নিউইয়র্ক: অবশেষে ভাগ্যাহত ১ কোটি ১৫ লাখ (সাড়ে ১১ মিলিয়ন) কাগজপত্রহীন অবৈধ অভিবাসীর সুদীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। সে সুখবরটিই দিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স্বয়ং।
সিবিএস টেলিভিশনের সাংবাদিক বব শিফার এর ‘ফেস দ্য নেশন’ সাক্ষাৎকারে রোববার একথা নিজেই জানালেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেসে প্রত্যাখ্যাত কাগজপত্রহীন অবৈধ অভিবাসীদের বৈধভাবে জীবন যাপনের আকুতিকে এখন আর উপেক্ষা নয়।
প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, হোয়াইট হাউজের ‘ ফ্যমিলি ডাইনিং রুম’ এ রিপাবলিকান কংগ্রেশনাল নেতাদের সাথে মধ্যাহৃভোজে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন (ইমিগ্রেশন) ব্যবস্থার সংস্কারে কংগ্রেসের মুখের দিকে চেয়ে থেকে আর কাল বিলম্ব করবেন না তিনি। এবছর শেষ হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশবলে সাড়ে ১১ মিলিয়ন কাগজপত্রহীন অবৈধকে বৈধতা দেবার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ওবামা বলেন, কারণ সবাই একমত হবে যে, ১১মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীকে ডিপোর্ট বা বহিষ্কার করা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়।
হোয়াউট হাউজে রিপাবলিকান দলীয় নেতা হাউজ স্পিকার জন বোয়েনার,সিনেট মেজরিটি নেতা হ্যারি রিড এবং সিনেট মাইনরিটি নেতা মিচ ম্যাক কনেল সহ রিপাবলিকান কংগ্রেশনাল নেতারা প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে গত ৭ নভেম্বর শুক্রবার এ মধ্যাহৃভোজে অংশ নেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, যাদেরকে ডিপোর্ট করা সঠিক নয়, আমরা তাদেরকেই ডিপোর্ট করছি। অথচ যারা ভয়ঙ্কর এবং যাদেরকে ডিপোর্ট করা জরুরি, তাদেরকে আমরা ডিপোর্ট করছি না।
সিবিএস টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ওবামা এও বলেছেন , তিনি এখনো আশা করছেন, তার নির্বাহী আদেশের আগেই কংগ্রেস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তাছাড়া তার নির্বাহী আদেশের পরেও যদি কংগ্রেস এ সমস্যা সমাধানে ‘যথাযথ’ বিল পাশ করে তবে তা নির্বাহী আদেশকে টপকেই আইনে পরিণত হবে।
সিবিএস টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওবামা আরো বলেন, উভয় পক্ষই একমত যে, ইমিগ্রেশন বিষয়ে কিছু একটা করতে হবে। সংস্কারের শর্ত নিয়ে আমরা বছরের পর বছর শুধু কথাই বলছি।
প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপদ করতে হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা প্রায় এক যুগ ধরে এদেশে বসবাস করছে, তাদের অনেকের সন্তানেরা আমেরিকান নাগরিক হিসেবে বড় হচ্ছে এবং আমাদের কমিউনিটির সকল অংশেই তারা বাস্তবতা। আমাদের নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে, তারা জরিমানা দেবে এবং যে কোনো দণ্ড পরিশোধ করবে, ইংরেজি শিখবে এবং তারা বৈধতায় পর্যায়ক্রমিক ভাবে সংখ্যাক্রমানুসারে পিছনে আসবে, কিন্তু তাদেরকে বৈধ হবার সক্ষমতা দিতে হবে। ’
এদিকে ,চলতি বছরের গ্রীষ্মে নির্বাহী আদেশে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা পরিবর্তনের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে তা ডেমোক্রেটদের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে --এই যুক্তিতে মধ্যবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষার সিদ্ধান্ত নেন বলে ন্যশনাল পাবলিক রেডিও (এন পি আর) খবর প্রকাশ করে। কিন্তু মধ্যবর্তী রির্বাচনে কংগ্রেস ও সিনেট দুটি কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিনিয়ে নিয়েছে রিপাবলিকানরা।
প্রেসিডেন্ট ওবামার এ বিলম্ব ডেমোক্রেটদের নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনতে সাহায্য করেনি। আর তাই ওবামা এখন তার পুরনো সিদ্ধান্তেই যেতে চান। তবে প্রেসিডেন্ট ওবামার এ সিদ্ধান্তে বেজায় নাখোশ হয়েছেন রিপালিকান কংগ্রেশনাল নেতারা।
রিপাবলিকান দলীয় হাউজ স্পিকার জন বোয়েনার এরই মধ্যেই ওবামার এই উদ্যোগকে ‘নির্বাহী অ্যামনেস্টি’ বা নির্বাহী আদেশ বলে ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণার উদ্যোগ বলে অভিযোগ করে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে এ হুশিয়ার করে দিয়েছেন। তার ভাষায়, এটা করা হলে আগামী দু’বছরের সরকার পরিচালনার পরিবেশকে ‘বিষিয়ে তুলবেন’ ওবামা।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৪