নিউইয়র্ক থেকে: নিঃসন্দেহে অসাধারণ। মুমুর আবৃত্তি শুনতে শুনতে নিজের মনেই বলে উঠেছিলাম, অসাধারণ।
পরিবেশনাটির উপলক্ষ ছিল ঢাকা থেকে আগত শিল্পী নাসিমা খানম কুইনির ছাপচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন। এই উপলক্ষে প্রদর্শনীর নির্ধারিত স্থান এস্টোরিয়ার ক্লাব সনমে আয়োজিত হয়েছিল সংক্ষিপ্ত এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বলতে দ্বিধা নেই গান আর আবৃত্তির সেই আয়োজনে মুমুই জয় করে নিয়েছিলেন পুরো অনুষ্ঠানটি।
মুমু, আবৃত্তিতে এই প্রবাসে প্রতিষ্ঠিত নাম মুমু আনসারী। অল্প বয়স থেকেই আবৃত্তি করছেন। আজ তিনি অবশ্যই এক পরিণত আবৃত্তি শিল্পী। বলতেই হবে, যথেষ্ট নিষ্ঠা আর অধ্যবসায় দিয়ে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন, আজকের এই পর্যায়ে নিজেকে উন্নীত করেছেন। ছন্দ, তাল, উচ্চারণ, কন্ঠের অপর নিয়ন্ত্রণ আর পরিবেশনার শৈল্পিক প্রকাশ তার আবৃত্তিকে সকলের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
বৈচিত্র মুমুর আবৃত্তির এক বৈশিষ্ট্য। পরিবেশনাকে কখনই তিনি একঘেঁয়ে করে তোলেন না। কন্ঠকে খাদে নামিয়ে ভারি গলায় আবৃত্তির যে একটা বিরক্তিকর প্রবণতা কোন কোন আবৃত্তিকারের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়, মুমুকে ধন্যবাদ যে তিনি এ থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছেন। কোন কৃত্রিমতা নয় কবিতার প্রয়োজনেই মুমুর কন্ঠ সাবলীলভাবেই চড়ায় ওঠে, খাদে নামে। কখনও তিনি দ্রুত হন, কখনও ধীর লয়ে শ্রোতাদের মোহিত করেন। আমার বলতে দ্বিধা নেই দ্রুত তালের আবৃত্তিতে মুমু অনবদ্য। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি কোন ছন্দপতন না ঘটিয়ে স্পষ্ট উচ্চারণে দ্রুত লয়ে আবৃত্তি করে যান তার প্রিয় সব কবির কবিতা। নজরুলের আগমণীতে বারবারই তাকে যেতে হয়েছে দ্রুততায়। আর নিখুঁত কুশলতায় কবিতার মর্মবাণীকে পৌছে দিয়েছেন শ্রোতাদের মনের গভীরে। এইখানেই তো একজন আবৃত্তিকারের সার্থকতা। কবির মুল বাণীকে শ্রোতৃহৃদয়ে প্রোথিত করে দেয়া। আনিসুল হকের ‘আবার জাগবে মানুষ’-এ কবির যে বেদনা যে আশাবাদ যে প্রত্যাশা মুমু তাকে ভরিয়ে তুলেছেন তার আবৃত্তির সৌন্দর্যে।
মুমুর আবৃত্তি, আমি আগেই বলেছি, আগেও শুনেছি, অনেকবার শুনেছি। কিন্তু তার এই সন্ধ্যার আবৃত্তি যেন এক ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আমার কাছে ধরা দিল। তখন থেকেই সারা মন জুড়ে ঘুরে ফিরছিল মুমুর জন্য কিছু লেখার। এই লেখা তাকে আমার মনের সেই স্বতষ্ফুর্ত উচ্ছাস জানাবার জন্যই। নন্দিত আবৃত্তি শিল্পী মুমুকে আমার অভিনন্দন।
মনজুর আহমদ, নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৪