড়া ইমেল,টেক্সট মেসেজ, সামাজিক মিডিয়া,ভিডিও কন্ফারেন্স সহ অন্য যোগাযোগ মাধ্যম থেকেও অগণিত ছবি সংগ্রহের জন্য নতুন একটি সফটওয়্যারও তৈরি করেছে তারা।
সংংস্থাটির সর্বোচ্চ গোপনীয় নথিতে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার একটি সংবাদ মাধ্যমে এ খবর বেরিয়েছে।
গোপন নথিতে আরো বলা হয়েছে ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির’ কর্মকর্তারা মনে করেন, এ ধরনের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
জানা গেছে, সংস্থাটি প্রতিদিন ৫৫ হাজার মুখচ্ছবি সহ কয়েক মিলিয়ন ছবি পরীক্ষা করে দেখে। এক সময় যেখানে মৌখিক ও লিখিত যোগাযোগের উপরই গুরুত্ব দেয়া হতো সেখানে এখন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের গতিবিধি জানতে মুখচ্ছবি,হাতের ছাপসহ চিহ্নিতকরণের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিচ্ছে ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি।
তবে এটা পরিষ্কার নয় এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য দেশের ঠিক কতজন নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ও মুখচ্ছবি এ নজরদারি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নজরদারি চালানোর ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি’র একজন মুখপাত্র বলেছেন, সংস্থাটি যেহেতু ছবিকেও যোগাযোগের একটি পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করে , সেক্ষেত্রে ‘ইমেল পড়া বা তাদের টেলিফোন আলাপে আড়িপাতা’র মতই আমেরিকানদের ছবি সংগ্রহেও আদালতের অনুমতি প্রয়োজন পড়বে।
তবে নাগরিক অধিকার সংগঠন ও অন্য সমালোচকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এ ধরনের কার্যক্রম ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে খর্ব করবে।
পাশাপাশি এ প্রযুক্তিতে এখনও কারিগরি সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন কার্ণেগী মেলোন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখচ্ছবি চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষক আলেসান্দ্রো একুইস্টি। তিনি বলেন, এ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এখনও কারিগরি সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
এদিকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির মত এফবিআইও স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাতের ছাপ চিহ্নিতকরণের সাথে সাথে মুখচ্ছবি ও বায়োমেট্রিক্স তথ্য একত্রিত করতে ‘নেক্সট জেনারেশন আইডেন্টিফিকেশন’ তৈরি করছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদনকারী ও আমেরিকান নাগরিকদের মুখচ্ছবি সংগ্রহের মধ্য দিয়ে বৃহত্তম মুখচ্ছবি’র ডাটাবেজ তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এ খাতের একটি পাইলট প্রজেক্টে ইতোমধ্যে অর্থায়ন করছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি।
সানফ্রান্সিসকোর ‘ফেসিয়াল রিকগনিশেন এন্ড প্রাইভেসি অ্যাট দ্য ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন’ এর বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবী জেনিফার লিঞ্চ বলেছেন, বেসরকারি খাত ও সরকার উভয়েই ফেস রিকগনিশনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে।
তবে মিস লিঞ্চ বলেন, ফেস রিকগনিশনের ক্ষেত্রে আইন এখনো সুস্পষ্ট নয় এবং ওয়াশিংটন প্রশাসন এখনো এ ব্যাপারে আইনগতশূন্যতায় রয়েছে।
জর্জ টাউন ল’ স্কুলের সেন্টার ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি এন্ড দ্য ল’র পরিচালক লরা ডেনাহ বলেছেন, ‘এর অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ’
বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে তোলা মুখচ্ছবি, পোট্রেট এবং কম রেজ্যুলেশনে তোলা ছবির ক্ষেত্রে এটা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ফেসিয়াল রিকগনিশেন প্রযুক্তি বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসুচুচেটস অ্যাট লয়েলের বিশেষজ্ঞ ডালিয়া বি মেঘারবি এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ছবি যখন ভিন্ন এঙ্গেলে, ভিন্ন রেজ্যুলেশনে আসে তখন সমগ্র সফটওয়্যারে ফেসিয়াল রিকগনিশন ‘এলগোরিদম’ এ প্রভাব ফেলে। যা ভুল নির্দেশনা দিতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৪