নিউইয়র্ক: সাংবাদিকতাকে ‘দলকানা রোগ’ থেকে বের করে আনার আহ্বান জানিয়ে দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এর সম্পাদক নঈম নিজাম বলেছেন, দেশে পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। স্বার্থান্বেষী কতিপয় ‘সুবিধাবাদী দলকানা সাংবাদিক নেতা’ নামধারীদের কারণেই সাংবাদিক সমাজ আজ কলঙ্কের শিকার।
‘এসব দলবাজ সাংবাদিক মোড়লরা হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগ, খালেদার চেয়ে বড় বিএনপি এবং নিজামীর চেয়ে বড় জামাত! যা যার মতো ব্যবহার করে আখের গোছাতে ব্যস্ত। ’
তিনি আরো বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য দেশে সবগুলো পেশাই আজ দলবাজীতে আক্রান্ত, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাও। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় নতুনদের অবদানের কথাও তুলে ধরেন নঈম নিজাম।
বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
একই সভায় বক্তারা বাংলাদেশের ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা’ নিয়ে মৌলিক অবস্থানকে বিতর্কের উর্ধ্বে রাখার আহবান জানান।
সভায় ‘বাঙালির জীবনের সবচেয়ে বড় অংক ’৭১ আর শ্রেষ্ঠসঙ্গীত আমার সোনার বাংলা’ উল্লেখ করে কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুন, মনে মনে হলেও উচ্চারণ করুন, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।
এ সময় তিনি বলেন, ৫২ থেকে ৭১ বাঙালির গৌরবের ইতিহাস তরুণরাই গড়েছে। বাংলাদেশকে তরুণরা এগিয়ে নিচ্ছে, আগামীতেও নেবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে নিয়ে হতাশা একবারেই অমূলক।
মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন কাহিনি শৈল্পিক গাঁথুনিতে তুলে ধরে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে গোটা বাংলাদেশটাই এক হবে, বিভাজন থাকবে না।
অনুষ্ঠানে শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেনের সন্তান ও দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক শাহীন রেজা নূর বাংলাদেশে সকল বিভাজনের মূলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয়ে মৌলিক অবস্থানের বিতর্ককে দায়ী করে বলেন, যারা এ বিতর্ক করছেন তারা মতলববাজ। তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এ বিতর্ক আনতে চান। কিন্তু তারা জানেন না, স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ কেন, মাত্র ৩ হাজার মানুষ শহীদ হলেও তাদের আত্মত্যাগের যে চেতনা ও শপথ তা যেকোনো সংখ্যাকেই ছাড়িয়ে যায়।
তিনি বলেন, যারা টেলিভিশন টকশোতে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করে বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা করেন তারা বিবেকবর্জিত এবং মানুষ নামের কলঙ্ক।
এ সময় শহীদ-সন্তান শাহীন রেজা নূর বাবার স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাবা হিসেবে নয়, সাহসী ও নীতি-আদর্শের বিবেচনায় সিরাজউদ্দীন হোসেনের মতো সাংবাদিকের আজ বড় প্রয়োজন।
তিনি বাংলাদেশের সাংবাদিকতার সেই গৌরবময় সময় ফিরিয়ে আনার উপরও গুরুত্বরোপ করেন।
সমাজের অংশ হিসেবে সাংবাদিকতাতে পচন থাকলেও গৌরবেরও অনেক কিছু আছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, হতাশার কোনো কারণ নেই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও চিরতরে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিলো, কিন্তু আমরা গণজাগরণ মঞ্চও দেখেছি।
অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতিমান ফটো সাংবাদিক লুৎফর রহমান বীণু তার স্মৃতিচারণে মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে আনেন তার প্রাণবন্ত আলোচনায়।
নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু তাহেরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দীনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় প্রেস ক্লাবের প্রেক্ষাপট ও প্রবাসের সাংবাদিকতা নিয়ে বক্তব্য রাখেন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শিহাব উদ্দীন কিসলু।
প্রবীণ সাংবাদিক মঞ্জুর আহমেদ, নাসিমুন্নাহার নিনি, ক্লাবের সহ-সভাপতি মাহমুদ খান তাসের, ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা ডা. চৌধুরী সারোয়ার হাসানসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
এ সময় প্রবীণ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খানসহ স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রায় ৩০ জন সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৪