ঢাকা: নিউইয়র্কের ব্রুকলিন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের সাবরিনা মাহমুদ। বায়োলজির এ ছাত্রী লেখাপড়ার খরচসহ আবাসন ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ের জন্য কাজ করতেন সেভেন ইলেভেন স্টোরে।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ছেলে মো. আবদুল্লাহ ফরহাদ অভি ডিভি লটারিতে জয়ী হয়ে ২০১০ সালে আমেরিকায় যান। অনেক স্বপ্নের আমেরিকায় কঠিন বাস্তবতায় কাজ নেন ম্যাকডোনাল্ডে। ঘণ্টায় ৭ ডলার আয়। কারণ ইংরেজিতে কাঁচা বলে সে কাজটিও হারান ফরহাদ। এরপর ম্যানহ্যাটনে কফি শপে কাজ নেন। সেটিও টেকেনি। ফরহাদও জীবনের খোঁজে পেয়ে যান পিপল এন টেকের সন্ধান। ইংরেজিতে দুর্বল হওয়ায় কোর্স শেষ করতে সময় লাগে একবছর। কিন্তু এখন! আলবেনিতে নিউইয়র্ক স্টেট অফিস অব ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিসে রয়েছেন ফরহাদ। তিনি এখন সিক্স ডিজিট আর্নার। যুক্তরাষ্ট্রে যা অনেক যুবকেরই স্বপ্ন।
ফরহাদ, সাবরিনার মতো এমন শত শত তরুণ, তরুণী, যুবক, মধ্যবয়ষ্ক, নারী পুরুষের স্বপ্ন গড়ছে পিপল এন টেক। স্বপ্ন গড়ার কারিগর আবু হানিপ।
প্রকৌশল বিদ্যায় বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে নিজেই নিজের ভাগ্য গড়েছিলেন হানিপ। এখন তার হাতে ভাগ্য গড়ছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অনেকের।
এবার এই স্বপ্ন দেশে বয়ে আনতে যাচ্ছেন আবু হানিপ। দেশের মানুষের জন্য তার ভালোবাসা, যুব শ্রেণিকে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশেই খুলছেন পিপল অ্যান্ড টেকের শাখা।
আর অনিশ্চয়তা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানো নয়, এখান থেকে প্রশিক্ষিত হয়েই সম্পূর্ণ কাজের নিশ্চয়তা নিয়েই দেশ ছাড়বে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণী, এমনকি বড়রাও।
রাজধানীর গ্রিন রোডের ১৫১/৭ গাজি টাওয়ারে অফিস স্থাপনের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ৬ আগস্ট আবু হানিপ ঢাকায় আসছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে এই অফিস উদ্বোধন করতে। সঙ্গে আসছেন তার স্ত্রী পিপল এন টেকের প্রেসিডেন্ট ফারহানা হানিপ।
যোগাযোগ : (০১৭৮২৬৯০৪৮৬)
দেশে এমন একটি অফিস চালু করার আগ্রহ দীর্ঘ দিনের। যারা যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা বিশ্বের বড় বড় দেশে যেতে পারছেন না, অথচ স্বপ্ন দেখেন তাদের জন্যই এই উদ্যোগ, বলেন আবু হানিপ।
ঢাকার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার আগে টেলিফোনে বাংলানিউজকে আবু হানিপ বলেন, নিউইয়র্ক কিংবা ভার্জিনিয়ায় যেভাবে পিপল অ্যান্ড টেক তার অফিসের মাধ্যমে অনেকের স্বপ্ন পূরণ করছে, তেমনই ইচ্ছা নিয়ে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এই শাখা অফিস। আশা করি দেশের যুবকদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো।
তিনি বলেন, এক সময় বাংলাদেশি যুবকেরা যুক্তরাষ্ট্র এসে অড জবের বাইরে ভাবতেও পারতেন না। এখন তারা লাখ ডলারের কাজ করছেন, এখানকার মূলধারার মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, কখনোবা আরও বেশি যোগ্যতা নিয়ে। পিপল এন টেক এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।
প্রতি কোর্সে গড়ে প্রায় ৪ হাজার ডলারের মতো ফি নেওয়া হলেও সম্প্রতি পিপল এন টেক তার বাণিজ্যিক ধারণার সঙ্গে সেবার মনোভাবও সম্পৃক্ত করেছে।
আর এ কারণেই আইটি সেক্টরে প্রবাসী বাঙালিদের কাজ পেতে অন্যতম অবলম্বনে পরিণত হয়েছে ‘পিপল এন টেক ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি’-তে।
‘সময় এবং প্রযুক্তির চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে’ স্লোগানে উজ্জীবিত পিপল এন টেক ২০০৫ সাল থেকে ৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে এ ধরনের চাকরি পেতে সহযোগিতা করেছে এবং পুরোদমে মাঠে রয়েছে।
ভার্জিনিয়ায় চালু পিপল এন টেকের শাখা এখন নিউইয়র্ক, নিউজার্সি এবং কানাডাতে স্থাপন করা হয়েছে।
আগস্টের প্রথম দিকে ঢাকায় এবং শেষের দিকে ফিলাডেলফিয়ায় চালু হতে যাচ্ছে পিপল এন টেকের শাখা।
এছাড়া অনলাইনেও ক্লাস নেওয়া হয় কানাডা, যুক্তরাজ্য, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ছাড়াও আমেরিকার বহু রাজ্য থেকে।
চুয়েট থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পাশ করে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর ঘণ্টায় ৩ ডলারের অড জবে অতিষ্ঠ হয়ে যাওয়া ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিপ মেধার গুণে ২০০৫ সালে এ প্রতিষ্ঠান চালু করেন।
এর আগের এক বছর তিনি ভার্জিনিয়ায় নিজের বাসায় শনি ও রোববার বহু বাংলাদেশিকে লেসন দেন। এর মধ্যে গড়ে ৩০০ জন বার্ষিক ৮০ হাজার ডলারের বেতনে চাকরি পেয়েছেন।
সেই থেকে শুরু। ধৈর্য এবং জ্ঞান আহরণের আগ্রহ আছে এমন বাংলাদেশি নারীরাও উচ্চ বেতনে চাকরি করছেন আইটি সেক্টরে। অনেক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বও দিচ্ছেন তারা।
পিপল এন টেকের পরিধি আরেক ধাপ বাড়ে ‘গ্লোবাল টেকনোলজি সলিউশন, ইনক’ চালুর মধ্যদিয়ে।
ঢাকায় পিপল এন টেকের কার্যালয় চালুর মধ্য দিয়ে দেশের তারুণ্যের স্বপ্ন পূরণে শুরু হবে আরেক নতুন অধ্যায় এটাই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৪