জাতিসংঘ সদর দফতর থেকে: শুক্রবার জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, জাতির জনকের পথ ধরে এবছরও জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন তিনি। বাংলাদেশের মানুষ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ভাষণের অপেক্ষায়।
২০১৫-পরবর্তী বিশ্ব এজেন্ডায় বাংলাদেশ কতটুকু খাপ খাইয়ে নেবে, বিশ্ব এজেন্ডায় শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ কতটুকু স্থান পাবে, আর সর্বোপরি জাতির প্রতি তার অঙ্গীকারগুলোও আন্তুর্জাতিক ফোরামে কতটুকু গুরুত্ব পাবে সবই মিলিয়ে নেবে দেশবাসী। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে শনিবার সকালেই ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
স্থানীয় সময় সকাল ১০ টা ৩০ মিনিট থেকে ১১টার মধ্যে এই ভাষণ দিতে পারেন তিনি।
দিনটিকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর দিকে দেশ তাকিয়ে আছে আরও একটি কারণে। শনিবারই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বহু প্রত্যাশিত দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক হচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। এই বৈঠকটিও শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায়। ‘কী হবে ওই বৈঠকে?’-- প্রশ্ন করা হয়েছিলো শেখ হাসিনাকে শুক্রবারের সাংবাদিক সম্মেলনে। উত্তরে জানিয়ে দিয়েছিলেন- ‘স্রেফ শুভেচ্ছা বিনিময়। ’ বলেছিলেন, এ ধরনের বৈঠকে শুভেচ্ছা বিনিময়টুকুই হয়। তবে সে প্রসঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরেই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে ভারতের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সবগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুই উচ্চারিত হয়। বাণিজ্য সম্পর্ক, কূটনৈতিক সম্পর্ক, ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের পেক্ষাপট যেমন তাতে ছিলো, তেমনি ছিলো স্থলসীমান্ত চুক্তি ও তিস্তার পানি বণ্টন প্রসঙ্গও। প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, ‘পানি কেউ আটকে রাখতে পারবে না, পানি দিতেই হবে। ’
প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য থেকে ধরে নেওয়া যায় মোদীর সঙ্গে বৈঠকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে সুন্দর সম্পর্কের পাশাপাশি জটিল বিষয়গুলোও গুরুত্ব পাবে।
দিনটি অবশ্য শুরু হবে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে ছোট্ট একটি বৈঠক দিয়ে। সময় নির্ধারণ করা রয়েছে সকাল ৯ টা ৫ মিনিট থেকে ৯ টা ১০ মিনিট পর্যন্ত। ওই বৈঠকটি ঘিরেও আগ্রহের কমতি নেই।
এই বৈঠকটি পূর্ব নির্ধারিত ছিলো না। শুক্রবার বাংলাদেশের জাতিসংঘ সদস্যপদ লাভের ৪০ বছর পূর্তির এক জমজমাট অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দশ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে বক্তৃতা দেন মহাসচিব বান কি মুন। তাতে তিনি শেখ হাসিনাকে নতুন সরকার গঠনের জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। পাশাপাশি এও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
মুহুর্মূহু করতালির মধ্যে বান কি মুন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণও দারুণভাবে প্রশংসিত হয় বান কি মুনের কণ্ঠে। বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবেলার শক্তি ও কৌশল বিশ্বের দেশে দেশে জানা প্রয়োজন এমন কথা উল্লেখ করে তিনি এ-ও বলেন, ‘বিশ্বের অনেক নেতাকেই আমি বলি তোমরা বাংলাদেশের কাছ থেকে শিক্ষা নাও। ’
জাতিসংঘ প্রধানের এই বক্তব্য শেখ হাসিনার জন্য, বাংলাদেশের জন্য গর্বের। শনিবার সকালে বান কি মুনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকটি হয়তো এই গর্বিত হওয়ার পথে বাড়তি কিছু যোগ করবে।
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়েই শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এবারের অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা শেখ হবে। শনিবার বিকেলে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে ছিলো বৈশ্বিক নাগরিক উৎসবে অংশগ্রহণ। নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের এই কর্মসূচি অনিবার্য কারণে বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সে বিষয়েও শুক্রবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন একই সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি কর্মসূচি রয়েছে। আমি আমার দেশের মানুষের সঙ্গে একটু বেশি সময় কাটাতে চাই বলেই ওই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছি না।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া ওই নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪