ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ছেন। জাতিসংঘের ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে ১৮০ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় নিউইয়র্কের পথে যাত্রা করবেন তিনি।
এবারের অধিবেশনে সদস্য দেশগুলোর জন্য ২০১৫ সাল-পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করবে জাতিসংঘ। আর তাতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ অর্জনে বাংলাদেশ তার সাফল্য দেখিয়েছে। বিশ্বের কাছে তা মডেল হয়েছে। আর সে কারণে নতুন উন্নয়ন এজেন্ডায়ও বাংলাদেশ কি করতে যাচ্ছে তা গুরুত্ব পাবে এবারের এই আন্তর্জাতিক ফোরামে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটাই আভাস দিচ্ছে।
এবারের অধিবেশনে মূল বিতর্কের প্রতিপাদ্য থাকবে ডেলিভারিং অন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টিং এ ট্রান্সফরমেটিভ পোস্ট-২০১৫ ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা’। চলমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিন, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, ইউক্রেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিরতার বিষয়গুলো অধিবেশনে গুরুত্ব পাবে।
জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি শুরু হবে ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু সম্মেলন ২০১৪ এ অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে। জলবায়ু সম্মেলনে শেখ হাসিনা বিগ ভয়েস হিসেবে উপস্থাপিত হবেন। অন্যদিকে সাধারণ অধিবেশনে উন্নয়ন এজেন্ডায় বাংলাদেশ উপস্থাপিত হবে সাকসেস স্টোরি হিসেবে, এমনটাই জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো।
২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার সাখে প্রধানমন্ত্রী শেথ হাসিনা তার ভিশন ২০২১ তথা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার যে স্বপ্ন দেখছেন তার সামঞ্জস্য নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকবেন বলেও জানিয়েছে সূত্রগুলো।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে, কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো থেকে দক্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়েই নিউইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
সফরসঙ্গীদের মধ্যে থাকছেন:
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তওফিক ইমান, অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ডাঃ দীপু মণি।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, সিনিয়র সচিব, প্রেসসচিব, পররাষ্ট্রসবিচ, নৌ, পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও শ্রমসচিবসহ, উচ্চ পর্যায়ের বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, কূটনীতিকগণ ছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সাংবাদিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা সফরসঙ্গী হচ্ছেন।
নিউইয়র্ক পৌঁছানোর পর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। নিউইয়র্কে তিনি সফরসঙ্গীদের নিয়ে ম্যানহাটানের হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে অবস্থান করবেন।
২৪ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সাধারণ অধিবেশনে উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক শুরু হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ ২৭ সেপ্টেম্বর। বরাবরের মতো এবছরও বাংলায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের এক ফাঁকে (সাইডলাইনে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কাতারের আমীর তামিম বিন মোহাম্মদ আল থানি, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী মিজ এরনা সলবার্গ, বেলারুশের প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিয়াসনিকোভিচ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করবেন।
এছাড়াও ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক শিক্ষা বিষয়ক বৈঠকে বক্তব্য দেবেন। ২৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আয়োজিত শান্তিরক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে তিনি যৌথ সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। একই দিনে তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দেবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর ম্যানহাটনের সেন্ট্রাল পার্কে গ্লোবাল পোভার্টি প্রোজেক্ট আয়োজিত গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভালে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান এবং ২৩ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার দেওয়া অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক ছাড়ার পর ৩০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর লন্ডনে ২ দিনের যাত্রাবিরতি করে ২ অক্টোবর সকালে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
** প্রধানমন্ত্রী সোমবার সকালে নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন
বাংলাদেশ সময় ১১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৪