ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

সেন্ট্রাল পার্কে ৬০ হাজার লোকের সমাবেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

শিহাবউদ্দিন কিসলু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৪
সেন্ট্রাল পার্কে ৬০ হাজার লোকের  সমাবেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিউইয়র্ক: এ বছর জাতিসংঘে উদযাপিত হবে বাংলাদেশের ৪০তম বার্ষিকী। ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনের পাশাপাশি তাই জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ভেতরে ও বাইরে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

ম্যানহাটনের সেন্ট্রাল পার্কে গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভালে প্রায় ৬০ হাজার লোকের সমাবেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালে মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে গাওয়া জর্জ হ্যারিসনের বিখ্যাত ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গানটি শোনানো ছাড়াও বাংলাদেশের অগ্রগতির একটি চিত্র তুলে ধরা হবে। জাতিসংঘ সদর দফতরের ভেতরেও হবে একটি অনুষ্ঠান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি জলবায়ু বিষয়ক একটি সম্মেলনে বক্তৃতা করবেন। প্রধানমন্ত্রী আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ১১৮ জনের সফরসঙ্গী নিয়ে নিউইয়র্কে আসছেন।

বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। সে বছরেই ২৪ সেপ্টেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম জাতিসংঘে বক্তৃতা করেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল বাংলায়। সেই প্রচলিত ধারা অনুসরণ করে প্রতিবছর সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৪০তম বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। এ নিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান বিশেষ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে।

নিউইয়র্কের অন্যতম আইকন ম্যানহাটনের সেন্টাল পার্কে গ্লোবাল সিটিজেন অব পোভার্টি এডুকেশন আয়োজন করছে গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভাল। জানা গেছে, ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে এই ফেস্টিভালে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমেরিকান আইডল কেরি আন্ডারউড অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে পরিচয় করে দেবেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাবিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশ নিয়ে বিখ্যাত গানটি ফেস্টিভালে শোনানো হবে। বাংলাদেশের উপর একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হবে সেন্ট্রাল পার্কে। অনুষ্ঠানটির কো-স্পন্সর ও মিডিয়া পার্টনার সিএনএন, এনবিসি, এমএনবিসি, নিউইয়র্ক ওয়ান, নিউইয়র্ক টুডেসহ আমেরিকার ২০টি শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম।

২৭ সেপ্টেম্বর আরো দুটি বড় কর্মসূচিতে যোগ দিবেন প্রধানমন্ত্রী। সকালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন শেখ হাসিনা। বরাবরের মতো এবারও তিনি বক্তৃতা করবেন বাংলায়। সন্ধ্যায় যোগ দিবেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায়। ম্যানহাটনের ম্যারিয়ট মার্ক্যুয়েজ হোটেলে এই সংবর্ধনা হওয়ার কথা রয়েছে।

আগের দিন ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দফতরের ভেতরে দিনের বেলায় অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যভূক্তির ৪০তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠান।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়া রাষ্ট্রগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তাছাড়া জাতিসংঘে সদস্যভূক্তির সময় যেসব রাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছিল সেসব রাষ্ট্রকেও দাওয়াত দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করলেও যুক্তরাষ্ট্রকে অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে নিউইয়র্ক ও ঢাকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ সেপ্টেম্বর সকালে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে নিউইয়র্কে পৌঁছেই ওইদিন দুটি হাই লেবেল মিটিংয়ে অংশ নেবেন। একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক অন্যটি আদিবাসী সম্মেলন।

২৩ সেপ্টেম্বর জলবায়ু বিষয়ক একটি সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে সকালের সেশনে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় উন্নত বিশ্বের কারণে বাংলাদেশের জলবায়ু ও পরিবেশ যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরবেন। ১২৫টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা এতে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় শুরু হবে জাতিসংঘের ৬৯তম সাধারণ অধিবেশন। শুরুতেই বক্তব্য রাখবেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি। অধিবেশনের দ্বিতীয় বক্তা মার্কিন প্রেডিডেন্ট বারাক ওবামা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী সেশনে যোগ দেবেন। বিকেলে ইউনেস্কো আয়োজিত ‘গ্লোবাল এডুকেশন ফার্স্ট ইনিশিয়েটিভস’ শীর্ষক একটি সেমিনারে অংশ নেবেন। সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডির মিশেল ওবামার দেওয়া সংবর্ধনা ও নৈশভোজে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
২৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সফরসঙ্গী বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড বিজনেস ব্যুরো আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস এই অনুষ্ঠানটি সমন্বয় করছে।

২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি। পরদিন ২৯ সেপ্টেম্বর খুব সকালে লন্ডনের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী। জানা গেছে, সেখানে কয়েকদিন অবস্থানের পর শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরবেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেন বাংলানিউজকে বলেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৪০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে দুটি ভিন্নধর্মী আয়োজন থাকছে প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে। সেন্ট্রাল পার্কে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভালে ৬০ হাজার দর্শকের সামনে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন।

মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, প্রসূতি সেবাসহ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি, নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি ও উন্নতি করেছে তা অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরবেন। ৪০ বছরে জাতিসংঘে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি দেবেন তারা। অনুষ্ঠানের একটি পর্বে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

নিউইয়র্ক সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও সময় এখনো নির্ধারিত হয়নি। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গেও বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চলছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে,  অন্তত: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস।

তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক উপদেষ্টা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নীনা আহমেদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা নিজেই শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে, ভারতীয় দূতাবাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মোদীর বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটিই নরেন্দ্র মোদীর প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর। ভারতের গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়ানোর অভিযোগে মার্কিন দূতাবাস বিজেপির শীর্ষ এই নেতাকে দীর্ঘদিন আমেরিকার ভিসা দেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাত দিনের নিউইয়র্ক সফরের দায়িত্বে রয়েছে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অগ্রবর্তী দল ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক এসে পৌঁছেছেন। দুয়েক দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত অগ্রবর্তী দলটিও নিউইয়র্কে এসে পৌঁছাবে।

২২ সেপ্টেম্বর ১১৮ জন সফরসঙ্গী নিয়ে জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী। সফরকারী দলে থাকছেন ১০ জন মন্ত্রী, ৫০ জন ব্যবসায়ী, ২০ জন কবি ও সাংবাদিক, ১০ জন নিরাপত্তাকর্মীসহ সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদ। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সফর কাভার করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রায় ৪০ জন সাংবাদিক ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিউইয়র্ক এসে পৌঁছবেন বলে জানা গেছে।

জলবায়ু, আদিবাসী ও নারীর ক্ষমতায়ন শীর্ষক বিভিন্ন সম্মেলন, সেমিনার এবং সাইড লাইন মিটিংয়ে অংশ নিতে আসবেন আরো অন্তত ৩০ জন নারীনেত্রী, আদিবাসী নেতা ও এনজিওকর্মী। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময় প্রায় ২০০ জন অতিথি বাংলাদেশ থেকে আসছেন।

** হাসিনা মোদী প্রথম বৈঠক নিউইয়র্কে
** সাফল্যের দৃষ্টান্ত হবে বাংলাদেশ, হাসিনা বিগ ভয়েস

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ