ঢাকা: মেক্সিকো উপকূলে নৌকায় চড়ে মাছ ধরছিলেন জোস সালভেদর আলভারেঙ্গা। আচমকা ঝড় তার নৌকাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় গভীর সমুদ্রে।
১৬ মাস পর জাপান ও ফিলিপাইনের অদূরে প্রশান্ত মহাসাগরের মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের একটি পাথরের আঘাতে থামে আলভারেঙ্গার ভাঙাচোরা নৌকাটি। স্থানীয়রা অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন।
এতো দিন ধরে কীভাবে সমুদ্রগর্ভে বেঁচে গেলেন আলভারেঙ্গা? কীভাবে সমুদ্রে হারিয়ে গেলে বাঁচার জন্য লড়তে হবে? আলভারেঙ্গার বক্তব্য ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে থাকছে সাগরে হারিয়ে গেলেও বেঁচে থাকতে করণীয় নির্দেশনা।
প্রথমেই আলভারেঙ্গার অভিজ্ঞতা জানা যাক। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যত দিন ধরে হুঁশ ছিল, ততদিন বৃষ্টির পানি, একটি মাছ এবং কচ্ছপে বেঁচেছেন তিনি।
এবারে ‘দ্য সি সার্ভাইভাল ম্যানুয়াল’র লেখক ফ্রান্সেস হোওয়ার্থ ও মাইকেল হোওয়ার্থের পরামর্শে আসা যাক। দু’জনের বক্তব্য, যতো বড় বিপদেই পড়ুন না কেন, বেঁচে থাকতে মনোবলের চেয়ে বড় কোনো উপায় নেই। সাগরে হারিয়ে গেলে মনোবল শক্ত রেখে যে পথগুলো অবলম্বন করা যেতে পারে সেগুলো হলো-
আশ্রয়
কোনো জামা-কাপড়ই ফেলে দেবেন না। কারণ, তীব্র শীতের রাতে অনেক বেশি কাপড় আপনাকে উষ্ণতা দেবে, আর তীব্র রোদে মাথার ওপরে সেসব কাপড় দিয়ে ছায়া পাবেন আপনি।
পানি
মানুষের বেঁচে থাকার প্রধানতম উপাদান পানি। তবে সমুদ্রে হারিয়ে গেলে কখনোই সমুদ্রেরই পানি পান করা যাবে না। এক্ষেত্রে বৃষ্টির পানির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সাগরে বিশেষত বৃষ্টি বেশি হয়। যদি রেইনকোর্ট (বর্ষাতি) থাকে, তাহলে সেটি খুলে উল্টিয়ে এর ভেতরেই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্লাস্টিক ব্যাগ ও রেইন বুটও পানি সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভালো উপকরণ হতে পারে। পানি সংরক্ষণের আগে এগুলোকে প্রথম বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই পরিষ্কার করে ফেলতে হবে, যেন কোনোভাবেই সমুদ্রের ক্ষতিকর লবণাক্ততা এতে লেপ্টে না থাকে।
খাবার
সাগরে হারিয়ে গেলে খাবার পাবেন কোথায়, এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তাটা যৌক্তিক। তবে আশার কথা হলো, সমুদ্র হলো খাবারের আধার অর্থাৎ মাছে ভরা। একটি নৌকা বা এ জাতীয় যানের ছায়া মাছকে প্রলুব্ধ করে। নৌকার কাছে এলে মাছটিকে লাগামে আনতে স্বর্ণ বা এ জাতীয় কোনো দ্রব্যের টোপ ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে স্মার্টফোনের ক্ষুদ্রাংশও ভালো ফল দিতে পারে। আওতার মধ্যে এলেই মোজা, কাপড় কিংবা জুতার ফিতা দিয়ে মাছটি ধরতে পারেন। খুব বেশি শক্তিশালী মাছ হলে কাঠ বা এ জাতীয় শক্ত কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করতে পারেন। আর অবশ্যই টোপের বাকি অংশটুকু ফেলে দেওয়া যাবে না, যেন পরবর্তী সময়ে আরেকটি মাছ ধরার উপায় থাকে।
উদ্ধার হওয়ার পথ অনুসন্ধান
হারিয়ে গেলেও নিশ্চিন্তে থাকতে হবে এবং মনোবল হারানো চলবে না। উপর্যুক্ত পদ্ধতিতে স্বাভাবিক সময় অতিবাহিত করার পাশাপাশি উদ্ধার হওয়ার পথ বের করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। যেমন- মেঘের মাঝে পরিচিত কোনো ছায়া খুঁজে একঘুঁয়ে ভাব দূর করতে হবে। উড়োজাহাজ বা নৌজাহাজের দেখা মেলে কিনা সে আশায় চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। যদি কোনো কিছু চিহ্নিত করা যায় তাহলে পকেট আয়না অথবা স্মার্টফোনের স্ক্রিন ব্যবহার করে সূর্যের আলো চিহ্নিত বস্তুর দিকে প্রতিফলিত করতে (রিফ্লেক্ট) হবে। এই সংকেত একটি রোদেলা দিনে ১০ মাইল পর্যন্ত দেখা যাবে।
আবারও জোর দিয়ে বলতে হয়, যেকোনো বিপদে নিজের ওপর আস্থা রাখতে হবে। হারিয়ে গেলেও উদ্ধার হওয়া যাবে বলেই মনে প্রাণে বিশ্বাস রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আরও কিছু সচিত্র নির্দেশনার জন্য হলিউডের নন্দিত নির্মাতা অ্যাং লি পরিচালিত অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র ‘লাইফ অব পাই’ দেখে নেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৪