জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন থেকে: সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থা বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তার সরকার সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা, উগ্রবাদ এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতি শূন্য-সহনশীল (Zero tolerance) নীতিতে বিশ্বাসী। প্রতিবেশী বা অন্যদের বিরুদ্ধে যে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে না দেওয়ার ক্ষেত্রে তার সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।
শনিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেতাদের এ কথা জানান। অধিবেশনে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন শেখ হাসিনা।
ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন, চার দশক আগে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে নিজের প্রথম ভাষণে বঙ্গবন্ধু একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বাঙালি জাতি শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান, সামাজিক ন্যায়বিচার, এবং দারিদ্র্য-ক্ষুধা-আগ্রাসনমুক্ত এবং বৈষম্যহীন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ’।
বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নই বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন অভিযাত্রা এবং বৈশ্বিক কর্মকাণ্ডের মূলভিত্তি বলে বিশ্বনেতাদের জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এমন এক সময়ে এখানে সমবেত হয়েছি যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছে। যেহেতু সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নের সময়সীমা শেষ হতে চলেছে, বিশ্বসম্প্রদায় ২০১৬-২০৩০ মেয়াদের জন্য একটি সংস্কারমূলক উন্নয়ন এজেন্ডা প্রণয়নের কাজে ব্যস্ত রয়েছে, সে প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত সময়োচিত।
স্থায়ী শান্তি এবং নিরাপত্তা ব্যতীত টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা যাবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অস্থিতিশীল বৈশ্বিক নিরাপত্তা অবস্থা এখনও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, বিশ্বের যে কোনো স্থানে শান্তি বিঘ্নিত হলে তা গোটা মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। আমাদের নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ অধিকারের বৈধ সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সংহতি ঘোষণা করছি।
গাজায় ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুসহ শত শত সাধারণ নাগরিক হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ১৯৬৭-পূর্ব সীমানার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন এবং স্থায়ী ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের টেকসই সমাধান দাবি করেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থা বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। আমার সরকার সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা, উগ্রবাদ এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতি শূণ্য-সহনশীল (Zero tolerance) নীতিতে বিশ্বাসী। প্রতিবেশী বা অন্যদের বিরুদ্ধে যে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে না দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।
শেখ হাসিনা জাতিসংঘ অধিবেশনে বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রগতিশীল এবং উদার চরিত্রকে নস্যাৎ করতে সদা তৎপর। তারা সুযোগ পেলেই ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বোমা ও গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে অসংখ্য উদার রাজনৈতিক নেতা-কর্মী হত্যা করেছে। এসব নৃশংস হামলা আমাকে দেশ থেকে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে আরও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদর্শিকভাবে সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থা নির্মূলের জন্য আমার সরকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সকল ধর্মের মানুষের ধর্ম পালনের স্বাধীনতার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। শাসন ব্যবস্থায় সচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন এবং তথ্য কমিশনকে শক্তিশালী করেছি।
বর্তমান সরকার শান্তি ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখা এবং দণ্ড-অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এজন্য ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল, ধর্ষণ এবং গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।
অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারকাজ সম্পন্ন করেছে জানিয়ে জনগণের দীর্ঘদিনের ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সমর্থন কামনা করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪