জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন মিডিয়া সেন্টার থেকে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার জাতিসংঘে জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এতে দেওয়া ভাষণে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপতা মোকাবেলা করে টেকসই উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের নেওয়া বিভিন্ন সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে তুলে ধরেন।
এ সময় তিনি অনুন্নত দেশ হিসাবেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজস্ব খাত থেকে তার সরকারের ৩৮৫ মিলিয়ন (৩৮ কোটি ৫০ লাখ ) ডলার বরাদ্দের কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ জলবাযু পরিবর্তনের বিরূপতা মোকাবেলায় কতগুলো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশে এখন প্রায় ৩২ লাখ পরিবার সৌরবিদ্যুত ও প্রায় ১৫ লাখ পরিবার উন্নত চুলা ব্যবহার করে। এছাড়াও বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ-সহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবনসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী অ্যাকশান প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে সৃষ্ট অকাল বন্যা, জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততার বিরূপ প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, এর কারণে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য বিশেষ করে ধান ও গম উৎপাদন হুমকির মুখে। অনেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, তারা চিরায়ত বংশানুক্রমিক পেশাও হারিয়ে ফেলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত গবেষণার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) গড়ে ২ থেকে ৩ ভাগ কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
এ সময় সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ডা. দীপু মনি এমপি ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেন।
এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বিশ্বনেতাদের প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তাদের দৃঢ় অবস্থান ঘোষণার আহ্বান জানান।
বান কি মুন বলেন, এমন ঘোষণা আসতে হবে যা গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাবে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়াবে। একই সঙ্গে ২০১৫ সালের মধ্যে একটি অর্থবহ চুক্তি নিশ্চিত করার পক্ষে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটাবে।
জাতিসংঘের ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টে নামেন।
এয়ারপোর্টে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেন। মিসেস মোমেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন।
এয়ারপোর্ট থেকে ম্যানহাটানের গ্রান্ড হায়াত হোটেলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা।
এর আগে রোববার রাত নয়টা ৪৫ মিনিটে শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশের আইজি, তিন বাহিনীর প্রধান। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তওফিক ইমাম, অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ডা. দীপু মণি।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, সিনিয়র সচিব, প্রেসসচিব, পররাষ্ট্র সচিব, নৌ, পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও শ্রমসচিবসহ, উচ্চ পর্যায়ের বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, কূটনীতিকগণ ছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে (সাইডলাইনে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কাতারের আমীর তামিম বিন মোহাম্মদ আল থানি, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী মিস এরনা সলবার্গ, বেলারুশের প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিয়াসনিকোভিচ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করবেন।
২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান এবং ২৩ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার দেওয়া অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
সফর শেষে ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক ছাড়ার পর ৩০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর লন্ডনে ২ দিনের যাত্রাবিরতি করে ২ অক্টোবর সকালে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
** ২০১৫ সালে অর্থবহ জলবায়ু চুক্তির আহ্বান জাতিসংঘে
** জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততা শুরু মঙ্গলবার
** বিএনপির বিক্ষোভ, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে আ’লীগের সমাবেশ
** নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
** জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ সময় : ২১৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৪।