নিউইয়র্ক: ‘যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হচ্ছে। দু’দেশের জনগণের অভিন্ন স্বার্থ এবং মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করেই যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
ওয়াশিংটনে দু’দিনব্যপী ইউএস–বাংলাদেশ পার্টনারশিপ ডায়ালগ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে দেয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
দু‘দেশের মধ্যে বৃহত্তর পরিসরে কার্য্যকর আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে যুক্ত বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এ অঞ্চলের নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকা বাংলাদেশকে বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল এন্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন) অঞ্চলে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং সংযোগের উদ্যোগ, ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক করিডোর এর উন্নয়ন, সীমান্ত বাণিজ্য সুবিধা,জ্বালানি সহযোগিতাএবং অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের বিষয়ে পূর্ণ সহায়তার প্রস্তাব করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
২৮ ও ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ওই সংলাপে প্রথমবারের মত দ্রুত ক্রমবর্ধমান সাইবার ক্রাইম এর হুমকি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া সাইবার ক্রাইম এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে বৃহত্তর পরিসরে সহযোগিতার সুযোগকে কাজে লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যুক্ত বিবৃতিতে।
বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের হুমকি বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কাউন্টার টেরোরিজম ও মানি লন্ডারিং আইনের কার্যকারিতার প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে দু’দেশ সহিংস উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নের বিরুদ্ধে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী পরিচিত ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স(এফএটিএফ) এর কার্যকাঠামোতে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বাংলাদেশ সরকারের সাথে একসাথে এই ডিসেম্বরে(২০১৪) দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক কর্মশালার আয়োজন করবে।
শ্রমিকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ, পরিদর্শনে অনলাইন ডাটাবেজ,শ্রমিক পরিদর্শকদের সক্ষমতা এবং সহায়তা বৃদ্ধি,নতুন পরিদর্শক নিয়োগ,নতুন ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন,শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেয়া ইত্যাদি বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলেও যুক্তরাষ্ট্রে মনে করে। এছাড়া উভয়পক্ষই জিএসপি পুনঃবহালে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ নিয়ে কাজ অব্যাহত রাখারও প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। পাশাপাশি শ্রমিকদের নিরাপত্তায় ১০ মিলিয়ন ডলারের উদ্যোগকে সমর্থন করে ইউএস এইড আরও ৫ মিলিয়ন ডলারের নতুন অনুদান ঘোষণা করবে বলেও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশে ভাইব্রেন্ট সিভিল সোসাইটি রয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া নাগরিক অধিকার সংরক্ষনে এবং মৌলিক অধিকার রক্ষার বিষয়েও সংলাপে আলোচনা হয়েছে।
ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিবেচনায় ‘মূল্যবোধ ও আকাঙ্ক্ষা এবং অধিক আগ্রহের বিষয়গুলো’ শেয়ার করতে উভয়পক্ষই তরুণ প্রতিনিধিত্বকে এই সংলাপে সম্পৃক্ত করার উপর গুরুত্বারোপ করে। এছাড়া ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে বর্তমান চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার কথা বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির বিষয়ে ঐক্যমত প্রকাশ করে দু’দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টিতে পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। এ ব্যপারে যথাশীঘ্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।
আগামী ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চতুর্থ পার্টনারশিপ ডায়ালগ ঢাকায় অনুষ্ঠানের বিষয়টিও চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
দু’দেশই নারী ও তরুণীদের সমরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের বিষয়ে পুনঃঅঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। প্রাথমিক শিক্ষা, শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস উল্লেখ করে মেয়েদের হাইস্কুলে যাওয়া নিশ্চিতকরণ, জোরপূর্বক বিবাহ বন্ধ ইত্যাদি সহ নারীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে দু’দেশের অংশীদারিত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলা হয়েছে। ২০১৩ সালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু‘দেশের স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ক আরও গভীরতর হয়েছে।
বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় তথ্য আদানপ্রদানের বিষয়েও বৈঠকে অগ্রগতি হয়েছে। মাদক প্রতিরোধের বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে একটি পরিকল্পনা আলোচিত হয়েছে।
দু’দিনব্যাপী এই পার্টনারশিপ ডায়ালগে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আন্ডার সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স)ওয়েন্ডি আর শেরম্যান এবং বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৪